জান্নাত

জান্নাত

কিছুদিন ধরে বাসায় আজব এক ঘটনা ঘটছে। বাসার সব বাড়তি খাবার চুরি হয়ে যাচ্ছে। বিষয় টা আম্মু প্রথমে খেয়াল করলে ও কিছু বলেনি। কিন্ত প্রতিদিন এমন হচ্ছে। আমাদের বাসায় কাজ করে রহিমা খালা তাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসা করা হলেও আশানুরূপ কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। সেদিন তো আম্মুর আলমারি থেকে ১০ টা পুরনো কাপড় চুরি হয়ে গিয়েছে। বিষয় টা আস্তে আস্তে কেমন যেনো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। বাসায় আমি, আম্মু আব্বু আর ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ থাকে না। তাই কাউকে সন্দেহ ও করা যাচ্ছে না।

আমার ছোট ভাইটা দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। আম্মুর ভাষায় একদমই সামাজিক না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একদমই এক্টিভ না। দিনে ১০ বার ছবি আপলোড দেয় না৷ আম্মু এই নিয়ে আন্টি দের সামনে মুখ দেখাতে পারে না। আজকাল একা একা থাকতে পছন্দ করে।

সেদিন আমি কলেজ থেকে বাসায় আসার সময় দেখি ও হেটে হেটে বাসায় ফিরছে৷ কিন্তু আব্বুর কাছে থেকে ও তো প্রতিদিনই হাত খরচ এর টাকা নেয়৷ তাহলে ও টাকা দিয়ে কি করে। রেস্টুরেন্ট এ খেতে গেলে দেখা যায় ও নিজের খাবার এর প্রতি খেয়াল না করে অন্য টেবিলে মানুষ এর রেখে যাওয়া খাবার এর দিকে তাকিয়ে আছে। আর আস্তে করে ওয়েটার কে যেনো কি বলে আসে।

এই ব্যাপার গুলো কেউ খেয়াল না করলে ও আমি করি। বাসায় আজকাল প্রায় সব খাবারই নাই হয়ে যায়, জামাকাপড় ও। কে এমন করে আমাকে সেটা জানতেই হবে। বুদ্ধি করলাম একদিন বাসায় এমন ভাবে লুকিয়ে থাকবো যাতে আমাকে কেউ না দেখতে পায়। কিন্ত আমি যানো সবাইকে দেখতে পাই। যেই ভাবা সেই কাজ করলাম, অনেক ক্ষন লুকিয়ে থাকার পর আম্মুকে রুমে যেতে দেখলাম, আর এইদিকে আমার ছোট ভাই আস্তে আস্তে করে এসে বড় বড় টিফিনবাক্স করে খাবার বাড়তে লাগলো আর আস্তে করে বাসা থেকে বের হলো।

আমি ও ওর পিছু নিলান। অনেক দূর হাটার পর দেখলাম ১০/১২ টা বাচ্চা ওকে ঘিরে ধরলো। আর সবাই বলতে লাগলো ভাইয়া আমাদের খুব ক্ষুধা লেগেছে, এতোক্ষন আসেন নাই কেনো। আমার ভাই বাচ্চা গুলোর মাথায় হাত রেখে বলল তোমাদের ছাড়া আমি ও খেতে পারি না। আমার ভাই সব গুলো বাচ্চাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। আমি ওকে এতো খুশি হতে কখনো দেখিনি৷ আমার চোখে পানি চলে এসেছে যে আমার ছোট ভাইটা এতো বড় হলো কবে। এতো গুলো বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছে৷ এতিম বাচ্চাদের জন্য এতো কিছু করছে৷ নিজে এতো রাস্তা হাটে শুধু ওই টাকা গুলো দিয়ে এই বাচ্চাদের জন্য কিছু করতে।

আমি আস্তে আস্তে করে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। ও আমাকে দেখে চমকে গেলো। আর বলল, আপু আমি আমি ওকে কিছু বলতেই দিলাম না৷ ওর কান টা ধরে বললাম এতো বড় হয়ে গিয়েছিস যে আমার কাছে কথা লুকাতে হয়। এতো গুলো জীবন্ত জান্নাত কে নিজে কাছেই রাখবি, আমাকে কিছু করতেও দিবি না ওদের জন্য৷ আমার ভাই সেদিন আমাকে ধরে হাউমাউ করে কেদেছিলো।

আমি এখন ৪/৫ টা টিউশনি করি, আমার ভাইটাও করে। আব্বুর দেওয়া হাত খরচ এর টাকা আর আম্মুর রান্না খাবার এ আমাদের জান্নাত গুলোর খুব ভালো ভাবেই চলে যায়। বাচ্চা গুলো এখন আর রাস্তার ভিক্ষা করে না৷ সবাই দল বেধে স্কুলে যায়৷ ওদের থাকার যায়গা হয়েছে৷ ওদের জন্য অনেক কিছু না করতে পারলেও অল্পতেই ওদের ভুবন ভুলানো হাসি টা যে দেখতে পাই এতেই অনেক৷

আম্মু এখন আর আন্টিদের সামনে আমার ভাইকে নিয়ে লজ্জা পায় না, মাথা উঁচু করে বলতে পারে আমার ছেলে মেয়ে সত্যিকারের সামাজিক। সবাইকে শুধু এই কথাটাই বলতে চাই যে আপনি নিজে বদলান তাহলে সমাজ বদলাবে, সমাজ বদলালে দেশ বদলাবে, দেশ বদলালে পুরো পৃথিবী বদলাবে৷ সবাই ভালো কিছু করার চেস্টা করি। আসসালামু আলাইকুম।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত