রাতে ঘুমানোর আগে ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে দেখি মোজাম্মেল পোস্ট দিয়েছে,
-বিদায় পৃথিবী। যাদের জন্য আমি এ দুনিয়ায় বেঁচে তগাকতে চেয়েছিলাম।তারাই আমাকে বুঝলো না।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ জীবন আর রাখবো না। মোজাম্মেলের এই পোস্ট দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।যে ছেলে গতকালকেও আমার সাথে সারাদিন ঘোরাফেরা করেছে সে কেন আত্মহত্যা করবে।
ওর নাম্বারে ফোন দিলাম।মোজাম্মেলের কোনো এক দূর সম্পর্কের চাচা ধরে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো,মোজাম্মেল ১৮ টা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে। আল্লাহ্! এ বলে কি?১৮ টা বড়ি খাওয়া মানে বিশাল ব্যাপার। আমি সে রাতেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মোজাম্মেল ট্যাবলেট খেয়েছে সকালে, আর আমি জানলাম রাতে।মানুষকে জানিয়ে মরার মাঝে যে কি আনন্দ আছে তা ওই বলতে পারবে। হাসপাতালে গিয়ে মোজাম্মেলের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি ইমার্জেন্সি বেড খালি।ওর মা বাইরে বসে আছে। আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।আমি বললাম,
-আন্টি,মোজাম্মেল কোথায়?বেড খালি!
-বাবা,ও তো বাথরুমে।
-বাথরুমে মানে?শুনলাম ১৮ টা ট্যাবলেট খেয়েছে,তো এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার কথা।তো এখনই হুঁশ পাইলো কেমন করে।
আমার প্রশ্ন করা দেখে মোজাম্মেলের চাচাতো এক ভাই এসে বললো আরে ভাইয়া মজার কাহিনী হলো, ভাই যে ট্যাবলেট খাইছে,ওগুলোর মেয়াদ আরো দুই মাস আগে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।ওষুধ কাজ করেনাই।ভাইয়ের পাতলা পায়খানা হয়ে গেছে। মানুষ প্রচণ্ড দুঃখ পাইলেও কান্না দমিয়ে রাখতে পারে।কিন্তু হাসি সে তো বহুত কষ্টে মানুষের মুখে আসে।আর হাসির সুযোগ পাইলে কি কেউ হাসি না দিয়ে পারে। আমিও পারলাম না।আন্টির সামনেই হো হো করে হেসে দিলাম। আন্টি আবারো কান্না করতে করতে বলতে লাগলো,
-আমার ছেলে মরতে যাচ্ছিলো। আমি জানি আমার কেমন লাগছে।আর সবাই হাসছে।বুঝেছি আমার দুঃখ কেউ বুঝবে না। আমি তখনো লাগাতার হেসে যাচ্ছি।কোনোমতেই আমি হাসি থামাতে পারছি না।মোজাম্মেল বাথরুম থেকে বের হতেই ওকে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগলাম। মোজাম্মেল মন ভার করে বসে পড়লো।আমি কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞাসা করলাম,
-ভাই কি এমন দুঃখ পায়ছিস যে মরতে চাচ্ছিস? কিছু সময় চুপ থেকে নীরবতা ভেঙে বললো,
-তুই জানিস না। আমি ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে রিলেশন। ছয়মাসের রিলেশন,আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারিনা আর ও আমাকে ছাড়া। তুই তো জানিস, বাড়ি থেকে আমার বিয়ে দিতে চাই না।
-কেন চাই না?
আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা কেড়ে নিয়ে মোজাম্মেলের চাচাতো ভাই বললো, আরে ভাই, এইডা একটা বলদ।মেয়ে দেখতে গিয়ে মেয়ের মা কে কন্যা ভেবে বলেছিলো, চলেন ওই রুমে। আপনার সাথে আমার একান্ত কিছু কথা আছে। আমি এবারো হাসলাম।অনেক দিন এতোটা বিনোদন পাইনি।
-হ্যাঁ,তারপর কি হলো? আবারো সেই ভাই,
-আরে ভাই, মেয়েটার সাথে আজ আমাদের দেখা করার কথা ছিল।চাচীকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি।কিন্তু যখন বের হতে যাবো তখন মেয়েটা মেসেজ দিছে, ‘তোমার মতো ছেলের সাথে আমি রিলেশন কন্টিনিউ করতে পারবো না।’ তার একটু পরেই আবার মেসেজ দিছে, ‘সরি সোনা,মেসেজটা ভুল করে তোমার কাছে চলে গেছে।’ আমি কথাটা শুনে অনবরত হেসেই যাচ্ছি।আমার হাসির শব্দ শুনে হাসপাতালের রোগীরাও হাসছে। আর মোজাম্মেল ঘনঘন বাথরুমে যাচ্ছে।