পাশের বাড়ির এক ভাবি। তিনি বাংলা মুভির প্রতি ছিলেন খুব আসক্ত। বাংলার সব মুভি তার দেখা চাই ই চাই। আমি তেমন একটা মুভি দেখিনা। তো সেদিন ভাবির টিভি কক্ষে কি মনে করে যেন গেলাম ভাবি আমায় দেখেই বলল, আরে তুমি যে, আস আস ভেতরে আস….
— হুম, কি করেন?
— কিছুনা এমনি বসে আছি। চোখ ৩৬০ডিগ্রী এঙ্গেল করে ঘুড়িয়ে দেখলাম, তিনি একটা বাংলার মুভি দেখতেছেন। আমার চাওনি দেখে তিনি একেবারে অসস্তিতে পড়ে গেছেন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললাম…
— কি দেখেন টিভিতে? ভাবি: আরে একটা বাংলা ছবি। শাকিব খানের। নায়িকার অভিনয় করছেব অপুবিশ্বাস।
— ওও আচ্ছা, দেখেন। আমি অন্যরুমে যাই তাহলে।
—- তুমিও দেখ, ভাল লাগবে।
আমি বললাম, ঠিক আছে। ছবির কাহিনিটা মাঝখানে ছিল তাই আগা মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলামনা। তবে খানিকটা দেখার পর বুঝতে পারলাম যে, অপুবিশ্বাস ছিল একটা সম্ভ্রান্ত (ধনী) পরিবার মানে গডফাদার এর মেয়ে। গডফাদার এর নামটা এই মুহুর্তে আমার স্মৃতিতে নেই। আর শাকিব খান ছিল তাদের গাড়ির ড্রাইভার। বাংলা সিনেমার কথা আর কি বলব। ৫ মিনিট দেখলে ৩ ঘন্টার চরিত্র বলে দেয়া যাবে। তবুও দেখলাম ভাবির সাথে বসে। ছবির মাঝখানে অপুবিশ্বাস এর সাথে শাকিবের প্রেম লীলা গড়ে উঠে, এবং ভালই চলে। লাস্টে যা হয় আর কি! বাবা গডফাদার বেপারটা বুঝে ফেলে এবং শাকিবের সাথে যুদ্ধ বেঁধে যায়।একসময় বাংলা সিনেমার মার-পিটও শুরু হয়ে যায়। এইসব কাহিনি দেখে ভাবি খুব রেগে গিয়ে আমাকে বলে….
—- আজকাল বাবা মায়েরাও হইছে বটে। এমন একটা সুন্দর ছেলের সাথে কই বিয়ে দিবে তা নয় উলটা মারামারি শুরু করে দিছে। আমি বললাম, কেন বিয়ে দিবে। শাকিব তো নিম্ন বংশের। আর পড়ালেখা জানেনা। তাহলে কোন যোগ্যতায় ওর কাছে বিয়ে দিবে?
— তবুও ওরা ২ জন যেহেতু ২ জনকে খুব ভালবাসে তাহলে বিয়ে দিতে আপিত্তি কোথায়? আমি বললাম, তাহলে আপনি এসব ছবির সম্পর্ক সমর্থন করেন?
— হুম করবনা কেন! বর কণে রাজি কেয়া কারেগা কাজি।
তৎক্ষনাত ভাবিকে কিছু বলে উঠতে পারিনাই।তো রীতিমত ছবি শেষ হল। রুম থেকে চলে আসলাম। আসার সময় দেখাল, ভাবির বড় মেয়ে তুসি পড়তে বসছে। তুসি এবার কলেজে উঠেছে। তুসির জন্য একটা লজিং মাস্টারও রাখা হয়েছে। তার ঠিক মাসখানেক পরে একদিন আমার ছোট বোনএসে বলল, ভাইয়া শুনছ…শুনছ “তুসি নাকি তার লজিং মাস্টার এর সাথে বাবা মা’র মুখে চুন কালি দিয়ে পালিয়ে গেছে। তুসির মা কান্না- কাটি করছে।” কথাটা শুনে আমি সঙ্গে সঙ্গে ভাবির বাড়িতে গেলাম….
— কেমন আছেন ভাবি? ভাবি কাঁদ কাঁদ গলায় বলল, আর আমাদের থাকা। আমাদের মান ইজ্জত সব ধুলায় মিসে গেছে।
— কেন কি হয়েছে?
—- তুসি মাস্টার এর সাথে ভাগছে। এখন আমি কি করমু?
— কি আর করবেন, ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিন।
— কি? ওই পোলার লগে বিয়ে দিমু? ওকি আমার মেয়ের যোগ্য! দরকার হলে মেয়েকে কাইটা ফেলমু তবুও ওই পোলার লগে মাইয়ার বিয়ে দিমুনা। আমাদের তো এই পাড়ায় একটা সম্মান বলে কথা আছে।
—ওও। আপনি না সেই দিন বাংলা সিনেমা দেখে বললেন শাকিব আর অপুবিশ্বাস এর বিয়েতে তার বাবার এত আপত্তি কোথায়? ছেলে দেখতে হীরার টুকরা।
—-ওতো শাকিব খান ছিল তাই।
—- আর আপনার মেয়েও তো আর অপুবিশ্বাস নয়!
কথাগুলো শুনে তিনি চুপ করে ছিলেন। ঠোঁট কাঁপতেছে কিন্তু ঠোঁটের ফাক দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছেনা। ভাবি বাংলা সিনেমার সে সব প্রেম লীলাকে সমর্থন করতে পারেন কিন্তু নিজের মেয়ের প্রেম লীলা সমর্থন করলে তখন মুখে চুনকালি পরবে। মোড়াল স্টোরিঃ নিজের বেলায় ষোলআনা অন্যের বেলায় চার-আনা।