আপনি যদি আপনার বাসার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দেন, তাহলে আমি আপনাকে আমার ফোন নাম্বার দেবো।
টেবিলে বসে পড়ছিলাম। হঠাৎ এমন ই একটুকরো কথা আমার কানে প্রবেশ করে। আর কথাখানা মুহুর্তে আমার সব মনযোগ কাঁড়তে সক্ষম হলো।তখন আমি পড়ছিলাম হিটলারের জন্ম অস্টিয়া। আর কথাটা শোনার পর সেটা হয়ে গেলো হিটলারের জন্ম অস্ট্রেলিয়া। এবার সেই কথার রিপ্লাই আসলো আমার মাথার উপর থেকে মানে আমাদের বাসার উপর তলা থেকে। একটা ছেলে কন্ঠস্বর বলে উঠলো সত্যি ই তো?
আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমার আকাশ ছুঁয়া কৌতুহল এবার জানালার পাশে আমাকে আছড়েই ফেললো। চুরা বিড়ালের মত আস্তে করে পর্দার আড়াল থেকে দেখলাম আমাদের ঠিক পাশের বাসার ছাদে একটা মেয়ে। আমাদের বাসা তিন তালা আর পাশের টা দুতালা। মেয়েটার তিন তালার জানালার দিকে মুখ করে আছে। সে ছেলেটার কথার উত্তর দিলো.. হ্যা অবশ্যই।(আমি তখন একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলাম.. মেয়েটা কমার্সের ছাত্রী। নয়তো এত ভাল বিজনেস বুঝতো না।) মেয়েটা আরো বললো.. আসলে বাপি আমাদের ওয়াইফাই লাইনটা কেটে দিয়েছে। ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো কেন? মেয়েটা করুণ মুখে বললো.. সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা তো তাই। কিন্তু ওয়াইফাই ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো? মেয়েটার কথা শোনে নিজের দুঃখের কথা মনে পড়ে গেলো।আমিও ওয়াইফাই ছাড়া থাকতে পারি না। সারাক্ষণ নেটে থাকি।
নেটে থাকি মানে প্রেম টেম করি এটা আবার ভেবে বসবেন না যেন। আমি একটু ফরেন ড্রামা লাভার তো তাই সারাক্ষণ কোরিয়ান, চাইনিজ,জাপানিজ,ফিলিপাইন এসর দেশের ড্রামা দেখি। এদের হিরো গুলো এত্তো সুন্দর যে বাংলাদেশের ছেলেদের আজুস্যি(কোরিয়ান ভাষা) লাগে। কিন্তু গত মাসে নতুন বাসায় আসার পর আমার সামনে পরীক্ষার কথা বলে ভাইয়া এখনো ওয়াইফাই কানেক্ট করে নি।আমিও ওয়াইফাইয়ের দুঃখে দুঃখিত,ওয়াইফাইয়ের কষ্টে কষ্টিত। যাকগে এবার আসল কাহিনীতে আসি। ছেলেটা বললো আরে তুমি এত মন খারাপ করো না। তুমি কাল সকালে আমাদের মেইল বক্সে তোমার নাম্বার রেখে একটা খাম থাকবে ওটা নিয়ে যেও।(এবার বুঝলাম ছেলেটাও কমার্সের
ই)। আমি ঐ খামে ওয়াইফাই নাম আর পাসওয়ার্ড রাখবো।
মেয়েটা হাসি মুখে বললো আচ্ছা। আমি ভাবলাম.. আহা পরশু থেকে মেয়েটার পরীক্ষা শুরু আর কাল থেকে নেট প্লাস প্রেম দুইটাই শুরু করবে মেয়েটা? আমার মাথা জনসেবা/আত্মসেবা করার দুষ্ট চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। তাই বসে একটা খাম বানিয়ে নিলাম। খাম বানানো সহ আরো টুকিটাকি বিষয়ে আমার স্পেশাল টেলেন্ট আছে। খামের ভেতর কার নাম্বার দেয়া যায় ভেবে কন্টাক্ট লিস্ট বের করলাম। একজনের নাম্বার নো রিসিভ লিখে সেইভ করা দেখলাম। এটা কে, আর কখন সেইভ করেছি মনে নেই। তাই ঐ নাম্বার টা দিয়ে দিলাম। এখন সকালে ঠিকমত একটা অভিযান চালাতে পারলেই হলো। পরের দিন খুব সকালে উঠে আস্তে আস্তে মেইল বক্সের সামনে গেলাম। কেউ আছে কিনা দেখে নিয়ে চট করে মেইল বক্স খুলে ভেতরে যা আছে হাতের মুঠোয় পুরে আমার খামটা রেখে দিলাম।
জলদি আমার রুমে এসে হাতের মুঠো খোলে দেখি দুইটা খাম।একটা সাদা আর একটা দাড়োয়ান কালারের খাম। মানে দাড়োয়ান রা যে কালারের পোশাক পড়ে ঐ কালার। মনে মনে বললাম… হায় হায় কার খাম আনলাম আমি? কারো ব্যক্তি গত জিনিস নিয়ে আসি নি তো? এখন কি হবে? কি করি? ভেবে খামগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলাম। কোনটার উপরেই কিছু লেখা নেই। কোন টার ভেতরে যে পাসওয়ার্ড আছে জানি না। আবার রাক্ষুসে কৌতুহলের কাছে পরাজিত হলাম। প্রথমে সাদা রঙের খাম টা খোললাম। তাতে লেখা..ঠিক ১০ টায় খেয়ে ফেলবো। আমি তো অবাক। কে কি খাচ্ছে? কাকে কে জানাচ্ছে? এরপর ২য় খামটা খোলে দেখি প্রতাশিত নাম আর পাসওয়ার্ড।
মোবাইলে কানেক্ট দিতেই কানেকশন পেয়ে গেলো। আমি তো মহাখুশি। মনে মনে ভাবলাম.. খাম খোলে যদি পাসওয়ার্ড পাওয়া যায় তো সকল খাম খোলে নেয়াই ভাল। গত দুই দিন ধরে জানি না কার কেমন দিন কাটছে? কে কি খাচ্ছে? কে ফোন রিসিভ করছে? আমি শুধু জানি আমার উপর তলার ওয়াইফাই নাম Haramjada303. আর সেটার পাসওয়ার্ড হলো Dure*Thak420.