– সিগারেট আছে? থাকলে একটা দেন। অচেনা মেয়েটির কথা শোনে এদিক ওদিক তাকাতাকি করছি। সামনে পেছনে কাউকে দেখলাম না। আমি বললাম,
– আপনি আমাকে বললেন?
– আপনি ছাড়া কে আছে এখানে? চোখে সমস্যা নাকি? খুব রাগ হচ্ছিল, এমনিতেই আমার বয়সের চেয়ে ৫ বছরের ছোট হবে। আবার অপমানজনক কথা!
– চোখের সমস্যা হতে যাবে কেনো? মেয়ে হয়ে ছেলের কাছে সিগারেট চাইলেন তাই সন্দেহ লাগলো। মেয়েটি বিরক্ত সুরে বললো,
– থাকলে দেন, এতো টাইম নাই কথা বলার।
– আরে আজব তো, আমি সিগারেট খাই বা না খাই আপনি কিভাবে জানলেন? এমনোতো হতে পারে আমি সিগারেট খাই না। মেয়েটা রাগ চোখে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবতেছি, গ্যাং হবে নাকি কে জানে? আচমকা ধমক দিয়ে বলে,
– দিবেন নাকি পিস্তল দিয়ে ঠুস করে দিবো? এবার পিস্তলের কথা শোনে ভয়ে পা কাঁপছে। মেয়েটির পরনে ছিল জীন্স শার্ট । ধারণা প্যান্টের পকেটে হয়তো পিস্তল থাকতেও পারে। কাঁপতে কাঁপতে বললাম,
– আমি সিগারেট খাই না। ঠুস করে দিয়েন না।
– সিগারেট খান না তাহলে পকেটে কি?
– মোবাইল, উচু হয়ে আছে।
এমন সময় মেয়েটি রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ব্যাগে হাত দিল। বুঝতে পারি ঠুস করে দেবার জন্য পিস্তল বের করবে। জীবনের চেয়ে মোবাইল বড় না। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দিলাম। হাতে ছিল ঘড়ি, সেটাও খুলে দিলাম। মেয়েটিও নিয়ে নিল। মোবাইল হাতে নিয়ে টিপাটিপি করছে। চেঁচিয়ে বললো,
– হাধারাম, মোবাইলে লক কেন? আমি লক ছাড়িয়ে দিলাম। ও আবার মোবাইল নিল। এমন সময় চেঁচিয়ে বললো,
– গ্যালারী খালি কেনো? গার্লফ্রেন্ডের ছবি কই?
– আপনি কি ছিন্তাই করতে আসছেন নাকি গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখতে?
– তুই কিন্তু বেশি কথা বলতেছিস এখন? দিবো কিন্তু ঠুস কইরা। ঠুসের কথা শোনলেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় যায় ভাব। আমি বললাম,
– আপা, গার্লফ্রেন্ড নাই। বিশ্বাস করেন, আমি জন্মগত ভাবেই সিংগেল। ছেলে ছিন্তাইকারী দেখেছি কিন্তু মেয়ে ছিন্তাইকারী যে আছে সেটা দেখা হয়নি। চেহারা বেশ সুন্দর হলেও মন মানসিকতা নিচু স্তরের। আবার মেয়েটা বললো,
– ঘড়িটা দেখতে সুন্দরই আছে। তোর গার্লফ্রেন্ড গিফট করেছিল নাকি?
– আপা, সত্যিই গার্লফ্রেন্ড নাই। মেয়েটা রাগিয়ে বলে,
– বুঝেছি, এবার তোকে ঠুস করে দিতেই হবে। মেয়েটা মোবাইল ঘাটাঘাটি করছে। মনে মনে প্লানিং করে ফেললাম। তিন্নী তো আমার সব চাইতে ভালো বান্ধবী এবং ও আমাকে খুব পছন্দও করে। ওরে না-হয় গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফোন দেই। মেয়েটির থেকে মোবাইল নিয়ে তিন্নীকে ফোন দিয়ে বললাম,
– বাবু, আমার জানু তুমি একটু এখনি আমার সাথে দেখা করো? তিন্নী মুচকি মুচকি হেসে বললো,
– তোকে সেই পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসি, কখনো পাত্তা দেস নাই। হঠাৎ আজ এতো দরদ?
– হাঁ, তোমাকেও খুব ভালোবাসি সোনা। জলদি আসো। তিন্নী কিছু বলবে এমন সময় মেয়েটি মোবাইল কেড়ে নিয়ে তিন্নীকে বলে,
– আপু, ফাহিম আর কতো মেয়ের সাথে লুতুপুতু করবে। ওর সাথে রুম ডেট না করলে ও আমাদের সম্পর্ক রাখবেই না। এখন আবার আপনাকে বাবু সোনা বলতেছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়েটি আমার কাছে কি চায়? মেয়েটা ফোন রেখে দেয়। মুচকি মুচকি হেসে বললো,
– কেমন দিলাম ঠুস কইরা। আমিও রাগ হয়ে বললাম,
– সত্যি যদি পিস্তল দিয়ে ঠুস করে দিতেন তাহলে মরে বেঁচে যাইতাম। এমন করার কারণ কি?
– বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরেছি, আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আর আপনার ব্রেকাপ করাবো। মেয়েটি যাবার সময় মোবাইল, ঘড়ি দিয়ে স্যরি বলে যায়। আমি মাথায় হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।