কাল গোলাপ দিবস উপলক্ষে ক্রাশকে রাত ১২:০০ থেকেই গোলাপের স্টিকার, ইমোজি, ছবি দিয়ে দিয়ে ভার্চুয়ালি গোলাপ দিবস পালন করছিলাম।আসল উদ্দেশ্য ক্রাশকে পটানো। কিন্তু খাইস্টা ক্রাশ আমার একচুলও গলে না। কতদিন থেকে পটাবার চেষ্টা করছি কিন্তু তিনি কিছুতেই পাত্তা দেন না। আমার মতো একটা আধা সুন্দরী মেয়ে সারাদিন এতো গোলাপ পাঠাচ্ছি, একটাবার তো গোলাপ শব্দটা লিখে অন্তত দিতে পারেন! তা না উনি শুধু হাহা দিয়া ভরাইতেছেন।
এই পটাপটি চক্র সারাদিনময় চলছিল ভালোই। সন্ধ্যাবেলা একব্যাচ জুনিয়র একটা ছেলে ফোন দিল। বললো গেট এর সামনে দাঁড়াতে।সেসময় আমি ক্রাশের সঙ্গে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেটের কাছে গেলাম।
এই ছেলেটা আমার স্বল্প পরিচিত।এককালে তার বোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল, তাও হ্যাল্পিং সূত্রে। আমার কিছু বই দিয়েছিলাম, সে বলেছিল পরে টাকা দিবে। আমি মানা করে দিয়েছিলাম।সেই অবধি পরিচয়।দেখাও হয়েছিল সেই একবারই। ভাবলাম আজ বোধ হয় টাকা দিতে চাচ্ছে। কিছুক্ষণেই ছেলেটা বাইক নিয়ে গেটের সামনে আসলো।
‘ভালো আছো আপু?’ বলে হাত মুঠো করে কিছু একটা এগিয়ে দিয়ে বললো,”এটা নেও” সন্ধ্যার অন্ধকারে অত ভালো দেখতে পেলাম না কি ছিল। টাকাই মনে হলো। কিন্তু হাতে আসতেই বুঝলাম একটা চেইন বা ব্রেসলেট বা পায়েল হবে! ব্যপারটা বুঝার সাথে সাথেই ফেরত নিতে বললাম কিন্তু ছেলেটা একটা গোলাপ ছুঁড়ে দিয়ে দ্রুত বাইক ঘুরাতে গিয়ে বাইক নিয়ে কাৎ হয়ে পড়লো। এতো দ্রুত ঘটলো যে হাসবো না গালি দিবো বুঝতে না পেরে বোকার মতো দাঁড়িয়ে দেখলাম, কোনরকম কাঁপতে কাঁপতে বাইক তুলে ব্যাটা একটু দূরে আমার নাগালের বাইরে গিয়ে স্টার্ট দিয়ে পালালো। আমি গরুর মতো দেখেই থাকলাম।ভাগ্যে আম্মু কাজে ব্যস্ত তাই টের পায়নি।নাহলে আজকে খবর ছিল।
নিজের রুমে এসে মুঠো খুলে দেখলাম একটা পায়েল।তারপর ছেলেটার নাম্বারে শাসিয়ে ঝাড়ি মেরে দুটো মেসেজ দিয়ে ফেললাম।পাকনামি! যত বড় বয়স নয় তত বড় শখ! আমি আবার ভীষণ লয়াল।ক্রাশ ছাড়া অন্য কোন ছেলের দেয়া গিফট নেইনা।তাই গোলাপটা ফেলে দিবো আর পায়েলটা কাউকে দিয়ে দিবো ঠিক করলাম। কিন্তু তার আগে একবার ভাব নিতে হবে। পায়েল আর গোলাপের ছবি তুলে ক্রাশকে পাঠালাম। বললাম, “দেখো তুমি গোলাপ না দিলে কি! মানুষ গিফটসহ দিয়ে গেছে হুহ।” মেসেজটা সিন হলো কিন্তু রিপ্লাই নেই।হতাশ হয়ে ফোনটা রাখতেই ভাইব্রেট করে উঠলো। তাজ্জব বনে গেলাম! এ যে ক্রাশের কল! আল্লাদে গদগদ হয়ে ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেও পারিনি, তিনি একদম খেঁকিয়ে উঠলেন, “কোন ছেলে দিছে গিফট-গোলাপ?”
–একটা জুনিয়র।
–এখন জুনিয়র ছেলেরাও তোমাকে লাইন মারে!
–মারতেই পারে।তাতে তোমার কি! তুমি তো মারো নাহ।
–ছেলে তোমার নাম্বার কেমনে পাইলো?
–যেমনে পাক। তোমার কি?
–আমার কিছু না তো কি ঐ ছেলের কিছু! কি হইছে বলো বলতেছি!
লাস্ট কথাটা এমন চিবিয়ে চিবিয়ে বললো যেন সামনে পেলে এখনি চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।আর চটিয়ে কাজ নেই। আবার একটা ঝাড়ি খেয়ে গড়গড় করে সব কথা বলে দিলাম। উনি সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুধু বললেন, “আমার জিনিসে যেন কেউ নজর না দেয়।” টুপ করে ফোনটা কখন কেটেছে জানিনা। আমি তখনও ফোন কানে ধরে সেভাবেই বসে রইলাম।হা হয়ে যাওয়া মুখে একটা মশা ঢুকে পড়া মাত্র খক খক করে বেসিনে দৌঁড় দিলাম।