আমার বিয়ের পর এই প্রথম ভাইয়া আমার শ্বশুর বাড়িতে আসলো । তাও আবার হটাৎ করে । খাবার টেবিলে বসে খাবার দেখেই আমার শাশুড়ি মায়ের মুখ কালো হয়ে গেলো । কোনমতে খেয়ে উঠেই আমাকে নিজের রুমে ডেকে পাঠালেন ।ভাইয়ার খাবার হলে টেবিল গুছিয়ে আমি মায়ের রুমে গেলাম । মা আমাকে দেখে বললেন কি ব্যাপার প্রীতি তুমি এইগুলা কি রান্না করলে? এই প্রথম তোমার ভাইয়া আমাদের বাসায় আসলো আর তুমি কিনা কোন মাংস রান্না করলেনা ?আমি মায়ের কথাশুনে হেসে বললাম মা – ভাইয়া তো ফুলকপির তরকারি অনেক পছন্দ করে । আর ফ্রিজে কোন মাংস ছিলনা তাই যা ছিল তাই রান্না করলাম ।
মা আমার কথা শুনে বলল শুন প্রীতি – তোমার বাবার বাড়ির দিকের সবাই এখন তোমার মেহমান । তিনবার কবুল বলার সাথে সাথে মেয়েদের বাবার বাড়ি পর হয়ে যায় ।আপন হয় স্বামীর বাড়ি । তোমার ভাইর তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছে তাই হয়তো না বলে চলে আসছে । কিন্তু তুমি মেহমান কে এইভাবে শুধু শুধু খাবার দিতে পারবেনা ।এতে আমাদের বাড়ির সন্মান থাকবেনা । এই বাড়ির সন্মান এখন তোমাকে রাখতে হবে । ফ্রিজে মাংস ছিলনা তুমি রহিমার মাকে বাজারে পাঠিয়ে বাজার আনাতে পারতে । তমাল অফিসে চলে গেছে আমাকে বললে আমি টাকা দিয়ে দিতাম।
পরের বার থেকে এইগুলো খেয়াল রাখবে । আমি মাথা নেড়ে রান্নাঘরে চলে আসলাম । তাইতো মায়ের বলা কথাগুলোতো একদম ঠিক । যে ভাইয়ার সাথে আমি একমাস আগেও সামান্য জিনিস নিজের বলে ঝগড়া করতাম , সেই ভাইয়া , আমার নিজের রুম , আমার চির চেনা বাবার বাড়ি , আমার মা, আমার বাবা আমার পরিচিত যত আত্মীয় সবাই । আমার ২৪ বছরের সবকিছু কবুল বলার সাথে সাথে আমার পর হয়ে গেছে । এখন আমার ভাইয়া আমার বাসায় আসলে আমাকে ফর্মালিটি মানতে হবে ।ছোট থেকে যে বাড়িতে বড় হয়েছি সে বাড়িতে যাবার জন্য আমাকে অন্যর অনুমতি নিতে হবে ।
একসময় আসবে যে সময় হয়তো কোন উপলক্ষ ছাড়া চিরপরিচিত সেই বাড়িতে আর যাওয়াই হবেনা । কি অদ্ভুদ নিয়ম !! যে মায়ের পেট থেকে জন্ম নিলাম সে মায়ের অসুখে পাশে থাকতে পারবোনা । যে বাবা হাঁটতে শিখাল প্রয়োজনে তারপাশে লাঠি হয়ে থাকতে পারবোনা । যে ভাই বড় হবার সময় সারাক্ষন চোখে চোখে রাখল সে ভাইয়াকে ইচ্ছা করলে চোখের দেখা দেখতে পারবোনা ।অথচ যাদের আমি ২৪ বছর পরে চিনলাম তাদের পরিবারকে আমাকে শক্ত করে ধরে রাখতে হবে ।সে পরিবারের মান- সন্মান আমাকে রক্ষা করতে হবে ।সেই পরিবারের ভবিষ্যৎ বংশধর আসবে আমার মাধ্যমে ।
আমার মাধ্যমেই গড়ে উঠবে আরেকটি পরিবার যে পরিবারে এমন করেই আরেকটি মেয়ে আসবে তাকেও চলে যেতে হবে আরেকটি পরিবার গড়তে । কি জীবন মেয়েদের !! কি কঠিন জীবন !! আমি টলতে টলতে ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম ভাইয়া – আসলে ফ্রিজে কিছু ছিলনা আর তুই হটাৎ করে আসলি তো তাই ভালো কিছু রান্না করতে পারি নাই । বলেই আমি ঝর ঝর করে ভাইয়ার সামনে কেঁদে দিলাম । আমি আসলে কখনো ভাবতেই পারি নাই আমার ভাইয়া আমার মেহমান হয়ে যাবে ।