বাজারে যাচ্ছেন?
– হুম।
– নিন,ধরুন।
– কি এটা?
– বাজারের লিস্ট।
– আপনার বাসার বাজার আমি কেন করতে যাবো?
– কারণ আমি আপনার প্রতিবেশী তাই। তাছাড়া আব্বু কিছুদিনের জন্য ঢাকার বাইরে গেছেন।
– তো?
– তো মানে? প্রতিবেশীর দেখাশোনা করা আপনার দায়িত্ব না?
– প্রতিবেশী যদি প্রতিবেশীর জায়গায় থাকে তাহলেই দায়িত্বের কথা আসে। কিন্তু আমার প্রতিবেশী তো প্রতিবেশী না,যেন গলার ফাঁসি!
– দেখুন,এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
– ওহ্,বাড়াবাড়ি বলে যে কিছু আছে,আপনি এটা বুঝেন তাহলে?
– আপনি সবসময় আমার সাথে এভাবে কথা বলেন কেন?
– আপনার সাথে আপনার মত করে কথা বলতে হলে আমাকে জেন্ডার চেঞ্জ করতে হবে। করবো?
– অনেক হয়েছে। লিস্টটা ধরুন আর তাড়াতাড়ি বাজার করে নিয়ে আসুন।
– পারবো না।
– ঠিক আছে,আমিও তাহলে আর পেটের ভেতর কথা চেপে রাখতে পারবো না।
– মানে?
– মানে খুব সোজা।
অফিস থেকে এসে বাসায় না গিয়ে,ছাদে বসে বসে যে একটার পর একটা সিগারেট টানা হয়,এই খবরটা এখন আমার পেট থেকে আন্টির কানে পৌঁছে দেয়ার সময় এসেছে। এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।
– বাজারের লিস্টটা দিন।
– নিন।
– আচ্ছা আমি থাকি দোতলায় আর আপনি থাকেন চারতলায়। আপনি কিভাবে আমার এত খোঁজখবর রাখেন? আল্লাহ্র ২৬টা দিন, অফিসে যাওয়ার সময় উপরে তাকালেই আপনাকে দেখি,ফেরার সময়ও,বাকি ৪ দিন বাজারে যাওয়া-আসার সময়। এমনকি হুটহাট কোথাও বের হলেও আপনার নজরদারি মিস নাই। কিভাবে সম্ভব? আপনি কি সারাদিন বারান্দাতেই থাকেন,ঘরে যান না?
– উঁহু,আগের যুগে যেমন প্রেমপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যম “চিঠি” ছিল। ঠিক তেমনি এই যুগে প্রেমনজর আদান-প্রদানের মাধ্যম “বারান্দা”। বাই দ্যা ওয়ে,গেট থেকে বের হলেই আমার বারান্দার দিকে আপনার তাকাতে হয় কেন?
– সাবধান হওয়ার জন্য। আপনার মাথায় তো কুবুদ্ধির শেষ নেই। দেখা গেল হুটহাট ঠাস করে ময়লার পলিথিনটা আমার মাথার উপর ফেলে দিলেন।
– ধ্যাত,ফেলতে হলে ময়লার পলিথিন কেন! আমার ভাগ্নির নষ্ট হয়ে যাওয়া প্যাম্পারস ফেলবো।
– ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল।
– জানি। আচ্ছা শুনুন, আজ বিকেলে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে ছাদে আসবো।
– কিন্তু আমি আজ সিগারেট টানতেও ছাদে যাবো না।
– আরে চলে যাচ্ছেন যে! শুনে তো যান একবার! ছেলেটি বাজার নিয়ে আসার পর…
– এই ধরুন আপনার বাজার। আজকেই লাস্ট। আর যদি কখনো ব্ল্যাকমেইল করে কামলা খাটানোর চেষ্টা করবেন,তাহলে ফিডব্যাকটাও কামলার মতনই পাবেন।
মেয়েটি প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে বাজার গুছাতে গিয়ে বাজারের ব্যাগে বাজারের সাথে একটা শপিং ব্যাগ আর একটা চিরকুট পেল। শপিং ব্যাগে ছিল- একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি,দু’ডজন কাঁচের চুড়ি আর একটা টিপের পাতা। আর চিরকুটে লেখা ছিল- “পার্মানেন্ট কামলা হতে চাই। সিট খালি আছে তো? না থাকলেও সমস্যা নেই,নিজের জায়গা দখল করে নিতে আমি জানি। স্কুলে ফার্স্ট বেঞ্চের সিটটা সবসময় আমার দখলেই থাকতো।”