বাজারের ব্যাগ হাতে দিয়ে মা বলেছিলো যেন দামাদামি করে বাজার করি। দোকানদারকে বললাম, “ ভাই আলু কতো? ”
“ ২০ টাকা। ”
“ ১৫ টাকা দেই, এক এ কেজি দেন। ”
“ নাহ, পারুম না। ”
এভাবে পটল, চিঙ্গা, লাউ, করল্লা কোনো কিছুই সে ৫ টাকা কমে দিচ্ছে না। এর মাঝে একটা মেয়ে আসলো।
“ মামা আলু কতো? ”
“ ২০ টাকা, তয় আপনে নিলে ১৫ টাকা! ”
“ পটল? ”
“ ৩০ টাকা, আপনে নিলে ২০ টাকা! ”
এভাবে সবই নিলো পাঁচ দশ টাকা কমে! চিন্তা করছি আমি কী দোষ করছি? ভাই বললাম বলে দাম বেড়ে গেলো আর মেয়েটা মামা বললো বলে দাম কমে গেলো? আচ্ছা, এবার বললাম, “ মামা আলু কতো? ”
“ আপনে কী কানে হুনেন না মিঞা? বারবার এক কথা কওয়া লাগবো? ২০ টাকা। এক টাকাও কম হইবো না! ”প্রচন্ড রাগ নিয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলাম। এর মাঝে সেই মেয়েটাকে দেখি আরেক জায়গা থেকে ডাঁটা শাক কিনছে। তাঁর সাহায্য নেয়া যাক।
বললাম মা বলেছে দামাদামি করে বাজার নিতে। কিন্তু আমাকে তো দামাদামি করার সুযোগই দিচ্ছে না। আপনি যদি আমার হয়ে নিয়ে দিতেন। মেয়েটা মুচকি হেসে বললো, “ ওহ আচ্ছা! টাকাটা দিন। ” পাঁচশো টাকার নোটটা মেয়েটার হাতে দিলাম। মনে হচ্ছে পাশের কলেজেই পড়ে। আশেপাশে কোথাও থাকে। সে বললো, “ এখানে দাঁড়ান, আমি নিয়ে আসছি। ”
আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। মেয়েটা সেই দোকানদারের কাছে গেলো। দেখতে পাচ্ছি আলু থেকে শুরু করে মিস্টি লাউ পর্যন্ত নিলো। সবকিছু নিয়ে আমার দিকে আসছে। আমাকে খেয়াল করেনি মনে হয়। পার হয়ে চলে যাচ্ছে। আমি সামনে গিয়ে বললাম, “ আমার বাজারের ব্যাগটা? ”
মেয়েটা যেন আকাশ থেকে পড়লো, “ এক্সকিউজ মি? আপনার বাজারের ব্যাগ মানে? এই মাত্র আমি ঐ মামার কাছ থেকে সব কিনে নিয়ে আসলাম! ” আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, “ হ্যাঁ কিন্তু টাকা তো আমি দিলাম না? ” “ আপনি তো দেখছি লোকজন জড়ো করতে চাচ্ছেন। চলেন মামার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কে এই মাত্র এগুলো কিনে নিয়ে আনলো! ”
হায় হায়, দিন দুপুরে দেখি মা জননীর ৫০০ টাকা ডাকাতি হয়ে গেলো! মানুষজন জড়ো হলে মার আমাকেই খেতে হবে৷ মেয়েটাই আলু পটল কিনেছে। এটার সাক্ষী তো স্বয়ং দোকানদার! কিন্তু আমি যে তাঁকে টাকা দিলাম। সেই সাক্ষী তো আর কেউ নেই! অসহায়ের মতো আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। সে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো! বাড়িতে শূণ্য হাতে ফিরেছি দেখে মা বললো, “ বাজার কই? ”
কী যে উত্তর দেই৷ আমি মিথ্যা কথা বললে আবার ধরা খাই। তবুও বললাম, “ এক ফকিরনীকে দিয়ে দিছি৷ তাঁর কী যে করুণ অবস্থা! ” মা ঝাড়ু হাতে নিয়ে বললো, “ সেই ফকিরনীর লাগিই বুঝি প্রত্যেকদিন আমার টাকা হাওয়া হয়ে যায় না? ” দৌড় দেওয়া ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। কিন্তু মনে দুঃখ লাগলো খুব। ঐ মেয়েটাকে মা জননী আমার প্রেমিকা ভাবলো!