কল্পকন্যা

কল্পকন্যা

– তুমি আমার আমি তোমার দুজনে মিলে একাকার।আমি কল্পনা তুমি বাস্তব দুজনের ভিন্নপথ।কল্পনায় আসো হৃদয়ে বাস করো।মনের আকাশে লুকোচুরি খেল।আঁখি দুটি খুললে কেন আড়ালে থাক? একবার দেখা দিলে কি ক্ষতি হয়? কেন আমাকে কষ্ট দাও? দাও না দেখা! মিটিয়ে যাও না মনের জ্বালা, কেন আমার সাথে এরকম কর?
.
– আমি তোমার তুমি আমার দুজনে মিলে একাকার।এই যে আমি এইতো তুমি চল দুজনে মিলে স্বপ্নের মহল গড়ি।খেলব না আর লুকোচুরি থাকব তোমার নয়নে।চল দুজনে মিলে হারিয়ে যায় স্বপ্নের মহল গড়তে।
.
কণ্ঠটা শুনে ফারাহ বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে খোঁজতে থাকে।কিন্তু স্বপ্ন ছেলেকে কোথাও পায় না সে।
.
– এই যে স্বপ্নছেলে একবার দেখা দেন না? কেন আমার সাথে লুকোচুরি খেলেন? কেন আমার হৃদয়ে বার বার আঘাত দেন?
.
– হাতটি বাড়াও আমার হাতের স্পর্শ পাবে, তবেই আমার দেখা পাবে।
ফারাহ খুশি মনে হাতটা বাড়ায় ওর হাতের ছোঁয়া পায়।তার হৃদয় গহীনে একটা শীতল বাতাস বয়ে যায়।স্বপ্নছেলে চোখের পলকে সামনে আসে আবার চোখের পলকে মিলিয়ে যায়।
.
একটা চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠে।এভাবে প্রায় রাতেই স্বপ্নে এসে ফারাহর হৃদয়ে ঝড় তুলে স্বপ্নের ছেলেটা আবার চলে যায়।ফারাহ রাতের আকাশে তাকিয়ে দেখে, মেঘেরা চাঁদটাকে ঘিরে ধরছে।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকে।আবার কখন চোখ লেগে যায় টেরও পায়নি।

দূরের মসজিদ থেকে আযানের মধুর ধ্বনি ভেসে আসে।আযানের ধ্বনি শুনে তাওহীদের ঘুম ভাংগে।ঘুম থেকে ওঠে অযু করে নামাজ পড়ে।তারপর আধো আলো আধো অন্ধকার আচ্ছন্ন শহরটার দিকে তাকিয়ে থাকে।সোনালী আলো ধীরে ধীরে ওঠে, তাওহীদ মুগ্ধ নয়নে সূর্য ওঠা দেখে যাচ্ছে।আপন মনে পাখিদের কলরব শুনে যাচ্ছে।
.
তাওহীদের আপন বলতে তার দাদী।দাদীকে ছাড়া পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই।তার দাদী চা তৈরি করছেন।দুই কাপ চা নিয়ে নাতির পাশে দাঁড়ান।উনি বলেন
.
– দাদু ভাই চা নিয়ে এসেছি।চল চা খেতে খেতে দুজনে মিলে প্রেম করি।
তাওহীদ পাশে ফিরে মুচকি হেসে বলে
– বুড়ো মরেছে আমার ভালই হয়েছে।অল্প বয়সে প্রেম করার মানুষ জুটেছে।
তার দাদীও মৃদু হেসে তাকে বলে
.
– দাদু ভাই চা-টা নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
তাওহীদ দাদীর গালে টান দিয়ে বলে
– নিতেছি আমার জানু পাখি।
দু’জন সকালের প্রকৃতি দেখছে আর এটা-সেটা নিয়ে গল্প করছে।এভাবেই অল্প অল্প করে সময় বয়ে যাচ্ছে।

সোনালী আলো ফারাহর চোখে-মুখে এসে পড়ে।ফারাহ ঘুম ঘুম ‌চোখে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গেছে।ঘুমন্ত সুরে চিৎকার করে তার বাবাকে বলে
.
– বাবা! বাবা! আমার কফি কোথায়? এখনও কফি দিয়ে গেলে না?
রান্নাঘর থেকে কফি বানাতে বানাতে উনি বলেন
.
– আমাকে কফি বানাতে সময়টাও দিবি না? এখনও ঘুম থেকে উঠিসনি আবার কফি খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছিস!
.
ফারাহ বাবার কথায় কান না দিয়ে কল্পনায় হারাতে থাকে।সে যখনই একটু সময় পাবে তখনই কল্পনায় হারিয়ে যাবে।এট তার স্বভাব।তার বাবা কফি নিয়ে এসে বলে
.
– এই যে কফি, খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন।
রাগ করে গাল ফুলিয়ে ফারাহ বলে
– আমি খাব না।
– এই হচ্ছে সমস্যা- কিছু বললে বলে, খাব না খাব না।এই কথাটা ছাড়া তুমি আর কিছু বলতে জানো না? রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিও।
.
– ফারাহ কিছু না বলে চুপ করে থাকে।খাটে বসে কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে থাকে আর সকালের সূর্যের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কল্পনায় ভাসতে থাকে।

দাদী-নাতি নাস্তা করছে।তাওহীদ নাস্তা সেরে রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হতে হতে বলে
– দাদী আমি বের হলাম।তুমি সাবধানে থেকো।
– আচ্ছা দাদু ভাই।তুমিও সাবধানে থেকো।
মাথায় গোল টুপি, চোখে চশমা, বাইক নিয়ে ইট পাথরের নোংরা শহরের ভিতর দিয়ে ভার্সিটিতে চলেছে।
.
বাবা-মেয়ে নাস্তা করছে।ফারাহ নাস্তা সেরে রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হতে হতে বলে
– বাবা আমি ক্লাসে চললাম।তুমি সাবধানে থেকো।
– আচ্ছা মা।তুইও সাবধানে থাকিস।
ফারাহ গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে।
.
ক্লাস চলছে।প্রত্যেকে আপন মনে স্যারের লেকচার শুনে যাচ্ছে।আর ফারাহ এক মনে লেকচার শোনছে, এক মনে কল্পনার আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।অল্প অল্প করে সময় বয়ে যাচ্ছে।স্যার-ম্যাডামরা ক্লাসে আসছে, ক্লাস নিচ্ছে, আবার চলে যাচ্ছে।ফারাহ কল্পনার পৃথিবী নিয়ে পরেই থাকে।কখন যে সবগুলো ক্লাস শেষ হলো টেরও পেল না।বান্ধবীর ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে।তারপর বান্ধবীরা মিলে ক্যাম্পাসে চলে।
.
তাওহীদ চুপচাপ বসে থেকে ক্যাম্পাসের ছেলে মেয়েদের দেখে যাচ্ছে।এমন সময় তার কয়েকটা বন্ধু এসে বলে।
– কিরে তাওহীদ! একা একা কি দেখিস আর কি ভাবিস?
– ছেলে মেয়েদের অবস্থা দেখছি আর ভাবছি।বাবা-মা কিসের জন্য পাঠায়? আর আমরা কি করে বেড়ায়!
– এসব বলে লাভ নেই।তুই আমি চিন্তা করলে হবে না।এসব বিষয়ে প্রত্যেকের চিন্তা করতে হবে।
– ঠিক বলেছিস।
এটা সেটা নিয়ে তাদের গল্প চলতে থাকে।
.
ফারাহ এক মনে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।তার বান্ধবীরা ধাক্কা দিয়ে বলে
– কল্পকন্যা কি এতো ভাব?
মুচকি হাসি দিয়ে ফারাহ বলে
– না, কিছু না।
তারা মুখ চেপে হেসে বলে
– সময় হলেই বোঝা যাবে!
– ঠিক আছে তাহলে সময়কে আসতে দে।
.
তাওহীদ রুমে ডুকতে ডুকতে তার দাদীকে বলে
– দাদী কি করো?
অভিমানী সুরে বলে
– তোমার সাথে কথা নাই।
– কেন? আমি কি করেছি?
– এতো লেইট করলে কেন? আমার ভয় হয় না বুঝি!
গাল টেলে তাওহীদ বলে
– ওরে আমার ময়না পাখি খাবার রেডি করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।
.
বাবা-মেয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছে।ফারাহর বাবা খেতে খেতে বলেন
– এই যে একা একা চলাফেরা করিস।রাস্তায় বা ক্যাম্পাসে কোন সমস্যা হয় না মা?
– না বাবা, কোন সমস্যা হয় না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন
– সমস্যা না হলেই ভালো।দিন কালের যা অবস্থা চারদিক শুধু অপহরণ, ধর্ষণ, খুন আমার খুব ভয় হয়।
– ভয় নেই বাবা।উপরে একজন আছেন তিনিই তোমার মেয়েকে দেখে রাখবেন।
.
তাওহীদ রাতের আকাশে আমন মনে মাউথওরগান বাজাচ্ছে।যখন তার মনটা মেঘে ঢাকা থাকে।তখন মনের দুঃখ ভুলতে একা একা মাউথওরগান বাজাবে।বাবা-মা চলে যাওয়ার পর থেকে দাদীই তার সম্পূর্ণ পৃথিবী।কখনও রাগ-অভিমান করা।আবার রাগ-অভিমান ভুলে ভালোবাসার অতল সাগরে হারিয়ে যাওয়া।এভাবেই তাদের দিনগুলি চলে আসছে।
.
ফারাহ জোছনা রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।এক মনে জোছনা দেখছে, কল্পনায় ভাসছে, মুচকি মুচকি হাসছে।হঠাৎ কোন কিছুর শব্দে স্মৃতির পাতা থেকে ফিরে আসে।এক তাঁরার দিকে তাকিয়ে তার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।হু হু করে মনটা কেঁদে ওঠে।চোখের কোণে জল চলে আসে।তার মা তাকে জন্ম দেওয়ার সময় ঐ আকাশের তাঁরা হয়ে যায়।মেয়ের কষ্ট হবে বলে তার বাবা আর বিয়ে করেনি।এক দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।চোখের কোণে জল গড়িয়ে পরছে।

রাগ-অভিমান, খুনসুটি, হাসি-আনন্দ, দুঃখ-কষ্ট এসবের মধ্য দিয়ে তাদের সময় যেতে থাকে।সকাল, দুপুর, রাত।আবার রাত শেষে শুরু হয় নতুন প্রভাত।এভাবেই তাদের দিন কাটে যেতে থাকে।
.
হঠাৎ একদিন
.
ফারাহ বেখেয়ালি মনে ড্রাইভিং করছে, একবার কল্পনায় হারাচ্ছে, একবার বাস্তবে ফিরে আসছে।তাওহীদ সীট ফটোকপি করার জন্য ক্লাস থেকে দোকানে যাচ্ছে।ও বন্ধুদের সাথে কথা বলছে আর আনমনে হাটছে।তাওহীদ গেইট থেকে বের হবে, ফারাহ গেইটের ভিতর ডুকবে।এমন সময় হয় এক্সিডেন্ট।ফারাহ গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রন করার আগেই তাওহীদের পায়ে ধাক্কা লাগে।তাওহীদ ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গিয়ে পরে।এক মূহুর্তের মাঝে কি গটে গেল! ফারাহ বুঝতে পারছে না।সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।প্রত্যেকে চিৎকার-চেচামিচি করছে।কিন্তু কারো চিৎকার-চেচামিচি ওর কানে পৌছাচ্ছে না।সে অপলক দৃষ্টিতে তাওহীদের দিকে তাকিয়ে আছে।তাড়াহুড়ো করে তাওহীদকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছে।সে বাকরুদ্ধ ভাবে তাওহীদের দিকে তাকিয়েই আছে।
.
ডাক্তাররা তাওহীদের ট্রিটমেন্ট করে যাচ্ছে।প্রত্যেকে দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে সময় কাটাচ্ছে।ফারাহ এখনও স্তব্দ হয়েই আছে।তার চোখের ভিতর পানি ছলছল করছে।তাওহীদের খবর শোনার জন্য দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
তাওহীদের এক্সিডেন্টের খবর শুনে তার দাদী পাগলের মতো ছুটে আসে।এসে দেখেন, সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।উনি কাউকে কিছু না বলে প্রত্যেকের দিকে একবার করে তাকান।তারপর ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।আরও অনেক্ষণ পর ডাক্তার বের হয়ে আসেন।উনি বলতে থাকেন
.
– মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন।তবে গাড়ির ধাক্কায় উনার পা দুটো ভেঙ্গে গিয়েছে।এ-ছাড়া উনার বড় ধরণের কিছু হয়নি।ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে উনি ঘুমাচ্ছেন।
.
কথাটা বলে ডাক্তার চলে যান।কথাগুলো শুনে ফারাহ একেবারে পাথর হয়ে যায়।তাওহীদের দাদী রাগি চোখে ওদের দিকে তাকান।সবাই লজ্জা ও ভয়ে মাথা নিচু করে আছে।উনি চিৎকার দিয়ে বলেন
.
– আমার নাতীকে কার গাড়ি ধাক্কা দিয়েছিল? তোমরা শুধু তার নামটা আমাকে বলো
– ওরা কি বলবে বুঝতে পারছে না।সবাই ফারাহর দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো তোমরা উত্তর দিচ্ছ না কেন?
ফারাহ কাছে এসে বলে
– দাদী আমার গাড়িতে তাওহীদের ধাক্কা লাগে।দাদী আমি ইচ্ছা করে
– ঠাসসসস(কথাটা শেষ করতে পারেনি; উনি অতিরিক্ত রাগে থাপ্পড় বসান)
– তুমি চুপ করো তোমার কোন কথা শোনতে চাই না আমি।তুমি এখনও এখানে কিসের জন্য বসে আছো! চলে গেলে না কেন? এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাও।আবার তাওহীদকে দেখতে আসবে না।
– ফারাহ ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকে।
– তোমাকে কি বলেছি শোনতে পাওনি?
– ফারাহ চলে আসে।
ফারাহ ভেজা ভেজা চোখে ড্রাইভিং করে বাসায় আসে।তারপর কলিং বেলে টিপ দিয়ে ধরেই থাকে।
ওর বাবা আসতে আসতে বলে
– আমাকে আসার সময়টুকু তো দিবি নাকি?
দরজা খুলে উনি বলতে থাকেন
– মা তুই ফোন ধরছিলি না কেন? এতো দেরী করলি কেন? রাস্তায় কি কোন সমস্যা হয়েছিল? একবার তো ফোন করে বলতে পারতি!
– ফারাহ কোনকিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।
উনি আর কিছু জানতে চাননি।জানেন এখন কিছু বললে আশাহীন অনেক কিছু ঘটবে।ফারাহ শুয়ে থেকে কাঁদছে আর ঘটে যাওয়া ঘটনাটা কল্পনা করছে।হঠাৎ করে তার সাথে এমনটা কেন হলো বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ পর তার বাবা এসে বলে
– মা তোর কি হয়েছে? কখন থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে আছিস।
একটা চিৎকার দিয়ে ফারাহ বলে
– এতো প্রশ্ন করছ কেন? আমাকে একটু একা থাকতে দিবে না? আমি এভাবে থাকলে যদি তোমার সহ্য হয় তাহলে আমি বের হয়ে যাচ্ছি।
উনি মন খারাপ করে চলে আসেন।মেয়েকে ভাল বা মন্দ আর কিছু বলেননি।বেডরুমে বসে ভাবছেন, হঠাৎ মেয়েটা এরকম আচরণ কেন করছে?

তাওহীদের জ্ঞান ফিরতেই চোখ মেলে দেখে, সে হাসপাতালে আছে।সে অনুভব করে মাথা ব্যান্ডেজ করা, মায়ে প্লাস্টার দেওয়া।সে পাশে ফিরে দেখে, দাদী হাসি মুখে ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে।অন্যপাশে দেখে, তার বন্ধুরা হাসি-খুশি মুখে তাকিয়ে আছে।তাওহীদ ফারাহকে খুঁজে কিন্তু তাকে দেখতে পায় না।তার দাদী বলে
.
– দাদু ভাই তুমি কি কাউকে খোঁজছ?
– হ্যা, দাদী।
– তুমি যাকে খোঁজছ তাকে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি।
– কিন্তু দাদী সে তো ইচ্ছা করে করেনি।
– দাদু ভাই তুমি তার হয়ে গুণ গাইছো! আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো! তাহলে আমার কি হতো! আমি কি নিয়ে বাঁচতাম?
– কিন্তু দাদী
– এখন চুপ করে থাক এই নিয়ে পরে কথা বল।
.
তাওহীদ জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত ফারাহর ভয়ার্ত চোখগুলো দেখেছিল।যে চোখে ছিল প্রিয়জন হারানোর ভয়, যে চোখে ছিল চেনা-অচেনা কত জল।তাওহীদ কান্না নয়ন দুটি ভুলতে পারছে না।যখনই চোখ বন্ধ করছে তখনই ওর ভেজা নয়ন দুটি ভেসে উঠছে।তার কয়েকটা বন্ধু বিদায় নিয়ে চলে যায়।কয়েকটা বন্ধু তার দেখাশুনা করতে থেকে যায়।
.
ফারাহ আসার পর থেকে যে রুম বন্ধ করেছিল আর খুলেনি।ওর বাবা বার বার আসছে কিন্তু কাজ হয়নি।রাতের মেঘলা আকাশের সাথে তার মনের মেঘগুলো মিশাতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
.
তাওহীদকে মাঝে মাঝে ক্লাসে ও ক্যাম্পাসে দেখতে পেতো।যখনই দেখতো তখনই মাথায় গোল টুপি ও চোখে চশমা অবস্থায় পেতো।কিন্তু আজ চশমা ছাড়া দেখেছে।ওর নয়ন দুটি প্রাণ ভরে দেখেছে।কারণ সে যে আর কেউ নয় তার স্বপ্নছেলে।তাকে আগে থেকেই ওর ভালো লাগতো।স্বপ্নছেলে এর জন্যই এড়িয়ে চলতো।কিন্তু সেই যে তার স্বপ্নছেলে এটা কখনও বুঝতে পারেনি।সে কিভাবে পারল তার স্বপ্নছেলেকে আঘাত দিতে? এতো কাছ থেকেও স্বপ্নছেলেকে কিভাবে চিনতে পারল না সে? সব সময় কল্পনায় বিভোর হয়ে থাকত।মনে মনে বলে যাচ্ছে আর নিজেকে দোষে যাচ্ছে।
.
তাওহীদ আকাশে মেঘের ভেলা দেখছে, মনের ভিতর একটা চাপা কষ্ট অনুভব করছে।এমনটা তার কেন হচ্ছে? সে ঠিক বুঝতে পারছে না।মনের কষ্ট দূর করতে এক মনে মাউথওরগান বাজাতে থাকে।
.
নতুন ভোরের আলোতে ফারাহ নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে।তার বাবাকে ডাক দিয়ে নাস্তা দিয়ে যেতে বলে।মনে হচ্ছে গতকালকের সকল স্মৃতি সে ভুলে গেছে।কিন্তু না সে ভুলেনি; গতকালের ঘটনা মনে হতেই তার হৃদয়টা কেঁদে ওঠে।তার বাবা নাস্তা নিয়ে আসতেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।তার বাবা বলে
.
– মা তোর কি হয়েছে তুই কাঁদছিস কেন?
– বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা কেও দাও।গতকাল তোমায় কি না কি বলে ফেলেছি।
– বাবা মায়ের কাছে সন্তানের অপরাধ থাকে না।কিন্তু তুই কাঁদছিস কেন?
– সে বাবাকে সব খুলে বলে।
– এজন্যই তো বলি চোখ-কান খুলা রেখে ড্রাইভিং করতি।মা মন খারাপ করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।
– তুমি সত্যুিই বলছ তো
– হ্যা মা।এখন তুই নাস্তাটা করে নে।
.
তাওহীদ চোখ বন্ধ করে আছে।তার পাশে দাদী বসে আছে।তাওহীদকে দেখতে তার বন্ধুরা আসতে থাকে।কিছুক্ষণ পর ফারাহও আসে।ফারাহকে দেখে ওর দাদী রেগে যান।ফারাহ অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে।তাওহীদ ওকে মন ভরে দেখে যাচ্ছে।
– এই মেয়ে তোমাকে আসতে না করেছিলাম তো তবুও কেন আসলে?
– ফারাহ মলিন মুখে তাওহীদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
– আমার কথা বুঝতে পারোনি? দাঁড়িয়ে আছ কেন চলে যাও
– ফারাহ তাওহীদের দিকে তাকায় কিন্তু সে কিছু বলে না দেখে চলে আসতে থাকে।
তাওহীদের দাদী আবার বলেন
– এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছ দাঁড়াও! যেতে বলেছি বলেই চলে যাবে? কেন এসেছ বলবে না?
.
হঠাৎ দাদীর কথার পরিবর্তনে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
– কি বলব দাদী! আমার তো বলার মুখটাই নেই।(কথাটা শুনে প্রত্যেকের হৃদয়টা কেমন করে যেন ওঠে)না জেনে, না বুঝে যে অন্যায় করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।আমি চলে যাচ্ছি পারলে আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।
– এই মেয়ে শোন তুমি আমাকে ক্ষমা করো।আমিও তো না বুঝে তোমাকে কতকিছু বলেছি।এক্সিডেন্টটা তার কপালে ছিল তাই হয়েছে।আর আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এক্সিডেন্টটা হয়ে ভালই হয়েছে।
হঠাৎ তাওহীদ বলে ওঠে
– তুমি এই মুহূর্তে চলে যাবে।পরবর্তীতে আমাকে দেখার বা যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবে না।
– তুবও ফারাহ দাঁড়িয়ে থাকে।
– কি হলো! তোমাকে যেতে বলেছি না যাচ্ছ না কেন? দাদী তোমরা তাকে নিয়েই থাকো আমাকে অন্যরুমে পাঠিয়ে দাও।
ফারাহ তাওহীদের কাছ থেকে এমন আরচরণ আশা করেনি।কাঁদতে কাঁদতে চলে আসে।
সবাই একসাথে বলে ওঠে
– তাওহীদ এইটা তুই কি করলি? মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিলি?
– যা করেছি ভালই করেছি।এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে আসবে না, বললে ভালো হবে না।
তারা জানে তাওহীদকে এই মুহূর্তে বললে কোন লাভ হবে না।তাই সবাই চুপ হয়ে যায়।তাওহীদ দরজাটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
ফারাহ বাসায় এসে কাঁদতে থাকে।মনে মনে বলে, একদিন দাদী গালি দিবে, একদিন নাতি গালি দিবে।ওরা আমাকে পেয়েছেটা কি! আমার কি মন নেই? রাগ নেই? অভিমান নেই? আমার সময় আসুক সব পাই পাই করে হিসাব নিব।
.
দিন যায় রাত যায় ফারাহর মনে শান্তি নেই।মনের ভিতর সব সময় একটা অস্থিরতা কাজ করে।এদিকে তাওহীদের মনেও শান্তুি নেই।তার হৃদয় কুঠিরে এক টুকরো মেঘ জমেছে।ঐ মেঘের জন্য সময়ে অসময়ে ফারাহর কথা তার কল্পনায় আসে।
.
ঐদিনের পর থেকে ফারাহ লুকিয়ে তাওহীদকে দেখতো।কিন্তু তাওহীদ বুঝতে পারতো।এভাবে দেখতে দেখতে একমাস চলে যায়।ফারাহ প্রতিদিন তাওহীদের চোখকে ধুলো দিয়ে তাকে দেখতে আসতো।কিন্তু প্রথম দিনেই দাদীর চোখে ধরা পড়ে।তার উনি আরও সুযোগ করে দিতেন।এমন কি তাওহীদকেও বুঝতে দিতেন না।তাওহীদ ঠিক বুঝতে পারতো, কিন্তু কিছু বলতো না।

আজ অনেকদিন পর তাওহীদ ক্লাসে আসে।ফারাহ তাওহীদকে ক্লাসে দেখতে পেয়ে অনেক খুশি হয়।পুরোটা ক্লাস জুড়ে ওকে দেখে সময় পাড় করে দিয়েছে।তাওহীদ একবার না দু’বার তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ছিল।এতেই সে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে।ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে ক্যাম্পাসে আসে।তাওহীদ আপন মনে মাউথওরগান বাজাতে থাকে।তার বন্ধুরা নিরব শ্রোতা হয়ে শুনে যেতে থাকে।
.
ফারাহ ও তার বান্ধুবীরাও নিরব শ্রোতা হয়ে মাউথওরগান বাজানো শোনছে।তার মনের ভিতর অন্যরকম এক অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে।আনমনে আস্তে আস্তে তাওহীদের কাছে চলে আসে।তাওহীদ ফারাহর অস্তিত্ব টের পেয়ে বাজানো বন্ধ করে দেয়।সে রাগি চোখে তাকিয়ে থেকে বলে
.
– এই তোমার সমস্যাটা কি? তোমাকে না করা সত্তেও তুমি আবার আমার সামনে কেন আসলে?
সাথে আরও অনেক হৃদয় আঘাত কথা বলে
– ফারাহ কি বলবে! সব মুখ বোঝে সহ্য করে নেয়।
.
এভাবে প্রতিদিন তাওহীদের সামনে আসে।আর ওর অবহেলা অপমান সহ্য করে।এই কারণে যদি তার হৃদয়টা একটু হলেও গলে।একটু ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারে।কিন্তু কোন কিছুই হয় না।তাওহীদের বন্ধুরাও তাকে অনেক বোঝায়।কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয় না।
.
নির্জন রাতে, ফারাহ একা একা ভাবছে কিভাবে কি করবে? তাকে কেন এতো অপমান করে? কেন এতো অবহেলা করে? সে কিছুই বুঝতে পারছে।হঠাৎ ওর দাদীর কথা মনে হয়।
.
ফারাহকে ওর ভালো লাগে কিন্তু বিশ্বাস করতে ভয় করে।মনে মনে বলে, ফারাহ কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে নাকি আমার সাথে মিথ্যা অভিনয় করছে? শুয়ে থেকে আনমনে ভেবেই চলেছে।

ফারাহ তাওহীদদের বাসায় আসে।তাকে দেখে দাদী বলে
– এতদিন পর বুড়ির কথা মনে পড়ল?
মুচকি হাসি ফারাহ বলে
– দাদী একটা কথা জানার ছিল, বলবেন?
– বুঝেছি।দাদু ভাই তোমাকে কেন এড়িয়ে চলে কেন অপমান করে সেটা জানার জন্যই তো?
– হ্যা, আমার কোন অপরাধের জন্য এমন করে আমি বুঝতে পারছি না।কারণ জানতে চাইলে কিছু বলছে না।
– তোমার কোন অপরাধ নেই।সব অপরাধ তার মা করেছে।
– তার মা?
– হ্যা, তার মায়ের জন্য আজ সকল নারী জাতিতে সে অবিশ্বাস করে ঘৃণা করে।
– কিন্তু কেন?
– কারণ তার বাবার মৃত্যুর পর তার মা তাকে একা ফেলে চলে যায়।তখন থেকেই সে মেয়েদেরকে দেখতে পারে না।
– কিন্তু দাদু ভাই সবাই তো এক না।
– এটা সে মানতে চায় না।
– যদি পারো সত্যি কারের ভালোবেসো।
.
পরদিন ক্লাসে ফারাহ তাওহীদকে বলে
– এই যে মিস্টার আপনি পেয়েছেনটা কি? যেভাবে মন চাবে সেভাবেই গালি দিবেন যেভাবে পারবেন অবহেলা করবেন।
তাওহীদ রাগে বলে
– আমি পাইনি, পেয়েছেনটা আপনি।আর আপনাকে গালি শোনতে কে বলেছে? অবহেলা পেতে কে বলেছে?
– আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আপনাকে পছন্দ করি না।তারপরেও আপনি আমার হৃদয় জুড়ে থাকেন।কিন্তু কেন থাকেন? আবার মিথ্যা কথা বলেন
– দেখো সব কিছুর একটা লিমিট আছে।শেষ বারের মতো বলছি- তুমি লিমিট ছেড়ে যেয়ো না।
– কি করবে হু! বল কি করবে?
– ফারাহ ভালো হচ্ছে না কিন্তু
তাদের বাড়াবাড়ি দেখে ক্লাসের প্রত্যেকে ভয় পাচ্ছে।তাওহীদের কলারে ধরে বলে
– তাহলে খারাপটাই করো
– ছাড়ো বলছি
– না, ছাড়ব না।
– ঠাসসসসসস
ফারাহ থাপ্পড় খেয়ে দূরে গিয়ে পরে।ফারাহর চোখের কোণে জল চলে আসে।
ফারাহ কাঁদতে কাঁদতে বলে
– তাওহীদ তুমি একটা ভুল নিয়ে পরে আছ।সকল মেয়ে যে খারাপ না, এটা তোমাকে মানতে হবে।আমি চলে যাচ্ছি আর কখনও তোমাকে আমার এই মুখটা দেখাব না।যেদিন নিজে থেকে আমাকে খোঁজবে সেদিন আমার দেখা পাবে।
ফারাহ কথাগুলো বলে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যায়।
– তাওহীদ তোমার কাছ থেকে আমরা এটা আশা করিনি।ফারাহ তোমাকে সত্যিই পছন্দ করে।তা না হলে এতো অপমান করা সত্তেও বার বার তোমার কাছে আসতো না।যদি পারো তার ভালোবাসার মূল্যটা দিয়ো।
তাওহীদ চুপচাপ শুনে।
– তাওহীদ ওরা ঠিক কথা বলেছে।এইবার তুই বেশী বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস।যদি পারিস তাকে একটু ভালোবাসা দিস।ও শুধু তোর কাছে একটু ভালোবাসায় চায়।

নির্দিষ্ট গতিতে সময় যাচ্ছে।দুজনের হৃদয় কুঠিরে একটু একটু করে মেঘ জমা হচ্ছে।তাদের সবকিছু কেমন যেন থমকে দাড়ায়।ফারাহর দুঃখ-কষ্ট দেখে তার বাবা সহ্য করতে পারছে না।তিনি নীরবে চোখের জল ফেলেন।
তাওহীদ মনে করেছিল ফারাহর জন্য তার কোন কষ্ট হবে না।কিন্তু এখন সময় যাচ্ছে তার জন্য একটু একটু করে কষ্ট অনুভব করছে।সব সময় তার মনের আকাশে ফারাহর অস্তিত্ব ভেসে ভেড়ায়।তার সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
.
ফারাহ মনমরা হয়ে বেলকনিতে বসে আছে।তার বাবা এসে বলে
– মা তুই আর কতদিন এভাবে থাকবি? আমার তো তোকে এভাবে দেখতে ভালো লাগে না।
– বাবা তোমার মেয়ের কিছু হয়নি তোমার মেয়ে খুব ভালো আছে।
এমন কথা শুনে উনি কি বলবেন? উনি কাঁদতে কাঁদতে চলে আসেন।মনে মনে বলেন, কিছু একটা করতে হবে।
.
– দাদু ভাই আর কতদিন নিজেকে কষ্ট দিবি? আর কতদিন অন্য একটা প্রাণকে কষ্ট দিবি?
– দাদী আমি কষ্ট পাচ্ছি না, কাউকে কষ্ট দিচ্ছিও না।
.
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে
.
– আসসালামু পলাইকুম
– ওলাইকুম আসসালাম।আপনাকে চিনলাম না তো।
– জি আমি ফারাহর বাবা।
.
– বাবা তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি।তুমি আমার মেয়েকে কতটুকু চিন আমি জানি না।কিন্তু মেয়েটা তোমাকে ছাড়া কিছু বোঝে না।আজ তোমার জন্য ও মরতে বসেছে।যদি পারো বাঁচাও না হয় হত্যা করে আসো।
কথাগুলো শুনে তাওহীদের হৃদয়টা নড়ে ওঠে।
– দাদু ভাই আর চুপ করে থাকিস না।সব মেয়েকে এক ভাবিস না।এখনও কিছু মেয়ে ভালো আছে।তা না হলে নারীদের প্রতি প্রত্যেকের বিশ্বাস ওঠে যেতো।
.
তাওহীদ ফারাহর খুঁজে ছুটে চলেছে।তার মনের আয়নাতে পুরনো স্মৃতিগুলো বার বার উকি দিচ্ছে।
.
আকাশে মেঘের ভেলা উড়ছে।ফারাহর হৃদয় আকাশে অজস্র মেঘ উকি দিচ্ছে।ফারাহ ছাদে দাঁড়িয়ে আনমনে মেঘাচ্ছন্ন শহরটার দিকে তাকিয়ে আছে।তাওহীদ সারাটা বাড়ি ফারাহকে খুঁজে কিন্তু কোথাও পায়নি তাকে।ছাদে এসে দেখে, সে এক মনে স্বপ্নগড়া স্বপ্নভাঙ্গা শহরটার দিকে তাকিয়ে আছে।তাওহীদ চুপি চুপি ছাদের এক কোণে বসে চোখ বন্ধ করে মাউথওরগান বাজাতে শুরু করে।
.
মাউথওরগানের শব্দ শুনে ফারাহ চমকে ওঠে।পিছনে ফিরে দেখে ওর স্বপ্নছেলে।সে মনে করে হয়ত মনের ভুলে ওকে দেখছে।আঁখি দুটি বন্ধ করে আবার মেলে।না, তার কোন মনের ভুল না।সে অভিমান করে তবুও দাঁড়িয়ে থাকে।কিন্তু অভিমান বেশীক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি।ছোট ছোট পায়ে তাওহীদের কাছে আসে।ফারাহর অস্তিত্ব টের পেয়ে তাওহীদ চোখ মিলে তাকায়।ওর মুখটা দেখে তার হৃদয়টা হু হু কেঁদে ওঠে।ওর চোখের নিচে কালি জমেছে, মুখটা শুকিয়ে গেছে।কেমন যেন রোগা রোগা ভাব চলে আসে।তাওহীদ বলতে শুরু করে।
.
– ফারাহ আমি আমার মায়ের জন্য কোন মেয়েকে দেখতে পারতাম না।আমি সবাইকে এক চোখে দেখতাম।আর বর্তমান সময়ে মেয়েদের আচার-আচরণ, চাল-চলন, পোশাক-আশাক দেখে আরও ঘৃণা জন্মে।অনেকের কাছে প্রেম মানে হচ্ছে- দরলাম, খাইলাম, ছাড়লাম।এখন এটা অনেকের কাছে ফ্যাশন হয়ে গেছে।আর বিয়ে! এটা তো এখন ছেলে খেলা হয়ে গেছে।আজ একজনকে বিয়ে করছে তো কাল আর একজনকে বিয়ে করছে।এই যে ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তাদেরকে দেখে মনে হয় না কেউ কারো জন্য জন্য কষ্ট পাচ্ছে।এসব দেখতে দেখতে মনের দেয়ালে একটা ঘৃণা জন্মে।
.
তাওহীদ আবার বলতে শুরু করে
.
– ফারাহ আমি তোমাকে ভালোবাসি কনা জানি না।কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।কখন তুমি আমার হৃদয় কুঠিরে জায়গা করে নিয়েছ বুঝতেই পারলাম না।
সুযোগ দিবে ভালোবাসার, সুযোগ দিবে কাছে আসার, যাব না ছেড়ে যতদিন বেঁচে আছি।কথা দাও মিথ্যা মায়া দেখাবে না।মিথ্যা আশা দিবে না।আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না।শুধু দুনিয়াতে না আখিরাতে জীবন সঙ্গী হবে?
.
– আমি তোমাকে ভালোবাসি না।পছন্দ করি না।কিন্তু তোমার সাথে থাকতে না পারলে বাঁচতে পারব না।আমি তোমার অর্ধাঙ্গীনি হতে চাই।বল আমাকে বিয়ে করবে?
কখনও তোমাকে ভুল বুঝব না ।কখনও তোমাকে ‌ছেড়ে যাব না।কখনও বিশ্বাস ভঙ্গ করতে দিব না।কথা দাও দুনিয়ার সঙ্গী এবং আখিরাতের সঙ্গী হয়ে থাকবে, কখনও ছেড়ে যাবে না আমাকে।
.
দুজন চোখে চোখে কথা দিচ্ছে।মনের আকাশে ভালোবাসা বিনিময় করছে।চোখের কোণে সুখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত