অভিশপ্ত জীবন

অভিশপ্ত জীবন

বাসের পাশের সিটে বসা লোকটা সামিয়ার পাশে ঘেঁষতেই সামিয়া ওর গলায় ঝুলানো প্ল্যাকার্ড টা দেখিয়ে দিলো। এতে স্পষ্ট বাংলায় লেখা ” আমি কুষ্ঠ রোগী”। লোকটা তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেলো। বুক থেকে একটা বড় নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেলো সামিয়ার। বাকি রাস্তা য় আরো অনেকে বসছে কিন্তু কেউ ই সামিয়ার দিকে এত মনোযোগী ছিলো না তাই তার প্ল্যাকার্ড টা ও দেখতে পায় নি। খুব ভালো লাগছে সামিয়ার সেই সাথে তীব্র কষ্ট ও। মেয়ে হওয়ার কষ্ট। বাসে করে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই পাশে বসা লোকটা সে তরুণ যুবক বা বৃদ্ধ যে বয়সের ই হোক না কেনো তার লোভাতুর দৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে রেখে চলাটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো দিন কে দিন।

কত ভাবে পাশের মেয়েটিকে ভোগ করার প্রচেষ্টা তাদের৷ চোখ দিয়ে হাত দিয়ে পা দিয়ে আরো কত কি। সেদিনের ছেলেটার সাহস দেখে তো অবাক হয়ে গিয়েছিলো সে। ছেলেটা বয়সে তার ছোট ই হবে। ছেলেটার হাতে ছিলো একটা ব্যাগ সে ব্যাগ টা বুকে র মাঝে। তার ব্যাগ আর বুকের মাঝে হাত ঢুকিয়ে সে সামিয়ার শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করছিলো। সামিয়া চিৎকার করে উঠেছিলো। কয়েকজন পিছনে তাকিয়ে শুধু মজা দেখে আবার সামনে তাকিয়ে রইলো। সিট টা ছেড়ে অন্য সিটে গিয়ে বসলো সামিয়া। কেউ কিচ্ছুটি বললো না একটু জিজ্ঞাসা ও করলো না। করবে কেনো এগুলো তো হরহামেশাই ঘটে।

ওই তো সেদিন যখন বাসে ভীড়ের মধ্যে বুড়ো লোকটা তার বিশেষ অংগ সামিয়ার পেছনে বার বার স্পর্শ করাচ্ছিল। সামিয়া যখন তার প্রতিবাদ করে সামিয়া অবাক হয়ে গিয়েছিলো বাসের যাত্রী রা ওকে ই দোষারোপ করলো। ভীড় বাট্টার মাঝে নাকি এসব একটু আধটু হয় ই৷ সে কেনো এই ভীড়ের বাসে উঠেছে। এত সমস্যা থাকলে কেনো গাড়ি কিনে চলাচল করছে না। অথচ সে সীটে ই বসে ছিলো। লোকটা ই তার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিলো। সেদিন সামিয়া বুঝতে পেরেছিলো। ঘরের বাহিরে বেশির ভাগ ছেলেরা মনে রাখতে পারে না যে তাদের মা বোন আছে। তারা ও এরকম বাহিরে যায়। পড়াশোনা করে। চাকরি করে। এর পর থেকে সামিয়া নিজে ই নিজেকে যতটুকু পারে রক্ষা করার চেষ্টা করে।

সেদিন পাশে বসা কোট প্যান্ট টাই পর লোকটা যখন মানিব্যাগ বাহির করার নাম করে বার বার তার শরীরে স্পর্শ করছিলো সে তার হিজাবের পিন টা হাতে নেয় এবার কিছু করলেই এই পিন গেঁথে দিবো তোর শরীরে মনে মনে ভাবে। লোকটা সামিয়ার হাতে পিন টা দেখে আর সামিয়ার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয় কিছু আঁচ করতে পারে৷ এরপর সে সোজা হয়ে ই বসে থাকে।

ওই দিন সামিয়ার ভাইয়ের বয়সী ছেলেটা যখন বার বার সামিয়ার পায়ে পা দিচ্ছিলো সামিয়া হঠাৎ নিজের পা টা ওই ছেলেটার পায়ের উপর দিয়ে মাড়িয়ে দিতে থাকে। ছেলেটা এটা আশা করে নি। সে বোধ হয় ভয় ও পেয়েছে। সামনের স্টপে ই ছেলেটা নেমে যায়৷ এভাবে নিজেকে রক্ষা করতে করতে ক্লান্ত লাগে সামিয়ার৷ ঘর থেকে বের হতে গেলেই আতংক টা ঘিরে ধরে তাকে। শেষ পর্যন্ত সে এই ব্যবস্থা নেয়। বের হলে ই কুষ্ঠ রোগের প্ল্যাকার্ড টা নিয়ে বের হয়। প্রয়োজন মত গলায় পরে নেয়। দেখানোর পর ম্যাজিকের মতন কাজ করে।

নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে তার৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো তাকে সাহায্য করার কেউ নেই। সবাই মুখে বড় বড় কথা বলবে কিন্তু সুযোগ সবাই নিতে চায়। উন্নত থেকে উন্নততর হতে যাওয়া এই পৃথিবীতে নিজের বাসের বড্ড অনুপযুক্ত মনে হয় তার কিছু নিচু মানসিকতার মানুষের জন্য। কিছু মানুষরূপী মানুষ যদি এই পশুরূপী মানুষ গুলোকে রুখে দিতে পারতো যদি এই পশুগুলো উপযুক্ত শাস্তি পেত তাহলে বোধহয় চারপাশ টা একটু পবিত্র হত। জঞ্জাল মুক্ত পরিবেশ এ মেয়েরা বুকভরে নিঃশাস নিতে পারতো এভাবে দমবন্ধ করে ওদের চলতে হত না।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত