ছেলেটা আজ আমায় কেন জানি না ৫ টাকা বেশি দিতে চাইল।অন্যদিন হলে নিয়ে নিতাম।কিন্তু এ ছেলের কাছ থেকে নিতে পারিনি।ছেলেটা দেখতে যে আমার ছেলের মতো।আমার একটা মাত্র ছেলে বুয়েট থেকে পাস করে জাপানে পড়াশোনা করেছে,ওখানে বিয়ে করে রয়ে গেছে।গতবছর ওর মা মারা গেলেও ও আসেনি।আমার সাথে কথাই বলে না।হয়ত আমি রিক্সা চালায় তাই পরিচয় দিতে পারে না।
আমার ছেলেটা কিন্তু সোনার টুকরা ছিল,সারাদিন শুধু পড়াশুনা করেছে।আমি খেয়ে না খেয়ে ওকে পড়িয়েছি।ছেলে আমাকে ভুলে গেলেও আমি পারি না,আমার রিক্সাতে ওর বয়সী কেউ উঠলে আমার ছেলের গল্প শোনায়।কি মেধাবী ছিল! ভাবতেই গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে।
আমার গায়ে এখনো ঢের শক্তি,সংসারে মানুষ বলতে আমি একা।নিজের পেট নিজেই চালাতে পারি। তবে সেদিনও একটা লোকের কাছে ন্যায্য ভাড়া চাওয়ায় কি মারটাই না মারল,আমি দুইদিন রিক্সা চালাতে পারিনি।আচ্ছা,ন্যায্য ভাড়া না দিতে পারুক মারবে কেনো?
সেদিন আমার রিক্সায় একটা ছেলে আর একটা মেয়ে উঠেছিল।মেয়েটা ছেলেটাকে বলছিল,”এতো দামী গিফট দেওয়ার কি দরকার ছিল?” ছেলেটা বলল,”আমি কি গরীব নাকি যে কাউকে কিছু দেওয়ার সময় টাকার দিকে তাকাব!” ছেলেটা রিক্সা থেকে নেমে বলে নেওয়া ভাড়া থেকেও ১০ টাকা কম দিল। আমি অবাক হয়নি কিন্তু লজ্জা অনুভব করছিলাম।শিক্ষা আর সুশিক্ষা পার্থক্য হয়ত এটাই।আমি আর শিক্ষার কি বুঝি,আমি তো রিক্সাচালক।
আজ আমার বাজান,আমার কলিজার টুকরারে টিভিতে দেখলাম।খুব বড় চাকরি পেয়েছে।সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ওর সাফল্য এর পেছনে অবদান এর কথা জিজ্ঞাসা করলে ছেলে আমার উত্তর দিল,”আমার সাফল্যের পেছনে আমার মিসেস এর অবদান বেশি।তার জন্য আমি আজ এই পজিশনে।” সবাই কত্ত হাত তালি দিল।আমার ছেলে তো আমার কথা বলল না,কেনই বা বলবে আমি তো রিক্সা চালাই।