– ওই মাইয়া, চোখ দুইটা কি ভ্যানিটিব্যাগে নিয়া ঘুরো?
– স্যরি, আমি খেয়াল করিনি।
– খেয়াল সব মোবাইলের ভিতরে থাকলে রাস্তার মাঝখানে এমনে বেসামালের মত ধাক্কা খাওয়া তো স্বাভাবিক।
– আমি কিন্তু স্যরি বলেছি।
– কিসের জন্য? রাস্তায় হাঁটার সময় মোবাইল টিপাটিপি করার জন্য নাকি সুন্দর পোলা দেইখা ইচ্ছা কইরা ধাক্কা খাওয়ার জন্য?
– এক্সকিউজ মি, আপনার মনে হচ্ছে আমি ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়েছি? তাছাড়া নিজেকে আপনার সুন্দর বলে মনে হয়?
– মনে হয় মানে কি! আমি গ্যারান্টি দিতে পারবো এই ধাক্কা দেয়ার ব্যাপারে। এরপর আসি পরের প্রশ্নে, আমারে কি তোমার সুন্দর লাগে না?
– সুন্দর অসুন্দর বিচার করার জন্য আগে চোখে পড়ার দরকার হয়। আপনাকে তো আমার চোখেই পড়ে নি। মেয়েটি আর কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে নিচ্ছিলো কিন্তু ছেলেটি পিছু ডেকে তাকে থামালো।
– এই মাইয়া, শুনো।
– কি?
– এই এলাকায় থাকতে হইলে ভদ্র হইয়া থাকতে হবে। অভদ্রতা আমার এলাকায় চলবে না, বুঝলা?
– আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে।
– এত কিসের তাড়া? পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে নাকি?
– অদ্ভুত তো! অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? ছেলেটি ডান হাতের একটা আঙুল দিয়ে গাল চুলকে মুচকি হাসলো।
– প্রতিদিন বিকালে যারে একনজর দেখার জন্য তার বাসার সামনে গিয়া উপরে তাকাইয়া দাঁড়াইয়া থাকতে থাকতে ঘাড়ে ব্যথা ধইরা যায়, তার ফ্যামিলির কেউ আমার অপরিচিত ক্যামনে হয়? ভ্রু কুঁচকে ফেললো মেয়েটি।
– মানে?
– তোমার ছোটবোনটা আমারে খুব ভালো পায়।
– কি?
– জ্বী।
– অসম্ভব।
– অবশ্যই সম্ভব। যাই হোক, কাজের কথায় আসি। তোমাদের নামে নালিশ আছে, তোমাদের কাজের বুয়া বারান্দা দিয়া নিচে ময়লা ফেলে। এই কাজ করতে তারে নিষেধ করবা।
– পারবো না।
– ঠিক আছে। আমারে তাইলে তোমাদের বাড়িওয়ালার কাছে যাইতে হবে।
– আমরা তাহলে পুলিশের কাছে যাবো।
– লাভ নাই। তোমার বোন ঠিকই একটা না একটা ব্যবস্থা কইরা আমারে ছাড়াইয়া নিয়া আসবে। শুনছি, তার কোন বান্ধবীর বড় ভাই নাকি এডভোকেট।
– আপনি পড়াশুনা জানেন?
– জানতেছি এখনো, জগন্নাথে ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টে আছি।
– ও। দেখেশুনে তো বুঝার উপায় নেই। যাই হোক, সরে দাঁড়ান। যাবো আমি। মেয়েটি কিছুদূর চলে যাওয়ার পর ছেলেটি পেছন থেকে গলা উঁচিয়ে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– যাওয়ার আগে আরেকটা কথা শুইনা যাও। তোমার বোন আমারে তার দুলাভাই হিসাবে খুব ভালো পায়। দু’দিন পর…
– এইযে শুনুন। ছেলেটি সিগারেটে টান দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে মেয়েটিকে,
– কি? পুলিশের ভয় দেখাইতে আসছো?
– না। ভয় ভাঙাতে এসেছি। ছেলেটি মাথা চুলকে স্বভাবসুলভ হাসি দেয়।
– আইসক্রিম খাবা?
– উঁহুম, না।
– আসি তাইলে।
– আরে শুনুন, আমি আইসক্রিম খেতে আপত্তি জানিয়েছি, ফুচকা খেতে না।
– চলো তাইলে?
– চলুন তবে বুঝেশুনে ফুচকাওয়ালা সিলেক্ট করবেন কারণ ফুচকার টকের টেস্টের উপর ডিপেন্ড করবে বাকিটা জীবন আমাদের কতটা মিষ্টি যাবে।