অনলাইন শপিং

অনলাইন শপিং

গরম গরম এক কাপ লেবু চা বানিয়ে জামাইর সামনে গিয়ে বললাম,চা দেই! দেবো!! দিলাম কিন্তু,ঢেলে দেই! জামাই আমার কথা শুনে রকিং চেয়ার থেকে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আমিও নাছোড় বান্দা চা খাবেনা তো একদম ঢেলে দিবো। বেলকনিতে গিয়ে জামাইর পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,ঢেলে দেই চা টা! জামাই মুখ বেলিয়ে বলল,কি বলতেছো এসব! চা কি খাওয়ার জন্য বানাইছো নাকি গায়ে ঢালার জন্য! আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি!! পরিবেশ টা তো একদম ঠান্ডা কোনো হৈ চৈ ও করি নাই।

আমি চায়ের কাপটা ঠাস করে মেঝেতে ফেলে নিজেও মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,এতো গুলা ড্রেস অর্ডার দিলাম এখন দেখি সব ত্যানাত্যানা যা দিয়ে ঘর টর ও মুছা যাবে না।এরপরেও পরিবেশ ঠান্ডা কেমনে থাকবে বলো তো ইফতি! ইফতি ভাঙা কাপের টুকরো গুলো তুলতে তুলতে বলল,জামাইর পকেট কাটলে এমনই হয়।একদম ঢেলে দিছে না ড্রেস!!

ইফতির কথা শুনে আমি আরো জোরে কাঁদতে শুরু করলাম। ইফতি আমাকে পাত্তা না দিয়ে অফিস চলে গেলো। কিছুদিন পর পরিবেশ হৈ চৈ থেকে একদম ঠান্ডায় পরিনত হয়েছে।অনলাইনে অনেক গুলো শাড়ী দেখে অর্ডার না দিয়ে থাকতে পারলাম না।এই নিয়ে চার বার অনলাইন শপ থেকে জিনিস কিনে ধোকা খেয়েছি।তাও অলসতার জন্য বাইরে গিয়ে শপিং করতে পারছি না।একটা মানুষ এতো অলস কেমনে হয়!! এসব ভাবতে ভাবতে আবারও অনলাইন শপিং এ পা বাড়িয়ে ফেললাম। রাতে হাসি হাসি মুখ করে ইফতিকে বললাম, আমার কিছু টাকা লাগবে। ইফতি সন্দেহ নজরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,কি করবে টাকা দিয়ে!

ইয়ে মানে খুব ভালো ভালো কিছু শাড়ীর অর্ডার দিয়েছি।এবারেরটা ভালোই হবে দেখো।দুনিয়ার সবার মধ্যে তো আর ভেজাল নেই।কথা ঠিক কি না বলো!! ইফতি রাগি গলায় বলল,এতো টাকা নেই আমার কাছে যে বারবার তোমাকে ঢেলে দেবো। আমি কাদো কাদো মুখ করে বললাম,এই বারই লাস্ট আর চাইবো না।এরপর কিছু হলে আমি নিজে গিয়ে বাইরে থেকে শপিং করে আনবো। ইফতি কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ কি যেনো ভেবে বলল,আচ্ছা এবারের মতো দিলাম।উল্টা পাল্টা কিছু হইলে আর একটা টাকাও তুমি পাবা না।

আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম চা ঢেলে দেবো!!ইফতি একটা ধমক দিয়ে বলল,কিহ! ইয়ে মানে তোমাকে চা করে দেবো কিনা তা জিজ্ঞেস করলাম। ইফতি কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লো। এবারো সেই একি কাজ হলো।চকচকে কালার দেখে শাড়ী অর্ডার করলাম আর এখন দেখছি এর থেকে ফুটপাতের জিনিসও অনেক ভালো।রেগেমেগে বাটপার গুলোর নাম্বারে কল দিতেই বলল,আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে।

হায়হায় এবার কি হবে! ইফতি বাসায় এলে কি বলব ওকে! রাতে ভয়ে ভয়ে ইফতির কাছে গিয়ে বললাম, এবারও না ধোকা দিয়েছে। ইফতি তেমন কোনো রিয়েক্ট না করে বলল,ও আচ্ছা সরো ঘুমাবো। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,রাগ করোনি!! ইফতি পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল,আমার পকেটের টাকায় কিনলে ঠিকই এবার রাগ ঢেলে দিতাম। আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমিই তো টাকা দিলা সেদিন।

ইফতি একটা হাসি দিয়ে বলল,ঈদে তো বাপের বাড়ি থেকে বেশ ভালোই সালামি পাইছিলা।সেই টাকা থেকে যে পাশের বাসার ভাবিকে ধার দিলা ওইদিন সেই টাকা আমার কাছে দিয়ে গেছে। তুমি রান্নাঘরে ছিলা বলতে ভুলে গেছিলাম।ওটা সেই টাকাই ছিলো। আমি দুই হাত দিয়ে ওয়াল চাপড়াতে চাপড়াতে বললাম,আমার শাড়ী ও গেলো টাকাও গেলো!! এই জন্যই তো ভাবতেছি পরিবেশ এতো সুন্দর কেমনে কোনো হৈ চৈ নাই।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত