সে আসে, কিছুটা দূরত্ব আমাদের মাঝে। তার হাতে চেকের ফুলহাতা সাদা শার্ট। আমি তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি। সে আমতা আমতা করে বলে….
-সাদা শার্টটা পরে যান অফিসে।
তার মিনমিনিয়ে বলা কথাগুলো আমার কানে বারবার বাঁজে। মৃদু কম্পনের সৃষ্টি হয়৷ তার বুকে ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে সেটা আমি জানি৷ আমি চাচ্ছি সে আরেকটু সহজ হোক, একদম কাছে আসুক। জড়তা কাটিয়ে অধিকারের নেয় কথা বলুক। আমি না শোনার ভান করে চুল আছড়াচ্ছি। সে আবার বলল….
-এটা পরুন।
–কেনো?
-এটায় আপনাকে মানাবে।
–আর এখন যেটা পরে আছি সেটায় বুঝি মানায় না?
সে মাথা নিচু করে স্টাচুর মতন দাঁড়িয়ে থাকে। আমার প্রশ্নের জবাব দেয়না। তবে সে যে আমাকে মনেমনে গালি দিচ্ছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ আমি বেশ আঁচ করতে পারলাম। মুচকি হেসে তার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। সে সামান্য পিছে সরলো, না সরার মতনই৷ আমি আমার পরনে থাকা শার্ট টা খুলে ফেললাম। তারমুখের ভঙ্গিমা খেয়াল করলাম। গাল দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আজবতো! শার্ট খুলেছি আমি লজ্জা আমার পাওয়ার কথা কিন্তু এই মেয়ে কেনো লজ্জা পাচ্ছে? হা হা হা লজ্জাবতী টা..!
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম। আবার নিজেই উত্তর দিলাম, নব বিবাহিত বউ লজ্জাতো থাকবেই। আমি শার্ট গায়ে দেই, সে আরচোখে তাকাতে চেয়েও তাকায়না৷ ব্যাপারটা বেশ উপভোগ্য লাগে আমার কাছে৷ শার্ট পরা শেষ হলে আয়নার দিকে তাকাইনা আমি। নতুন যে আয়নাটা আমার সঙ্গী তারদিকে তাকাই, বলি….
–মানিয়েছে?
সে মাথা নিচু করে জবাব দেয়..’হু’ আলনা থেকে একটু দ্রুতই টাই টা নিয়ে আসে। আমার দিকে ধরে বলে….
— এটা পরে নিন।
-তুমি পরিয়ে দাও।
সে মাথা তুলে তাকায়, আবারো সেই লজ্জামাখা মুখ আমার সম্মুখে দন্ডায়মান হয়। আমি মুখ টিপে হাসি একটু। আমি টাইটা নিয়ে নিজেই পরি। অফিস থেকে রওনা হবো সে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। বলি..’কিছু বলবে?’ সে ‘উহু..!’ বলে মাথা নাড়ায়। আমার বেশ মজা লাগে। অথচ সে আমাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলেনা। কি অদ্ভুত তাইনা!
সে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে আমি রওনা হই। একটু যাওয়ার পর মনে হলো সে অভিমান করেছে। পিছন ফিরে দেখি সে তাকিয়ে আছে আমার যাওয়ার দিকে। আমার চোখে চোখ পরতেই মাথা নিচু করে ফেলে সে। এই মিষ্টি লুকোচুরি গুলোর অনুভূতি যে এতটা মধুর তা আগে জানা ছিলনা৷ তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম….
–জান্নাত! কিছু বলবে?
-উহু..! (মাথা নিচু করে)
আমি আশেপাশে একটু দেখলাম৷ তারপর আচমকা তার কপালে ঠোঁটের পরশ একে দিলাম। তারচোখে পানি টলমল করছে। অথচ এটা তার কাছে সুখের পরশ। অভিমানটা এই পাওনা অনুভূতির উপরই ছিলো৷ আমি অস্ফুট সুরে বললাম…
–রোজ কিন্তু এই পরশটা দিব, মানা করবে?
সে দ্বিতীয় দফা লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে থাকে৷ আমার কপালে আচমকা তার ঠোঁটের পরশ একে দিয়েই দৌঁড়ে চলে যায়। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো স্বপ্নে ছিলাম। এটা কি হলো! আবার হাসিও পেলো। পাগলি মেয়ে। সংসারে এইসব মিষ্টি ভালোবাসা গুলো দরকার। আমিতো রোজ আদায় করে নিব। মন্দ কি!