অচেনা অতিথি

অচেনা অতিথি

ঘুমের ওষুধগুলো এখানেই তো রেখেছিলো তিতির! কোথায় গেল! মাথা ঝিমঝিম করছে। নেশা হয়ে গেল নাকি! অবশ্য অল্প তো খায়নি আজ! আলনা থেকে একটা ওড়না তুলে নিল তিতির। বাইরে সব চুপচাপ! সব আলো নিভে গেছে।
খাটের উপর চেয়ার নিয়ে ওড়নাটা বাঁধলো তিতির। পা দু’টো টলমল করতে শুরু করেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারাবে বোধহয়! তার আগেই কাজটা করতে হবে! সারাজীবনের মতো ঘুমোবে তিতির। আঃ! কী শান্তি! চেয়ারের উপর চেপে ফাঁসটার মধ্যে গলা ঢোকালো তিতির। এক, দুই,…

টুংটাং টুংটাং!!!

কলিংবেল?
নেশা নেশা চোঝে ঘড়ির দিকে তাকালো তিতির। রাত দেড়টা! এত রাতে কে!?
ও নির্ঘাত ভুল শুনছে!

টুংটাং টুংটাং!!

আবার! সত্যিই তো! এত রাতে কে এল! তবে কি, উৎসব ফিরে এল! উৎসব! কথাটা মনে হতেই ফাঁস থেকে গলা বের করে লাফিয়ে চেয়ার থেকে নেমে পড়লো তিতির। কী ভুলটাই না করতে যাচ্ছিলো! উৎসব ঠিক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে! দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো তিতির।

এ কী! কেউ তো নেই! তবে কী ও ভুল শুনলো!

ঠিক যত তাড়াতাড়ি বাঁচার ইচ্ছেটা ফিরে এসেছিলো, তত তাড়াতাড়িই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছেটা ফিরে এল আবার! এত বোকা কেন ও! কী করে ভাবলো উৎসব ফিরে আসবে!

আনমনে ফ্ল্যাটের দরজাটা বন্ধ করতে যেতেই কিছু একটা হলো! কেউ একজন ঝড়ের বেগে ঢুকে পড়লো ঘরে। ঢাক্কা লেগে একদিকে পড়ে গেল তিতির।
চোখ বন্ধ অবস্থাতেই শুনতে পেল, যে এসেছে সে দরজা বন্ধ করলো দড়াম করে।

কোনোরকমে চোখ কচলে সামনে তাকালো তিতির। একটা মেয়ে, কত বড়? এখানে কেন?
তিতিরের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো -“শশশশশ…”

তিতির উঠতে যাচ্ছে দেখে হাত বাড়ালো মেয়েটি। ওর হাত ধরে উঠে বসলো তিতির।
ভালো করে খানিকক্ষণ দেখে শুকনো হাসি হেসে বললো-“আমি ভেবেছিলাম বোধহয় উৎসব ফিরে এল!”
-“উৎসব! তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে?”
-“হ্যাঁ! চলে গেল! কী বলবো আর! তা যাক! ইচ্ছে হয়েছে গেছে!”- হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললো তিতির।
-“তুমি মদ খাও?”- গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো মেয়েটি।
ভালো করে তাকালো তিতির। ওর চেয়ে বেশ খানিকটা বড়ই মনে হচ্ছে। গায়ের রঙ ফর্সা নয় খুব একটা। দেখতেও ভালো না। কেমন একটা কাঠকাঠ ব্যাপার সবটা মিলে! হাতগুলোও পেশীবহুল, শক্তপোক্ত; তিতিরের মতো নরমসরম না।
-“তুমি কে বলোতো? এত রাতে কী করে এলে?”- মাথা একটু একটু খুলছে তিতিরের।
সোফায় গিয়ে ভালো করে বসলো মেয়েটি। বেশ রিল্যাক্স হয়ে বললো-“আমি দিদি! নাম যা খুশি বলতে পারো! তবে আপাতত তোমার দিদি! বয়সে বড় তো! এই, তোমার ঘরে আর কেউ নেই তো?”
-“না!”
-“আহা! বেশ বেশ!”- সোফায় হেলান দিল মেয়েটি-“কী নরম গো সোফাটা!”
-“তুমি এত রাতে এখানে কেন?”
-“আজ ঘুমোও বুঝলে! আজ তুমি মদ খেয়ে আছো! কাল সকালে বলবো! আমাকে একটা ঘর দাও! এত ঘুম পাচ্ছে না! তোমার ঘর কোনটা? চলে যাও তুমি! ঘুমোও! সকালে নেশা কাটলে সব বলবো! আমাকে তোমার একটা ভালো কিছু পড়তে দেবে? শাড়িটা ছিঁড়ে…”- বলতে বলতে নিজেই ভেতরের ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করলো মেয়েটি।
তিতিরের চোখ তখনো ঝাপসা! তার মধ্যেই বললো-“এই! আমার ঘর! তুমি কেন…”

ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়িয়েছে মেয়েটি। ফ্যান থেকে ফাঁস লাগানো ওড়না! কয়েক মূহুর্ত শূণ্য চোখে সেদিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলে উঠলো ও-“আমি আসবো বলে কি তুমি এটা করে রেখেছো?”
হাঁ হাঁ করে দৌড়ে এল তিতির। খাটে বসে পড়তে পড়তে বললো-“একদম আমার খাটে আসবে না বলছি! ঘুমের ওষুধগুলো খুঁজে পাচ্ছি না!”
-“তুমি মরতে যাচ্ছিলে?”- একসঙ্গে বিস্ময়, দুঃখ, রাগ মিশে গলাটা ফেটে পড়লো তিতিরের সামনে। বিরাট একটা ধমক!

অবাক হয়ে তাকালো তিতির। ও ওকে বকছে কেন! এটুকুতেই কাজ হলো। ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললো তিতির। কাঁদতে কাঁদতে বললো-“উৎসব আমাকে ছেড়ে চলে গেছে! আমার বাড়িতে সবাই সব জানে জানো! সবাই মেনেও নিয়েছে! কতদিনের সম্পর্ক আমাদের! কতদিন! ছ’ বছর! সেই কলেজ থেকে প্রেম করছি আমরা!
আমি তো এখানে চাকরি করতামই না! শুধু ওর সাথে দেখা হবে না বলে একা একা এখানে পড়ে আছি! আর ও কী করলো! চলে গেল আমাকে ছেড়ে! ওই দুদিনের মিত্রা আমার থেকে কাছের হলো ওর! আমি বাড়িতে কী বলবো! ও কেন করলো এরকম! কেন আমার সাথেই…”- বলতে বলতে দুঃখে গলা বুজে এল তিতিরের।
-“তাই তুমি মরতে যাচ্ছিলে?”- ভীষণ অবাক হয়ে জানতে চাইলো মেয়েটি।
ওপরে নিচে ঘাড় দোলালো তিতির।

ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়লো মেয়েটি। হাসতে হাসতেই বললো-“তোমরা কী মনে করো মরাটা খুব সহজ? খুব সহজ? এত সহজ হলে আমি এখানে থাকতাম!”
-“তুমিও মরতে গেছিলে?কেন? কবে?”
-“কতবার! কতবার কতরকম করে মরতে চেয়েছি। মরবো বললেই কি মরা হয়! ভয় লাগে!”
চুপ করে শুনলো তিতির। মাথাটা ছাড়ছে বোধহয়। মেয়েটি শাড়ির নিচের দিকে তাকিয়ে বললো-
-“তোমাদের ফ্ল্যাটের পাঁচিল টপকাতে গিয়ে শাড়িটা ছিঁড়লো! ”
তাই তো! এতক্ষণ ভাবেনি তো এটা! মেয়েটা এল কোন পথে! কিন্তু ও শাড়ি পড়ে পাঁচিল… দৃশ্যটা ভাবতেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো তিতির। শাড়ি পড়ে পাঁচিল টপকানো! একটু পরে হাসি থামলে বললো-“আলমারিতে অনেক জামা আছে। সব তোমার! যাও! সব তোমাকে দিলাম!”
-“সব?”- অবাক হলো মেয়েটি!
-“সব!”
-“কাল সকালে ফেরত চাইবে না তো?”
-“না! সব তোমার!”

সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা গিয়ে আলমারি খুলে একটা চুড়িদার বের করে নিয়ে পাশের ঘর থেকে চেঞ্জ করে চলে এল।
-“ভালো লাগছে তো বেশ তোমাকে এটায়!”
-“থ্যাঙ্কস!”
হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল তিতিরের। ওর মরাটা হলো না।
-“ওঘরে যাও তুমি! আমি এবার ঘুমোবো!”
-“খুব চালাক না? আমি যাই আর তুমি টুক করে ঝুলে পড়ো!”
থতমত খেল তিতির। ও বুঝলো কী করে!
মেয়েটা ততক্ষণে উঠে ফ্যান থেকে ওড়না খুলে ফেলেছে।
-“তুমি আমাকে মরতে দেবে না?”- আবার কাঁদতে শুরু করলো তিতির।
-“না!”- ছোট্ট জবাব দিল মেয়েটি।-“শোনো, তোমার জন্য আমার নাম দীপা। বুঝলে? আমাকে দীপাদি বলবে। মরার সময় হলে আমি এসে বলে যাবো! এখন মরতে যেও না!”
-“কিন্তু, উৎসব আমাকে ছেড়ে…”
-“ওহ! সেই এক কথা! উৎসব উৎসব! ও কি তোমার জীবনটা বেঁচে দিচ্ছিলো যে ও চলে গেলে তোমাকে মরে যেতে হবে?”
ঘাবড়ে গেল তিতির। এ তো বেশ বকে!
-“আরে আমাকেও তো ছেড়ে চলে গেছিলো। আমি মরেছি?”
-“কে চলে গেছিলো তোমাকে ছেড়ে?”
তিতিরের পাশে বসলো দীপা। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো-“পলাশ! ওই যা হয় আর কী! প্রেম, ভালোবাসা! পালালাম বাড়ি থেকে! খুব মদ খেত ও! একদিন খুব মারধোর করে বেড়িয়ে গেল, আর এল না! পরে শুনেছিলাম পাশের বস্তিতেই কে একজন জুটেছে! আমি তখন ছেলেকে নিয়ে একা!”
-“ছেলে!”
-“হ্যাঁ! ছেলে! আমার ছেলে! ঘরে খাবার নেই তখন! ছোট ছেলে কেঁদে কেঁদে মরে! বাপের বাড়ির লোক নিজেরাই টানাটানি করে চালায়। তার উপর পালানোর পর থেকে কেউ আর খোঁজ নেয়নি! একদিন মনে হলো ছেলেটাকে শুদ্ধ মেরে নিজে মরে যাই! তা কী করে পারি বল! মা যে!”- একটু থামলো দীপা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো-“শেষে একদিন পথে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভিক্ষে! লোকে বললো-‘জোয়ান মেয়ে! খেটে খেতে পারো না!’ তা কাজ পেলামও শেষে একজনের বাড়িতে। ছেলেটাকেও খেতে পড়তে দিত ওরা। কিন্তু পারলাম না। ছেলেটাকে বাঁচানো গেল না শেষ পর্যন্ত! একদিন কখন একা একা খেলতে খেলতে গাড়ি চাপা গেল! বাবুরা যখন চিৎকার করে ডেকে আমাকে দেখাতে নিয়ে গেল, আমি দেখলাম, ছেলেটা সেই জন্মের সময়ের মতো রক্ত মেখে শুয়ে আছে রাস্তায়!”
শিউরে উঠলো তিতির। ও বলছে কী করে!
-“তোমার খুব কষ্ট হয়েছিলো না?”
-“তুই আর কী বুঝবি! সে কষ্ট যে না পেয়েছে সে বোঝে না, বুঝতে পারে না।”
-“তারপর?”
-“তারপর আর কী! জীবন থেমে থাকলো কিছুদিন। তারপর আবার আগের মতোই চলতে লাগলো! গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে দেখা হলো! তখন আমি একা থাকি! ওর সঙ্গে আবার ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলাম। আবার! বিয়ে করলাম! ও এই লাইনে ছিলো! ঢুকে গেলাম!”
-“কোন লাইন?”
হেসে তিতিরের দিকে তাকালো দীপা। -“যে লাইনই হোক! খারাপ কিছু করলে কি জামা ফেরত নিয়ে নিবি?”
-“না না! এমনি জানতে চাইলাম! বলো তুমি!”
-“তারপর আর কী! এদিক সেদিক! কত কী কাজ! আস্তে আস্তে বুঝলাম আমাকে কাজে লাগানো হচ্ছে! বৌ বলে মোটেও সম্মান নেই কোনো!”- হি হি করে হেসে উঠলো দীপা-“কী রে কেমন লাগছে? আমার জায়গায় থাকলে ক’বার মরতিস?”
ঢোঁক গিললো তিতির।
আস্তে আস্তে দীপার হাতের উপর হাত রেখে বললো-“তারপর?”
-“তারপর! আর কী! কয়েকবার ধরা পড়েছি! আবার এসব করেছি! আমাদের এসব হতেই থাকে! ধরপাকড়, মারধোর! তবু খাবার তো পেতাম, কাজ তো তেমন ছিলো না! সে যাক, এখন কিছুদিন বাসা বেঁধেছিলাম তোদের এই পাশের বস্তিতে! এখানে এসে বাঁধা পড়লাম রে! বড্ড মায়া পড়ে গেল ছেলেটার উপর!”
-“কে? কার ছেলে?”
-” কার আবার! ওর মায়ের ছেলে! আমার মতোই! বাবা নেই! মা’টা একা একা মানুষ করে! আহারে! ছেলেটা ভালো করে খেতেও পায় না! কী যে কষ্ট হতো! তার উপর বাঁধিয়েছে বড়লোকের অসুখ!”
-“কী?”
-“থ্যালাসেমিয়া! কত টাকা লাগে! ওইসব কোত্থেকে কোত্থেকে স্বেচ্ছাসেবী দল ডাক্তার দেখায় ওকে। কিন্তু তাতে আর কী হয় বল! রোজকার খাওয়া, ওষুধ! আমি তখন ভাবলাম, এমনিও মরবো , অমনিও মরবো! বরং কাউকে বাঁচিয়ে মরাই ভালো! কী বল?”
নেশাটা কেটেছে মনে হচ্ছে। মাথা নেড়ে তিতির বললো-“কী করলে তুমি?”
-“আমি! কী আর! এতদিন যা করেছি তাই! চুরি করলাম! দিলাম ওকে! কিন্তু দলের কাছে কি লুকোনো থাকে! সেই ধরা পড়লাম! পালাতে গিয়ে এসে পড়লাম তোর ঘরে!”
-“ও! তোমার দল কোথায় এখন? তোমাকে দেখতে পায়নি?”
আবার হেসে উঠলো দীপা। বললো-“পেছনেই ছিলো! লুকিয়ে লুকিয়ে চলে এসেছি। আমাকে ধরা কি অতই সোজা!”
-“তোমরা চোর?”
-“মমম…বলতে পারিস! আমরা বড়সড় চোর! সে ছাড়! বল আমার গল্প কেমন লাগলো?”
-“তোমার বরও তোমাকে খুঁজছে? ”
-“খুঁজছে মানে! পেলে খুন করে ফেলবে!”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো তিতির। বললো-“তুমি আমার কাছে থাকবে দীপাদি?”
মায়াভরা চোখে তিতিরের দিকে তাকালো দীপা। -“তুই আমাকে থাকতে বলছিস? আমাকে পুলিশ খুঁজছে, চোরের দল খুঁজছে! তারপরও থাকতে দিবি আমাকে?”
-“হ্যাঁ! তুমি থাকো! সবাই জানে না তুমি কত ভালো!”
-“ভালো!”-এই প্রথম চোখে জল এল দীপার-“ভালো! কতদিন পর বললো কেউ! ”
-“তুমি সত্যি ভালো দীপাদি! কজন পারে তোমার মতো জীবন বাজি রেখে অন্যের ভালো করতে!”
-“তুই আমার একটা কথা শুনবি?”
-“বলো!”
-“কক্ষণো মরবি না! মরাটা যত কঠিন, ততটাই সহজ! বাঁচাটাই হলো আসল! মরাতে ভয় আর কষ্ট ছাড়া কিচ্ছু নেই। বাঁচলে অনেককিছু পাবি জীবনে। দেখ তো, আমি যদি না বেঁচে থাকতাম তোর মতো বোন পেতাম?”
হাসলো তিতির। ঘাড় নেড়ে বললো-“প্রমিস! আর কক্ষণো মরার কথা ভাববো না!”
-“যা এবার! ঘুমো! একে মদ খেয়েছিলি! রাত শেষ হতে চললো! যা ঘুমো!”
-“তুমি?”
-“আমিও ঘুমোবো! খুব ক্লান্ত আমি!”

যাবার ইচ্ছে ছিলো না তিতিরের। দীপাদির কাছে বসে আরো গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে। তবু উঠে চলে গেল ও। পাশের ঘরে গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো খাটে। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো বুঝতেই পারলো না ও!

.
কত রোদ! তড়বড় করে উঠে বসলো তিতির। ইস! কত বেলা হয়ে গেছে! আজ আর অফিস যাওয়া হবে না! কাল রাতে ড্রিঙ্ক করেছিলো ও। কেমন যেন অনেক কথা…হ্যাঁ হ্যাঁ…মনে পড়েছে। দীপাদি! প্রায় লাফিয়ে নেমে দৌড়ে পাশের ঘরে এল তিতির। ফাঁকা ঘর। কেউ কোত্থাও নেই!
-“দীপাদি!”- জোরে চেঁচিয়ে ডাকলো তিতির।
সাড়া নেই। এঘর, ওঘর, বাথরুম, কিচেন- কোত্থাও নেই!
চলে গেছে দীপাদি! ইস! কাল যদি আর একটু জ্ঞান থাকতো ওর! অন্তত দলটার ব্যাপারে কিছু জানা থাকলে পুলিশকে জানানো যেত!

স্নান করে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বসলো তিতির। উৎসব আর ফিরবে না! ভালো কথা! যে যায় তাকে চলে যেতে দিতে হয়! ভাবতে ভাবতে টিভিটা চালালো তিতির। আনমনে চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে একজায়গায় এসে হাত থেমে গেল তিতিরের। মুখটা ঝাপসা করে দিয়েছে! মাথায় গুলি মেরেছে। কিন্তু জামাটা! ওটা তো তিতিরের জামা!
সাংবাদিক তখন এক্সক্লুসিভ খবর বলে চলেছে-” শেষ রাতে দলের লোকের হাতেই খুন হয়েছে ময়না ওরফে চামেলী ওরফে দীপা! পুলিশ অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে দলের একজনকে ধরেও ফেলেছে। সে স্বীকার করেছে ময়নাকে মারার ঘটনা। সে নাকি চুরির টাকা একাই নিয়ে পালাতে চেয়েছিলো! টাকা উদ্ধার করা যায়নি এখনো! বাকিদের খোঁজ…”

আর মাথায় ঢুকছে না কিছু! থরথর করে কাঁপছে তিতির। কয়েক ঘণ্টা আগে যে এখানে বসে কথা বলছিলো, সে এখন ডেডবডি! কেন থাকলো না দীপাদি! দুহাতে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে ধরা গলায় তিতির বলে উঠলো-“ভালো থেকো দীপাদি! ভালো থেকো!”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত