ফার্মেসিতে ইয়ে আনতে গিয়ে দেখি মহল্লার মুরব্বী মোতালেব আঙ্কেল বসে আছে। কীভাবে কী বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা। ইতস্তত করছিলাম দেখে আঙ্কেল বললেন,
– কি ব্যাপার অনি, শরীর খারাপ নাকি?
– জী না আঙ্কেল।
– তাহলে ফার্মেসিতে কি জন্য ?
– ওরস্যালাইন নিতে আসছি আঙ্কেল।
– বলো কী! ওরস্যালাইন কার জন্য?
– রিহানের আম্মু একটু সিক।
– বলো কি! কী হয়েছে বউমার?
– সিভিয়ার কিছু না, এই সামন্য ফুড পয়জনিং!
– বলো কী! ফুড ফয়জনিং! তাড়াতাড়ি স্যালাইন নিয়ে যাও।
– জী আঙ্কেল।
– তোমার শ্বশুর শাশুড়িকে খবর দিয়েছো?
– না না আঙ্কেল তেমন কিছু না।
– একটা মেয়ে ডায়রিয়ায় মারা যাচ্ছে আর তুমি বলছো তেমন কিছু না আশ্চর্য!
মোতালেব আঙ্কেল অতিরিক্ত সিরিয়াস লোক। ফুড পয়জনিংকে অলরেডি ডায়রিয়া বানিয়ে ফেলছে। আরো কী কী করে কে জানে? আমি দুই প্যাকেট চাইলেও আঙ্কেল জোর করে দুই বক্স এসএমসির ওরস্যালাইন ধরিয়ে দিছে। এবং বলেছে আরো লাগলে যেন তাকে জানাই। মাথাখারাপ লোক একটা। এখন রিহানের আম্মুকে কি জবাব দিবো ? বেচারি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আর কিছুক্ষণ পর রিহান চলে আসবে। এই শৈত্য প্রবাহ কি তাহলে বৃথা যাবে ? আমি দুই বক্স এসএমসির ওরস্যালাইন হাতে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। ওরস্যালাইন দেখে রিহানের আম্মু বলে,
– এসব কার জন্য ?
– তোমার জন্য আনলাম।
– মানে কি ফাজলামো করো আমার সাথে ?
– না মানে হয়েছে কি শুনো…
রিহানের আম্মুকে বিষয়টা ক্লিয়ার করতে যাচ্ছি এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। এখন আবার কে এলো? মোতালেব আঙ্কেল না তো ? ডোর ভিউয়ে চোখ রেখে দেখি যা আশঙ্কা করেছিলাম তাই! দল বেঁধে মোতালেব আঙ্কেল রোগী দেখতে চলে আসছে। এখন উপায়! রোগী তো সুস্থ! আমি রিহানের আম্মুকে জোর করে শুইয়ে কম্বলে ঢেকে দিয়ে বললাম,
– একটু নরম হয়ে শুয়ে থাকো প্লিজ।
– মানে কী ?
– তোমাকে পরে বলছি আপাতত শুয়ে থাকো প্লিজ।
দরজা খুলে দেখি মোতালেব আঙ্কেলের নেতৃত্বে পুরো মহল্লা হাজির। সবাই রোগী দেখতে চলে আসছে। চার-পাঁচজন লোক ধরাধরি করে দুই ছড়া কচি ডাব নিয়ে আসছে। বিছানায় রিহানের আম্মুকে দেখেই মোতালেব আঙ্কেল হুলস্থুল শুরু করে দিছে। “ডাক্তার কেন ডাকিনি” , “হাসপাতালে কেন নিয়ে যাচ্ছি না” বলে আমাকে কঠিন শাসানি দিলেন। তারপর নিজেই ট্রিপল নাইনে কল করে এম্বুলেন্স সহায়তা চাইলেন। চিরকুমার আবু তাহের আঙ্কেল আমাকে বউয়ের যত্নআত্তি কেমনে করতে হয় তা শিখাচ্ছেন। তিনবেলা বউয়ের হাতে ডলা খাওয়া মতিন আঙ্কেল আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
– বউ পালতে না পারলে বিয়া করছো ক্যান মিয়া ? জাবেদ আঙ্কেল বটি দিয়ে ধুপধাপ ডাব কাটা শুরু করছে। হেলাল আঙ্কেল বারবার বলছে,
– তরল খাবার বেশি বেশি খাইতে অইবো। খাইতে না চাইলে জোর কইরে খাওয়াইতে অইবো।
তিন তালার মুকটি ভাবির কানেও খবর চলে গেছে। তিনি জাউ ভাত নিয়ে হাজির হয়েছেন।
তিফা আর তার আম্মুও আসছে। তিফা হবু শাশুড়ির শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শাশুড়ির অসুস্থতায় তাকে খুব ব্যথিত মনে হচ্ছে।
আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর শাশুড়ি ইতিমধ্যে মালিবাগ হতে রামপুরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছেন। রিহানের স্কুলে আপাতত খবর পাঠানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বাসার নিচে এম্বুলেন্সের সিরিয়াস সাইরেন শুনা যাচ্ছে।
রিহানের আম্মুকে অনেকটা ডায়রিয়ার রোগীর মতো লাগছে। আমার দিকে বারবার তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
যে দৃষ্টির অর্থ, “একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারিস না। তোকে দিয়ে কি আমি হালচাষ করবো ? ”