অজানা গল্প

অজানা গল্প

মার্কেটে শাড়ির দোকানের পরের দোকানে গেলাম। পিছন ফিরে দেখলাম ছেলেটাও পিছু পিছু আসছে! ড্রেস পছন্দ হচ্ছিল না তাই বার বার করে ফুপু কে তাড়া করছিলাম। মার্কেট থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য। ঈদের শপিং প্রচন্ড ভীড়।

ফুপু উনার ছেলেদের জন্য শার্ট কিনবেন। দোকানে ঢুকে একটা শার্ট ভালো লাগল। তখন ঠিক এই সময় আমিও দেখলাম ঐ ছেলেটা এরকম সেইম শার্ট হাতে কি যেন দেখছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে আড় চোখে। খুব অস্বস্তি লাগছে। ফুপু দেখলাম এই বিষয় টা খেয়াল করছেন। আমাকে বললেন তুই চিনিস নাকি। আমি না সূচক জবাব দিলাম। সত্যি আমি চিনি না।

কি না কি ভাবছেন ফুফু কে জানে। প্রত্যেক বছর উনার সাথে ঈদের শপিং এ আসি। ফুপা দেশের বাইরে থাকেন। তাই উনি একা, আমাকে নিয়ে আসেন। এরকম কেনো ঝামেলায় পরতে হয়নি এর আগে। শার্ট কিনে জুতার দেকানে গেলাম। ফুফু জুতা দাম করছেন আবার সেই ছেলেটা এই দোকানে ঠিক সামনে এক ফল বিক্রেতার কাছে ফল কিনার ভান করে দাড়িয়ে আছে, আমি ঠিক বুজলাম।

ছেলেটা দেখতে ভালো, আমার থেকে বয়সে পাঁচ/ছয় বছরের বড় হবে। ভদ্র মনে হচ্ছে। কিন্তু এরকম আচার আচরণ তো খারাপ কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। জুতার দোকান থেকে বের হতেই খুব তারাতারি করে গাড়ি তে উঠার জন্য ফুফু কে তাড়া দিচ্ছি। গাড়ি পেতে হলে সামনে একটু রাস্তা হাটতে হবে। ঠিক তখনি ছেলে টা আমার সাথে কথা বলতে চাইল,,

— এই যে শোন,,, আমি কিছু না জবাব দিয়ে দ্রুত হেটে চলে এলাম। এ কোন মুসিবতে পরলাম আজ। গাড়িতে উঠতে যাব ঠিক তখনি,,

— হ্যা রে,, আদিব বলেছিল ওদের জন্য আইসক্রিম কিনে নিতে। আমি তো ভুলে ই গেছি ! রোজা রেখেছ চল নিয়ে নেই। ইফতার পর খেয়ে নিবে। এই বলে আমরা আইসক্রিম কেনার জন্য দোকানে ঢুকে আইসক্রিম কিনে টাকা দেওয়ার সময় হঠাৎ ছেলটি সামনে এসে দাড়াল। এখন কি বলব বুজতে পারছিলাম না।

— এই প্যাকেট টা নাও। ( ছেলে)
— আপনি কে? আর অপরিচিত কারো কাছ থেকে এগুলা নিব কেন আমরা ( ফুপু)।

— আমি জানি আপনারা আমাকে ভুল বুজছেন। মনে করছেন আনি আপনাদের ফলো করছি। আসলে না। ওর মত দেখতে অবিকল আমার এক ছোট বোন ছিল। এমনকি গত রোজায় ও ছিল। হঠাৎ ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরে গত কুরবানি ঈদের পর পর ই মারা যায়। অনেক আদর করতাম বোন টাকে। কত কি আবদার করত আমার কাছে,, কত রকম ভঙ্গি করে।

আজ যখন উনাকে দেখতে পেলাম, ঠিক মনে হল যেন আমি আমার বোনটা কে জীবিত দেখছি। তাই বার বার আপনাদের পিছু নিয়েছি। অনেক দিন বোনটা কে দেখিনি তো তাই!! ছেলেটার কথা শুনে কেন জানি মনের অজান্তে চোখ পানি চলে আসল। ছেলেটা এসব বলছিল আর মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছিল।

— আমার বোনটা ভীষণ আইসক্রিম পছন্দ করত স্ট্রবেরি ফ্লেবার ওর প্রিয় ছিল। তাই, তোমাকে বোন ভেবে এই আইসক্রিম টা দিতে এসেছি। অনেক দিন বোনের জন্য কিনা হয় না ! আমার একমাত্র বোন।

তোমাকে দিলে মনে হবে আমি আমার বোন কে আইসক্রিম টা দিয়েছি। একটু শান্তি পাব। কিছু না বলে, উনার হাত থেকে প্যাকেট টা নিয়ে নিলাম। এতে যদি কেউ একটু শান্তি পায় ক্ষতি কি! কোনো কিছু বলার ভাষা যে নেই। তারপরও ধন্যবাদ দিলাম।

প্যাকেট টা নেওয়ার সাথে সাথে ছেলেটা মুখ ফিরিয়ে চলে গেল। আমি আর ফুপু দাড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। দেখলাম ছেলেটা হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ভীড়ের মধ্যে মিশে গেল! কিছু ভালোবাসর প্রকাশ হয়ত এরকম ই হয় !

( সবসময় আমরা বাইরে থেকে যা দেখি বা চোখের দেখা সত্যি হয় না, এর আড়ালেও অনেক না বলা গল্প থাকে যা একদম সত্যি হৃদয় ছোয়ার মত তাই কোনো কিছু হুট করে জাজ করা ঠিক না। )

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত