আমার বউ একটু আগে পালিয়ে গেছে। কার সাথে গেছে, কিভাবে গেছে, কোথায় গেছে কিছুই জানি না। তবে এটাও ঠিক ঐভাবে জানার চেষ্টাও করিনি বা করছিও না।
আগে থেকেই আমার বউয়ের উপর আমার একটা সন্দেহ ছিল। একশো পারসেন্ট না হলেও নাইন্টি নাইন পারসেন্ট শিওর ছিলাম কারো সাথে ওর লটর-পটর আছে। এটাও জানতাম যে লুকিয়-লুকিয়ে তার সাথে দেখাও করে। এমনকি আমার টাকা দিয়েই তাকে বিভিন্ন গিফটও কিনে দেয়। তবে আমার বউকে দেখতে একদমই ঐরকম মনে হয় না। দেখতে একদম নূরানী চেহারা। দেখলে মনে হবে এই জগৎ-সংসারের সে কিছুই বুঝে না, ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানে না।
এমনকি আমাদের ঘরে বা সংসারেও তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না। ঝামেলা ছিল না রান্নাঘরে, ডাইনিং-এ, বেলকনিতে, বাসার ছাদে, এমনকি রাতে শুয়ার খাটেও। আমাদের ঠিক প্রেমের বিয়েও ছিল না, আবার ঠিক দেখার বিয়েও না। অফিসে যাওয়ার সময় বাসার গেইটের সামনে তার সাথে আমার প্রথম দেখা। আমি দাঁড়িয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য, আর সে ভার্সিটি।
দুইদিন ধরে বিরোধী দলের হরতাল। আমার কিপ্টা বাপজানের কড়া নির্দেশ এই দুইদিন বাড়ির কাউকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া লাগলেও গাড়ি বের করা যাবে না। তার এক কথা— অসুস্থ মানুষকে হসপিটালে নিতে গিয়ে না আবার তার গাড়িটা-ই অসুস্থ হয়ে যায়। যাইহোক আমরা দুজন দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য। কিন্তু কোথাও কোনো রিকশার পাত্তা নেই। আমি বারবার আড়চোখে তাকে দেখছি। রোদের তাপের সাথে-সাথে তার রূপের আগুনেও আমি ঝলসে যাচ্ছি।
এদিকে আমার মনের ঘন্টা ঢংঢং করে বেজে চলেছে। কিন্তু টুংটাং বেল বাজিয়ে এদিকে কোনো রিকশাওয়ালাই আসছে না। অবশেষে একটা রিকশা এলো; কিন্তু সে যাবে না। আরেকটা এলো, সে-ও যাবে না। আরেকটা এলো, সে-ও না।
এবং অবশেষে আরেকটা রিকশা এলো এবং সে যাবে এবং তাকে আগে আমি ডাক দিয়েছি। এবার আমাদের চোখাচোখি হচ্ছে। সে আড় চোখে গালে পড়া চুলগুলো কানের পিছনে নিতে-নিতে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে। হাসি তো নয় যেন গলার ফাঁসি। আমিও সেই ফাঁসির দড়ি গলায় পরে বাংলা নাটকের নায়ক অপূর্বের মতো সেই রিকশা তাকে ছেড়ে দিলাম।
রিকশা ছুটে চলেছে। আবার পিছন দিকে তাকিয়ে তার সেই হাসি। আর সেই হাসি আমার মনে লেগে গেলো এবং মনের সেই হাসি বাসায় পৌঁছাতেও বেশী সময় লাগলো না। বাসায়ও আমার জন্য অনেকদিন ধরে পাত্রী দেখে চলেছে; কিন্তু কোনোভাবেই আমার মনের মতো হচ্ছিল না। তাই বলা যায় আমার মুখে সেই সুহাসিনীর কথা শুনে বাসায় এক প্রকার হুলুস্থুলই শুরু হয়ে গেল।
জানা গেল মেয়েরও কারো সাথে রিলেশন বা অমন পছন্দের কেউ নেই। আমাকেও তার এবং তার ফ্যামিলির সেইরকম পছন্দ হয়েছে। তাই কয়েকদিনের মধ্যে সেইরকম ভাবেই আমাদের বিয়ে গেলো। বিয়ের পর আমাদের হানিমুন, সানিমুন, ফানিমুন সবই হলো। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ঘুরাঘুরি, আমাদের চুমাচুমি, ঝুলাঝুলিও হলো। কিন্তু তারপরেও বিয়ের প্রায় একবছরের মাথায় সে কেনো এভাবে আজকে পালিয়ে গেলো?
যাইহোক আমি এখন চিপস খাবো, আর পা চেগিয়ে ভুঁড়ি ভাসিয়ে শুইয়ে-শুইয়ে বার্সার খেলা দেখবো। আপনি মনে-মনে বলছেন কী স্বামীরে বাবা! বউটার একটা খোঁজও নিলো না। কোনো বিপদ-আপদও-তো হতে পারে। এখন আমিও বলবো— কী পাঠকরে বাবা! বউ পালিয়েছে শুনেই গল্পটা পড়ে ফেলল। একবার খোঁজও নিলো না, লোকটার তো বউ না-ও থাকতে পারে।