রাত ১১টা বেজে ৫৯মিনিট।হঠাৎ টুং করে ফোনে একটা মেসেজ আসলো।সারাটাদিন এই মেসেজটার অপেক্ষায় ছিলাম।বয়স হয়েছে চোখে ভালো দেখতে পায় না।তবে আমি জানি এই মেসেজটা আমার বার্থডে মেসেজ।গত ৪৫বছর যাবৎ পেয়ে আসছি।
শুষ্ক ঠোঁটের কোনে এক চিমটি হাসি।যাক মানুষটা এখনও সুস্থ আছে।মনে রেখেছে আমাকে আজও।মেসেজটা পড়ার প্রয়োজন পড়ে না কেননা আমি জানি সে কি লিখেছে।তবুও গত কয় বছর যাবৎ এই একই মেসেজ বার বার পড়ি।বার বার পড়তে ভালো লাগে।একাই পড়ি আর তাকে পাগল বলে সম্মোধন করি।আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।চোখে চশমা দিয়ে ম্যাসেজটা পড়া শুরু করলাম-
“প্রিয়া,কি ভাবছো ভুলে গেছি।পাগল নাকি ভুলবো তাও আবার তোমাকে।ভালোবাসি যে।আচ্ছা তুমি কি সেই পারফিউমটা এখনও ব্যবহার করো।নাকি বর নতুন কিছু দিয়েছে।তবে যাই বলো গন্ধটা আজও নাকে আসে।আচ্ছা আজও কি ছাদে দাঁড়িয়ে আমার মেসেজটা পরছো।তোমার যে ভীষন ইচ্ছা ছিল চাঁদকে সাহ্মী রেখে ছাদে দাঁড়িয়ে আমরা দুজনে জোৎস্না বিলাস করব। জোৎস্না বিলাস একাই করছো?এতটা স্বাথর্পর হয়ে গেলে। তোমার প্রত্যেকটা ইচ্ছাই পূরণ করি তোমার মতোন করে।
তুমিহীনা সব যে শূন্য।অনেক সুখে আছো তাই না।ভালো থেকো।ওহ তোমার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়নি- সামনের বছরটাতেও যেন এইভাবে তোমাকে শুভেচ্ছা জানতে পারি।উপর আল্লাহ যেন কখনও তোমাকে আমার আগে ডেকে না নিয়ে যায়।তুমি চলে গেলে আমি কাকে শুভেচ্ছা জানাবো বলো।আজও অপেক্ষায় আছি। জন্মদিন শুভ হোক। আজও ভালোবাসি। সত্যি আজও একটুও পরিবর্তন হয়নি।একই রকম ভালোবাসে।এতটা কষ্ট দিলাম তারপরও অপেক্ষা করে।খুব মনে পড়ছে আজ সেদিনের কথা যেদিন আমি আবিরকে ছেড়ে এসেছিলাম।
বেশি দিনের প্রেম ছিল না।তবুও দুজনদুজকে ছাড়া চলতে পারতাম না।বাসা থেকে হঠাৎ বিয়ে ঠিক করে। বাবাকে বলেছিলাম খুব ভালেবাসি আবিরকে।বাবা উওরে বলেছিল তোমার ভালোবাসা নাকি আমার সম্মান। আর কোন উওর দিতে পারিনি।বাবার সম্মানকেই বেছে নিলাম। আবিরের পাগলামো দেখে ওকে বুঝিয়ে ছিলাম আমি অনেক ভালো আছি।টাকায়ালা জামাই পেয়েছি সে আমাকে সুখে রেখেছে। ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।সব ছলনা ছিল।বলেছিলাম মেয়েদের বিশ্বাস করতে নেই।ঠকতে হয় তবুও করেছিল।এখন নিজের পথ নিজে বেছে নাও।
ও পথ ঠিকই বেছে নিয়েছে।অপেক্ষার পথ।বিয়ে ও করেনি।শুনেছি বিয়ের কথা বললেই বলে মেয়েদের বিশ্বাস করি না।যাকে একবার বিশ্বাস করেছি তাকেই সারা জীবন করব। সত্যি পাগল ছেলেটা।ওর সামনে একটু ভালো থাকার অভিনয়টাও করা যায় না।বুঝতে পেড়ে যায় সব।বুজতেই চায় না আমি সত্যি আর কখনও ফিরবো না।বয়স যে পেড়িয়ে গেছে।ভালোবাসা বয়স মানে না কিন্তু পিছুটান যে ছাড়তে চায় না। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন এসে জাঁপটে ধরলো।
-কে..
-আমি মা।
-এত রাতে তুই এখানে কেন?ছেলেটা আরো শক্ত করে ধরলো।
-কি হলো?
-চিৎকার করে কাঁদতে পারো না। ছেলের মুখে এমন কথা শুনে সত্যি অবাক হয়ে গেলাম।
-মানে?
-মা।গত কয়েক বছর ধরে দেখছি এই একটা দিনে ১১টা থেকেই ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকো।আমি বুঝি মা।তুমি কারোর জন্য অপেক্ষা করো।এই সময় কেউ তোমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।
-থাম।ছেলেটাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে কেঁদে দিলাম।
-বাবা তোমার জন্য অপেহ্মা করছে মা।
-হুম। চোখের জল মুছে ঠোঁটের কণায় মলিন হাসিটা দিয়ে এগিয়ে গেলাম।এটাই আমার গন্তব্য স্থান।