জিহাদ

জিহাদ

“উফফ এই মেয়েটাকে যদি একটি বারের জন্য পাইতাম। আহারে জীবন, না জানি কার কপালে আছে এই মেয়ে” সেদিন কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে গলির মুখের চায়ের দোকানে এক ছেলেকে তার সাথে থাকা অন্য ছেলের কাধে হাত রেখে ওপর দিকে চলে যাওয়া এক মেয়েকে উদ্দেশ্য করে শব্দ করে কথা গুলো বলতে শুনে থেমে গেলাম। আমার খুব করে রাগ হচ্ছিলো তখন।ইচ্ছে হচ্ছিলো গিয়ে কষিয়ে ছেলেগুলোর গায়ে কয়েকটা বসিয়ে দেই।কিন্ত নিজের রাগ কন্ট্রোল করে সেদিনের মতো আমি সেখান থেকে চলে গেলাম।

দেশে ধর্ষণের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।এখানে সেখানে পুরুষ লোলুপ দৃষ্টিতে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সাহসের সঞ্চার করে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়া শুরু করেছে।অন্ধকারের মধ্যে হুট করেই মেয়েদের হাত মুখ চেপে ধরে ঝোপঝাড়ে নিয়ে তারা নরপিশাচের মতো নারী মাংস ভোগ করা শুরু করেছে।তাদের কাছে এখন নারী কোনো মানুষ নয়,শুধুই যৌন চাহিদা মেটানোর বস্তু মাত্র। এ বিষয় নিয়ে আমাদের পাড়ায় একটা যুব সংঘ গড়ে তোলা হয়েছে।যে বা যারা এরুপ কাজ করে বা মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করে তাদের বিচারের আওতায় এবং রাতের বেলা মেয়েদের যথাযথ ভাবে নিরাপত্তা যথাসম্ভব কাজ করবে এ সংঘ।

বন্ধু আরিফ ফোন দিয়ে এ সংঘ নিয়ে বলায় সন্ধার দিকে আলোচনা সভায় গিয়ে আমি ও উপস্থিত হলাম।সেখানে সেদিনের সেই ভাই দুটোকে ও দেখতে পেলাম।আমার খুব অবাক লাগলো,যে নিজেই এরকম করে সে এসেছে মেয়েদের রক্ষা করতে।তবে একদিক থেকে ভালো হলো এখন আর সে এরকম করবে না। বিষয়টা এমন হলো, “চোরের কাছে বাড়ি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হলো”সভায় আমাদের এলাকার বড় ভাই এবং অন্যান্য লোকেরা নিজেদের প্রস্তাব এবং পরামর্শ দিলেন।পরবর্তী তে আমরা সবাই একে অপরের সাথে টুকটাক পরিচিত হয়ে নিলাম।

সেদিন আম্মুর অসুস্থতার কারণে আব্বু আম্মুকে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলো।সন্ধ্যার দিকে আমার প্রচন্ড রকম মাথা ব্যাথা শুরু হলো।বাধ্য হয়ে বাসার নিচের টং এ গিয়ে চা খেতে বসলাম।সেখানে দেখলাম শফিক ভাই।হ্যাঁ সেদিনের সেই ছেলেটার নাম শফিক। শফিক ভাই আমাকে এতো দিন পর ও ঠিকই মনে রেখেছে।

“আরেহ্,তুমি রাজ না সেদিন সভায় যে দেখা হলো?”

“জ্বি ভাই”

“চিনতে পেরেছো আমাকে!আমি শফিক”

“হ্যাঁ ভাই,চিনতে পেরেছি।কেমন আছেন?”

“আমি ভালো তোমার কি অবস্থা? পড়াশোনা ঠিক মতো চলছে তো?”

“জ্বি ভাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো” আমি একটা চায়ের অর্ডার দিলাম।শফিক ভাই আগে থেকেই চা খাচ্ছিলেন। আমার চা যখন অর্ধেকে নেমে এসেছে তখন শফিক ভাই বলে উঠলেন, “এই শালাদের বিরুদ্ধে যদি সকল মুসলমান জিহাদে নেমে যেতো তাহলেই এরা ঠিক হতো।দেশের আইনের হাত থেকে রেহাই পেলে জিহাদি দের হাত থেকে এরা রেহাই পেতো না”

রফিক ভাই কি বিষয়ে বলছে সেটা নিয়ে আমার বেশ কৌতুহল হলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে ভাই?”  “আরেহ্ আর বইলো না।এই দেখো গাজীপুরে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে।এদের বিরুদ্ধে জিহাদে নামতেই হবে” শফিক ভাইয়ের জিহাদি মনোভাব দেখে আমি খুব বেশি অবাক হলাম। চায়ের কাপে আরেক চুমুক দিয়ে বললাম, “ভাইজান তাদের বিরদ্ধে জিহাদ করার আগে আমাদের উচিৎ নিজেদের সাথে জিহাদ করা”

জাহিদ ভাই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন, “কি বলছো এসব?নিজের সাথে আবার কেমন জিহাদ! ” “হ্যাঁ ভাই আমি ঠিকই বলেছি। জিহাদ করলেই আমরা জান্নাত পাবো না। আমাদের উচিৎ আগে নিজের সাথে জিহাদ করা। নিজের সাথে জিহাদ হলো সবচেয়ে বড় জিহাদ” জাহিদ ভাই মনোযোগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।”একটু খোলাসা করে বলো!”

“আমাদের উচিৎ আমাদের নাফসের সাথে প্রথমে জিহাদ করা।নিজেকে সকল প্রকার খারাপ, অশালীন এবং ইসলাম বহির্ভূত কাজ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। ধরেন ভাই, আজকে থার্টি ফার্স্ট নাইট।আমার এক বন্ধু পার্টির আয়োজন করেছে। সেখানে বিদেশি নানা পানীয় এর ব্যবস্থা ও রেখেছে।আমার হাজারো ইচ্ছে সত্ত্বেও তখন উচিৎ নিজেকে দমিয়ে রাখা।আল্লাহ তায়ালা এবং নবীর উপদেশ মেনে চলা।

কিংবা মনে করেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠান। সেখানে অনেক গান বাজনা হচ্ছে।কাজিনেরা জোরাজোরি করছে গানের সাথে তাল মিলিয়ে সবাইকে একটা নৃত্য উপহার দিতে।আমার কাছে মনে হচ্ছে এখানে কেউ ই একটু ও নাচ গান পারে না।আমি নিজেও না পারলে মোটামুটি ভাবে চেষ্টা করে বেশ কয়েকটি সুন্দরী মেয়েকে মোহিত করতে পারবো।
কিন্ত না তখন আমাকে জিহাদ করতে হবে।আমার তখন স্মরণে রাখতে হবে, ” গান হচ্ছে অন্তরের মদ! ” (ইবনে তাইমিয়া [রহ.]মাজমু’আল ফাতাওয়া ১০/৪১৭)

অথবা ধরুন খুবই সুদর্শন কোনো নারী আপনার সামনে।যার শারীরিক গড়ন আপনাকে খুব বেশি আকৃষ্ট করছে।তখন জিহাদ করতে হবে।নিজের মনের সাথে জিহাদ করতে হবে।মেয়েটিকে নিয়ে কোনো যৌন আকাঙ্খা করা যাবে না,তাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না,তাকে পাওয়া বা না পাওয়ার আফসোস করা যাবে না।নিজের সাথে জিহাদ করে নিজেকে সংযত রাখতে হবে।এটাই হবে সবচেয়ে বড় জিহাদ। ” শফিক ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।ভাইয়ের বোধহয় আমার শেষের উদাহরণ খুব একটা পছন্দ হলো না।মানিব্যাগ থেকে বিশ টাকার একটা নোট বের করে বাকি টাকা না নিয়েই উঠে হন হন করে চলে গেলেন।

আমার চা টা ততক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। তারপর চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললাম, “হে আল্লাহ তুমি আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করো”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত