একদিন রাতে ফোন ঘাটাঘাটি করছিলাম,হঠাৎ “লেবু আপু” নামে সেইভ করা একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
এমন আজব নাম দেখে আৎকে উঠলাম! লেবু আপু আবার কে? আর আমার ফোনে এই নাম্বার ই বা কে এমন অদ্ভুত নামে সেইভ করলো ?
মাথায় কিচ্ছু যাচ্ছে না৷ অনেক্ষন ধরে ভাবতে লাগলাম। রিং বাজতে বাজতে থেমে গেলো। ভয়ে রিসিভ করলাম না। একটু পর আবার ফোন আসলো। তখনই আমি তামান্নাকে ডাক দিয়ে বললাম,তামান্না দেখ না আমার ফোনে লেবু আপু নামে একটা কল আসতেছে। তামান্না সাহস করে ফোনটা দিয়ে কানে দিয়ে ,, হাসতে হাসতে বলে তাজরীন এটা শিরিন আপু। তখন ঝট করে মাথায় আসলো আরে আমি যখন ফার্স্ট ইয়ারে ছিলাম তখন খাবার হলে এক আপুকে লেবু দিয়েছিলাম, উনার সাথে একবারের কথাতেই ভীষণ ভাব হয়ে গেছিলো আর নাম্বারটা তখন খুশির ঠেলায় লেবু আপু দিয়ে সেইভ করেছিলাম,কিন্তু কখনো ফোন দেওয়া হয় নি। তাই ভুলে গেছি।
তারপর আপুর সাথে কথা বললাম, উনার ফাইনাল পরিক্ষার রেজাল্ট জানাতে আজকে ফোন দিছে৷ দুইবছর আগে নাম্বার নেওয়া হয়েছিলো,এর আগে আর ফোন দেওয়া হয় নি তাইতো ভুলেই গেছিলাম। এমনটা আজকে হঠাৎ না,এর আগে ও দেব নামে এক নাম্বারে ফোন দেখে ভয় পাইছিলাম,আবার ভাবছিলাম এটা কোন দেব? দেব দিয়ে সেইভ করার মতো খুঁজে কিছুই পাচ্ছিলাম না। ফোন ধরে দেখি এটা আমার খালাতো ভাইয়ের শাশুড়ী,উনাদের বাড়ি দেবপুরে। কেনো জানি দেব দিয়ে সেইভ করেছিলাম সেটা মনে পড়ছে না। এমন অদ্ভুত কান্ড হয় শুধুমাত্র আমার ভুলো মনের জন্য।
একটা জিনিস যদি কোথাও লুকিয়ে রাখি,কিছুদিন পর ভুলে যায়। এর জন্য আম্মা ও অনেকবার বকা দিয়েছে৷ আমার নাকি কাকের মতো মন! চোখ বন্ধ করে রাখি তাই নাকি পরে আর সেটা খুঁজে পায় না। আমার থেকে কে কতো টাকা ধার নেয়,কিংবা আমি মাঝে মাঝে প্রয়োজনে কতো টাকা ধার করি সেটা ও ভুলে যাই। একদিন তামান্না আর হাফসারা ইচ্ছে করে আমার সাথে মজা করে বলে ওরা নাকি আমার কাছে টাকা পায়! আমি তো ভুলো,যতো বলছে দিয়ে দিছি। কিন্তু কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছিলাম না,আর ধার নেওয়ার মতো কোনো কাজ তো করি নি,ওরা কিভাবে টাকা পায়?
যায় হোক সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই নি। কিছুদিন পরে আমার হাত খালি কোনো টাকা নাই,তখন হঠাৎ করেই দেখি ব্যাগে ১ হাজার টাকা। এটা তো আমার কাছে অষ্টম আশ্চর্য ছিলো, সবাইকে জিজ্ঞাসা করলাম কেউ আমার এখানে টাকা রেখেছে কিনা? কিন্তু কেউ কিছু স্বীকার করছিলো না। এই টাকা দুইদিন জায়গায় ই পড়ে রইলো, এরপর বাধ্য হয়ে তামান্না, হাফসা বললো, এই টাকা আসলে আমার ই। ওরা মজা করে এর আগে নিয়েছিলো কিন্তু আমার মনে নেই।
মাঝে মাঝে খাইছি কিনা ভুলে যাই,দুইবেলা না খেয়েও বসে থাকি আবার এক বেলাতেও দুইবার খেয়ে বসি। ফেইসবুকে একটা কাজে ২ মিনিটের জন্য আসলে কিভাবে যে ২ ঘন্টা চলে যায় সেটা ও মনে থাকে না। এই বিষয়গুলো মনে থাকে না,কিন্তু কে কোনদিন,কতো তারিখ কি বলেছিলো,কিভাবে বলেছিলো,কার দোষ বেশি কার কম এগুলো খুব মনে থাকে মাশাল্লাহ।আমার ৫ বছর বয়সে দেখা ইলিয়াস কাঞ্চনের বাংলা মুভির কাহিনী ও মনে আছে। মনযোগ দিয়ে পড়লে পড়ালেখা ও মনে থাকে,একদম ই ভুলি না। কিন্তু কেনো জানি ছোট ছোট জিনিস মনে রাখতে পারি না।
ক্লাস ফাইভে পড়া লাইব্রেরীর ক্যাপটেন হয়ে আলমারির চাবি পেয়েছিলাম,আমি ই সবাইকে বই দিতাম। একদিন চাবি হারিয়ে ফেলছি,এরপর আমাকে বাতিল করা হলো। কিন্তু আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি সবসময় যে ড্রয়ারে সব জিনিস রাখি সেখানেই রেখেছিলাম। বই পড়া এবং এই বিষয়ে কাজ করা সবসময়ই ভালো লাগতো তাই বাতিল হওয়াতে কান্না করেছিলাম। এর কয়েকদিন পরে চাবি পাইছি সেটাও আমার কলম রাখার বক্সে। তখন মনে হয়েছিলো, ড্রয়ারে এতো জিনিসের মধ্যে খুঁজে পাবো না বলে আমি ই বক্সে রেখেছি। তাতে কি এই ভুলো মনের জন্য আমার দায়িত্ব যে এখন স্থগিত! ক্যাপটেনের দায়িত্ব আর আমাকে দিবে না৷
সবার ই এমন ছোটখাটো ভুলে যাওয়ার গল্প থাকে।পরে যখন মনে হয় তখন ঠিক ই আফসোস শুরু হয়,মনে হয় কেনো যে সময়মতো মনে হলো না! এমনকি কাউকে একটা কথা বলার পরিকল্পনা করে রাখলে ও পরিস্থিতি পেরিয়ে গেলে মনে পড়ে, তখন যে কি একটা খারাপ লাগে সেটা বুঝানোর মতো না।