প্রায় সব মেয়েদের ধারণা ছেলেদের জীবনটা কত সুন্দর। যখন যা খুশি তাই করতে পারে। আড্ডা দিতে পারে, কোন নিয়ম নেই কোন বাধা নেই? আর মেয়েদের বেলায় যত নিয়ম, যত বাধা। আসলে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, স্বাধীনতা এগুলো ছেলেদের জীবন নয়,ছেলেদের জীবনটা হলো একটা সংগ্রাম, অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা।
জন্মের পর থেকেই একটা ছেলের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বীজ। প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলে সমাজে কোন মর্যাদা পাওয়া যাবে না। থাকবে না কোনো মূল্য। একটা ছেলের বুঝ জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে তাকে পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করে বেচে থাকতে হয়। পরিবারের হাল ধরতে হয়, পরিবারের সুখের জন্য নিজের সমস্ত স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হয়। একটা ছেলের পরিবারের কথা ভেবে নিজের সমস্ত ইচ্ছে গুলো বিসর্জন দিতে হয়। ছেলেদের বাবার পরে বাবার মতোই করে পরিবারের হাল ধরতে হয়।
ছেলেরা নিজেকে জলাঞ্জলি দিয়ে সবাইকে খুশি রাখতে হয়। ছেলেদের হাজারো দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে সবাইকে আশ্বাস দিতে হয়। ছেলেরা হাসি মুখে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, শুধু একটু রোজগারের জন্য। ছেলেদের করতে হয় সবার স্বপ্ন পূরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা। ছেলেরা গভীর রাতে একা একা কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলবে, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিবে না। আর সকাল হলে আবার সেই পথ ধরে হেঁটে যেতে হয়।
মেয়েদের জন্য এই পৃথিবীটা খুব সহজ? কিন্তু ছেলেদের জন্য খুব কঠিন। একটা মেয়ে পরীক্ষায় ফেল করলে সহজ হিসেব তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর একটা ছেলে পরীক্ষায় ফেল করলে পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেওয়া হয়। একটা মেয়েকে জন্মের পর থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত তার বাবা দেখাশোনা করে। তারপর একটা সফল ছেলে দেখে বিয়ে করে নিবে, আর সেই ছেলেই তার দেখাশোনা করবে।
আর ছেলেদের হতে হয় সফল, প্রতিষ্ঠিত। টাকা না থাকলে কোন বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিবে না। টাকা থাকলে ছেলেরা সমস্ত বন্ধু বান্ধুবীদের কাছে প্রিয়। বন্ধু বান্ধুবীদে ভীড়। টাকা না থাকলে কোন বন্ধু এসে বলবে না চল আজ একটা পার্টি দেই। যখন টাকা থাকবে তখন বন্ধুরা এসে বলবে চল আজ একটা বড় পার্টি দেই। একটা মেয়ে সুন্দরী হলে তার জন্য রয়েছে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট। আর ছেলেদের সৌন্দর্য হচ্ছে টাকা। টাকা থাকলে তার জন্য রয়েছে হাজারো সুন্দরী। টাকা না থাকলে এলাকার জড়িনা সকিনারাও ফিরে তাকাবে না।
সারাজীবন ছেলেরা শুধু ত্যাগ করে যায় বিনিময়ে কিছুই চায় না। টাকা থাকলে ছেলেরা পরিবারের যোগ্য সন্তান, বাবা মায়ের কাছে খুব আদরের। টাকা না থাকলে অযোগ্য। জন্মের পর থেকেই ছেলেরা বাবা মা, ভাই বোন, বা তার জীবন সঙ্গীর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যায়। তবুও এরা কারো মনের মতো হতে পারে না। টাকা থাকলেই ছেলেরা বউয়ের কাছে বিশ্বস্ত শ্রেষ্ঠ পুরুষ সন্তানের কাছে ভালো বাবা।
টাকা থাকলে ছেলেরা প্রেমিকার কাছে শ্রেষ্ঠ প্রেমিক। কারণ গার্লেফ্রন্ডকে দামী রেস্টুরেন্টে না খাওয়ালে আজকাল ভালোবাসা জমে না। পয়লা বৈশাখে, পয়লা ফাগুনে, দামি শাড়ি গিফ্ট না করলে প্রেম জমে না। সুইট বেবিদের জন্মদিনে নামি দামি উপহার না দিলে ভালোবাসা টিকে না। আর জন্য চাই টাকা, আর টাকার জন্য করতে হয় ছেলেদের অক্লান্ত পরিশ্রম। আর মেয়েদের বেলায় স্বামী যেমনি হোক, তার টাকা থাকলেই চলে। কারণ পাশের বাড়ির ভাবির সাথে শপিংয়ে গিয়ে নতুন নতুন শাড়ি গহনা কিনে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে না। ছেলেদের বিয়ের জন্য চাই টাকা, প্রেম করার জন্য চাই টাকা। ছেলেরা বাবার কাছে মিথ্যা বলে নানা অজুহাতে টাকা নেয়, শুধু তার গার্লেফ্রন্ডের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।
একটা ছেলেকে তার মা টিফিনের টাকা দিলে সে খায় না, রেখে দেয় তার প্রিয় মানুষটির জন্য। কোন কিছুর ইচ্ছে হলে খায় না। রিকশায় না ওঠে, পায়ে হেঁটে যায়। নিজে নতুন কিছু কিনে না অথচ তার গার্লেফ্রন্ডের জন্য কিছু না কিছু কিনে। কারন ছেলেদের মাথায় চিন্তা থাকে তার গার্লেফ্রন্ড একটা মেয়ে টাকা পাবে কোথায়। এই সমাজে টাকা দিয়ে ছেলেদের সম্মান নির্ধারণ করা হয়। সারাজীবন পড়াশোনা করে, চাকরি করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা অর্জন করতে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক ছেলের কপালে জোটে বৃদ্ধাশ্রম।
ছেলেদের কাছে সবচেয়ে যন্ত্রণাকর মূহুর্ত সেটা যখন তারা দেখে তার কাছের মানুষটি ছেড়ে চলে যায়। পিছনে ফিরে তাকায় না। যার হাতটি ধরে চলার কত বাসনা ছিলো হৃদয়ে। হঠাৎ অচেনা হয়ে যায়। পর হয়ে তাই ছেলেদের বলবো নিজের বাপের খেয়ে অন্যের মেয়েকে ভালোবাসার কি দরকার। ভাবছো মেয়েটা আজ তোমাকে রাত দিন সময় দিচ্ছে তার মানে সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
হাস্যকর আসলে এটা ভুল ঐ মেয়ের বাসায় খেয়েদেয়ে কোন কাজ কাম নাই তাই তোমাকে সময় দিচ্ছে। যখন সময় আসবে তখন ঐ মেয়ে তোমার পাছায় লাথি মেরে কোন এক সফল ছেলের হাতে চলে যাবে। কারণ মেয়েদের কাজটাই হচ্ছে একটা প্রতিষ্ঠিত সফল ছেলে খোঁজা। আর তুমি ততদিনে সফল হতে হতে মামা ডাক শোনবা। তাই ছেলেদের বলবো নিজের পরিবারকে সময় দাও, নিজের ক্যারিয়ারটা সুন্দর করে সাজাও, এক সময় শুধু মেয়ে না, মেয়ের বাবাও তোমার পিছনে ঘুরবে মেয়ে দেওয়ার জন্য।