স্বপ্ন

স্বপ্ন

বাবা সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। আমি বাবার সামনে দিয়ে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে চলে যাচ্ছিলাম। পত্রিকায় মনোযোগ ছিলো বলে ভেবেছিলাম বাবা হয়তো শুনেন নি।ঠিক এই মূহুর্তে বাবা ডাক দিলেন –

~হিমু এই দিকে আয় তো বাবা?
–আমি ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে এসে মাথা নিচু করে দাড়ালাম।
~কিরে দাড়িয়ে আছিস কেনো?এইদিকে এসে বস।
–আমি বাবার পাশে এসে বসলাম।
~তর লাস্ট সেমিস্টারে সি,জিপিএ কতো?
–জ্বি বাবা ৩.৫৬
~আগের দুই সেমিস্টারে কতো ছিলো?
–৩.৭৮ এবং ৩.৮৩

~তো এবার কম হলো কেনো?ক্লাসে মনোযোগ কম নাকি মনোযোগ অন্য দিকেও যাচ্ছে ইদানীং?
–ইয়ে বাবা মানে নেক্সট সেমিস্টারে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
~নাহ ঠিক হবে না।সামথিং সামথিং কি ঠিক বলেছি তো?
–নাহ বাবা নাথিং নাথিং ।
~শোন তর এই বয়সটা আমিও পার করে এসেছি।তর মায়ের সাথে লাভ ম্যারেজ ছিলো আমার।তর মায়ের প্রেমে যখন পড়েছিলাম তখন কিন্তু আমার মনেও সময়ে অসময়ে গান আসতো। আর তুই আমারি ছেলে।আমি বুঝবো না।মেয়েটাকে একদিন বাসায় নিয়ে আসিস।

–আমি মাথা নিচু করে সরাসরি আমার রুমে চলে যাই। আর দরজা বন্ধ করে দিয়ে ডান্স শুরু করে দেই। পরের দিন নীলাকে সাথে করে বাসায় নিয়ে আসি বাবার সাথে নীলাকে পরিচয় করিয়ে দিবো বলে। নীলা বাবার সামনে এসে সালাম দেয়-

→আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
~ওয়ালাইকুম আসসালাম।বাহ কি মিষ্টি মেয়ে।গাধা টার পছন্দ আছে তাহলে।তো মা তোমার নাম কি?
→জ্বি আংকেল নীলা।
~কিসে পড়াশোনা করছো?
→জ্বি আংকেল ফার্স্ট সেমিস্টার। সি,এস,ই ডিপার্টমেন্ট।
~তোমার ফ্যামিলিতে কে কে আছেন?
→আমার মা ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ নেই।আমার যখন সাত বছর বয়স, তখন বাবা মারা যান।
~কে বলেছে তোমার কেউ নেই।এই আমি আছি তোমার বাবার মতো।হিমু আছে।মাঝেমধ্যে হিমুর সাথে বাসায় আসবে বাবার কাছে।বাবাকে দেখে যাবে।যতদিন তোমাদের বিয়ে না হচ্ছে।

–এই কথা বলতেই নীলা কান্না করে দিলো।মেয়েগুলো সত্যিই কোমল মনের অধিকারী হয়ে থাকে। অল্পতেই কান্না করে দেয়।বাবা বলছেন –

~এই মেয়ে বোকার মতো কান্না করছো কেনো?
→আসলে ছোট সময় বাবাকে হারিয়েছি। বাবা কি জিনিস বুঝি নি।আপনার মধ্যে বাবাকে খুজে পেয়েছি। তাই খুশিতে কান্না করছি।

~বুঝতে পেরেছি। হিমু তুই নীলাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসবি,কেমন।
–আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।

–তারপর থেকে নীলা বাবার সাথে এসে গল্প করতো। আমি অবাক হয়ে শুধু দেখতাম। একদিন বাবা বলছেন – হিমু আজ আমি নীলাদের বাসায় যাবো।তুই রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি।

–কিন্তু বাবা কেনো?
~তাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি করে আসতে।
–বাবা আমার তো এখনো পড়াশোনা শেষ হয় নি। পড়াশোনা শেষ হতে আরো তিন বছর লেগে যাবে।
~তাতে কি হয়েছে। আমি নীলা মা কে খুব তাড়াতাড়ি আমার ছেলের পুত্রবধূ হিসেবে দেখতে চাই।আমি তো আছি এখনো। পেনশনের টাকা দিয়ে ভালোই চলছে বেশ।আর তর বউয়ের জন্য হলেও তুই আরো ভালোকরে পড়াশোনা করবি।

–আমি নীলাকে ফোন করে সব খুলে বললাম। নীলা কিছু বললো না।শুধু বললো আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা।মেনে নিবে ইনশাআল্লাহ।
–বাবার সাথে নীলাদের বাসায় হাজির। নীলার মা দড়জা খুলতেই অবাক হয়ে যায় বাবা আর নীলার মা।

~শাহানা তুমি,?
→আমারও তো একই প্রশ্ন। তুমি? আর এই ছেলে তোমার?
~হুম আমার ছেলে। ওর নাম হিমু। বাহিরে দাড়িয়ে কথা বলবো।ভেতরে আসতে বলবে না।

→আসো আসো ভেতরে আসো। তুমি কিন্তু আগের মতোই রয়ে গিয়েছো।শুধু দাড়ি-গোঁফ পেঁকে গিয়েছে আর কি। তো ভাবী কেমন আছেন?

~ভালো আছে।তোমার বিয়ের পর আর দেখা হয় নি আমাদের।আমরা কলেজে খুব মজা করতাম।তাই না

→হুম। সেইদিন গুলো ভুলার মতো না।তারপর বলো কি মনে করে আমার বাসায় আগমন? আমার ছেলে আর তোমার মেয়ে দুজন দু’জনকে ভালোবাসে।তাই আমার ছেলের জন্য তোমার মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে চাইতে এসেছি।

→এটা তো পরম সৌভাগ্যের কথা।তা তোমার ছেলে কিসে পড়াশোনা করছে?
~এবার ভার্সিটি সেকেন্ড ইয়ারে। তোমার মেয়ে আর আমার ছেলে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে।
→পড়াশোনা শেষ করে নিলেই পারতো।
~আজকালকার প্রেম ভালোবাসায় শুদ্ধতা থাকে না। আমাদের সময়ে একটা চিরকুটে মনের ভাব প্রকাশ করতাম। আর এখন অনলাইনে প্রেম ভালোবাসা নোংরামি তে ভরে গিয়েছে। বিয়ে দিয়ে দেই তাহলে ভালো হবে।আমরাও পাপের বোঝা থেকে কিছুটা হালকা হবো।আর আমাদের বন্ধুত্ব টা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

→আচ্ছা ঠিক আছে।এই মাসের লাস্ট শুক্রবারে পারিবারিক ভাবে ওদের বিয়ে।তারপর ওদের পড়াশোনা শেষ হলে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করবো।

~আচ্ছা ঠিক আছে শাহানা।উঠি আজ তাহলে।
–আহ!!! আমার মতো খুশি হয়তো আর কেহ নহে।এখনি যে বিয়েটা খুব প্রয়োজন ছিলো। সেটা কতজনের বাবা,মা বুঝে।বাসায় এসে উরাধুরা ডান্স করতে লাগলাম। কিন্তু হঠাৎ নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করলাম। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ। সামনে বাবা,মা দাড়িয়ে আছেন। মা জিজ্ঞেস করছেন -এখন কেমন আছিস বাবা?

–মা, আমার থেকে ভালো কে হতে পারে?এই মাসের লাস্ট শুক্রবারে নীলার সাথে বিয়ে আমার। কিন্তু আমার মাথায় তো ব্যান্ডেজ। বিয়েটা হবে তো আম্মু? মা আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন – কিসের বিয়ে।আর নীলা কে?তুই ঠিক আছিস তো বাবা? বাবা বললেন-

~তোমার গাধাটার ফেসবুক প্রোফাইলটা দেখো। নীলার নামে গল্প লিখতে লিখতে ঘুমের মাঝে-ও নীলাকে বিয়ে করে ফেলে।তাইতো ঘুমের ঘুরে স্বপ্নে বিয়ের আনন্দে নাচানাচি করতে যেয়ে এখন মাথা ফাটিয়ে হসপিটালে।

–তারমানে আমি ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখছিলাম। নীলার সাথে তাহলে বিয়েটা হবে না। বিদায় পিথিবী বিদায়।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত