ঝগড়া সমগ্র

ঝগড়া সমগ্র

চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই বর এক চিৎকার দিয়ে বলল,চায়ে টিকটিকি পড়ছিলো। আমিও এক চিৎকার দিয়ে দুম করে আমার শখের কাপখানা হাত থেকে ফেলে দিলাম। কাপ ভেঙ্গেও আমি খান্ত হলাম না।বেসিনে গিয়ে বমি করতে শুরু করে দিলাম।ঠিক তখনই আমার কানে বরের পৈশাচিক হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো।

সে হাসতে হাসতে বলল,কি অদ্ভুত তোমার সাথে তো দেখছি একটু ঠাট্টা ও করা যাবে না।আমি বললাম আর ওমনি ধপাস করে কাপ ফেলে দিবে! মানে মানুষ তো একবার চেক করে দেখে যে সত্যিই কি টিকটিকি ছিলো কিনা।
প্রচন্ড রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম,তার মানে তুমি মজা করতেছিলা! তুমি জানো না টিকটিকি শুনলেই আমার গা গুলিয়ে আসে!! আজকে বাসায় রান্না বন্ধ।এরকম ঠাট্টা-তামাসা করার জন্য এটাই হলো উপযুক্ত শাস্তি। সে খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে। দাঁত কিটমিট করে বললাম, হাসছো কেনো! সে অফিসের ফাইল গোছাতে গোছাতে বলল,আজকে আমার একটা দাওয়াত আছে।দুপুরে সেখানেই যাবো অফিস কলিগদের সাথে।এবার তুমিই ডিসাইড করো রান্না করবে নাকি নিজেও না খেয়ে থাকবে। মুখ বেকিয়ে বললাম,রান্না করলে শুধু আমার জন্য করবো।তোমার জন্য কেনো করবো!

সে তুমি আমার জন্য নাই বা রান্না করলে কিন্তু সকালে মা ফোন করেছিলো।ছুটি নেই বলে তো যেতে পারছি না অনেক দিন যাবত।তাই বাবা-মা দুজনেই আসবে।ভালো করে রান্না করবে তাদের জন্য। বলেই সে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলো।পিছন ফিরে তাকাতেই একটা ভেংচি কেটে রান্না ঘরে চলে গেলাম। রান্না প্রায় শেষের দিকে এখনও শ্বশুর,শ্বাশুড়ির খবর নেই।ফ্রেস হয়ে টেবিলে খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করতে করতে কলিং বেল বেজে উঠলো।মাথায় ঘোমটা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে সালাম দিতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।বরের চাঁদ মুখখানা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,তোমার না অফিস কলিগদের সাথে দাওয়াতে যাওয়ার কথা ছিলো!!

সে চুপচাপ এসে খাবার টেবিলে বসে বলল,আহ বিরিয়ানির গন্ধে পুরো বাড়িটাই মো-মো করছে।আগে খেয়ে নেই তারপর তোমার সাথে কথা বলবো। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। উল্লুকটার জন্য সকালে আমার শখের চায়ের কাপটা ভেঙ্গে ফেললাম।এখন আমার রান্না করা খাবার গুলোই বসে বসে গিলে যাচ্ছে।ওদিকে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির আসার নাম নেই। খুনতি হাতে নিয়ে বললাম,সকালে মেরিনা ভাবি বলল তুমি নাকি তাকে রিকশায় লিফট দিছো! সত্যি নাকি? সে তৃপ্তি সহকারে খেতে খেতে বলল,আর কি বলছে তোমার মেরিনা ভাবি?

কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,তুমি কেমনে পারলা ওনার সাথে একই রিকশায় ঘুরতে!! হায় এই ছিলো আমার কপালে!
সে এক ধমক দিয়ে বলল,থামো তো।আদনান অসুস্থ তাই মেরিনা ভাবি ওকে দেখতে হাসপাতাল যাচ্ছিলো।রিকশা পাচ্ছিলো না তাড়াহুড়ো ছিলো তাই আমি রিকশা থেকে নেমে ওনাকে রিকশা করে পাঠিয়ে দিয়েছি।মহিলা তো বেশ কুটনামি জানে!বলছে তো পুরো কাহিনীই বলতো।এই জন্যই বলি আগে একটু যাচাই বাছাই করতে শিখো।তোমার এই অভ্যেসটা আর গেলো না।

মুখ বেকিয়ে নিচু স্বরে বললাম,আব্বা-আম্মা কই? এখনো তো এলো না! সে হাসতে হাসতে বলল,কেউ এসে বলবে তোমার কান চিলে নিয়ে গেছে ওমনি চিলের পিছে পিছে দৌড়াবা।কানে হাত দিয়ে দেখবানা আসলেই কান আছে না গেছে।এতোক্ষন কি বোঝালাম! আমি হা করে বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত