-কী করো আজকাল?
-ফুট ওভারব্রীজে করে রাস্তা পার হই..
-তোমার এই হেঁয়ালিপনার স্বভাবটা আর গেল না। এজন্যই লাইফে কিছু করতে পারলে না।
-তুমি তো করতে পেরেছ।
-আমি কী করেছি?
-আমাকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করেছ..
-আমার বাসা থেকে প্রেশার ছিল, মুহিত।
-আচ্ছা, ভালো!
-আচ্ছা! আমি না-হয় খারাপ মেয়ে, তাহলে তুমি আমার জন্য শুধু শুধু নিজের জীবনটা কেনো নষ্ট করছ?
-নষ্ট করছি না তো।
-তাহলে বিয়ে করছ না কী জন্য?
-করব..
-কবে?
-আমার থেকে ভালো চাকুরীওয়ালা কাউকে পাওয়ার পরও আমাকে রেখে চলে যাবে না এমন কাউকে পেলেই করে ফেলব।
-দেখ মুহিত! একটা জিনিস নিয়ে বারবার খোঁচা দেয়া ঠিক না। তখন আমার ফ্যামিলির অবস্থা এটলিস্ট তোমার ভালোভাবেই জানা আছে। বাবা অসুস্থ ছিলেন, তাদের মতের বিরুদ্ধে কিছু করার মতো অবস্থা তখন আমার ছিল না।
-আচ্ছা, ভালো কথা। সুখেই তো আছ, আমাকে কীজন্য তাহলে রাত-বিরাতে ফোন দিয়ে বিরক্ত করো?
-আমি বিরক্ত করি?
-হুম, করো..
-আমি আর ফোন না দিলে খুশি হবে?
-হুম, হব।
-আচ্ছা! ভালো থেকো…
-তুমিও সুখে থাকো, স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকো।
-হুম সুখ!
মিতা চোখ মুছতে মুছতে ফোনটা রেখে দিল। প্রতি বছরই এমনটা হয়। গত সাত বছর ধরেই হচ্ছে। সারা বছর কথা না হলেও এই দিনটায় মিতা মুহিতকে ফোন না দিয়ে থাকতে পারে না। সে জানে ফোন রাখার সময় তাকে কাঁদতে কাঁদতে রাখতে হবে, তারপরেও সে না দিয়ে পারে না। মুহিত রবার্ট ফ্রস্টের “মেন্ডিং ওয়াল” বইটা নামিয়ে পাশের টেবিলটায় রাখল। পাঞ্জাবির হাতায় চোখ মুছে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। কী নীরব-নিস্তব্ধ রাত, তার মতো নিঃসঙ্গ, একা।
আজ আর পড়া হবে না। মন বসবে না। শুধু আজ না, আগামী কয়েকটা দিন চলে যাবে তার এই ধকল সামলে উঠতে। তারপরও সারাটা বছর মুহিত এই ফোনকলটার অপেক্ষায় থাকে। এই একটা ফোনকল তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর। এই একটা ফোনকল, শুধু একটা ফোনকলই তাকে মনে করিয়ে দেয় কংক্রিটের এই শহরে এখনো কেউ তার জন্য মনের কোনে আয়োজন করে ভালোবাসা পুষে।