চোরাবালি

চোরাবালি

“কাচাঁ মরিচ দিয়ে তরকারি রান্না করবে। গুড়োঁ মরিচ তোমার আব্বা আবার খেতে পারেনা একদম।” কথাগুলো বলে লায়লা বেগম নিজের রুমে চলে যাওয়ার উদ্দ্যেশে পা বাড়ালেন। তৎক্ষণাৎ আবার ফিরে এসে বলে উঠে, “তিতলি,আমার জন্য এক কাপ চা পাঠিয়ে দিও। আদা চা বানাবে কিন্তু। ” তিতলি বেসিনের ট্যাপ ছেড়ে হাতে পানি দিতে দিতে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। হাত প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করছে কাচাঁমরিচ কেটে।

গরম চা লায়লা বেগমের দিকে এগিয়ে দিয়ে তিতলি বলে, “মা,আমি একটু বাড়ি যাবো। আব্বুর শরীর তেমন ভালো না।” চা তে ফুঁ দিয়ে লায়লা বেগম প্রতিউত্তরে বলে, “আচ্ছা, মাসুম আসুক। তোমাকে দিয়ে আসবে নে বাসায়।” তিতলি নিঃশব্দে হেটেঁ দরজার কাছে আসার আগেই লায়লা বেগম চিৎকার করে বলে,চায়ে চিনি কম দিতে পারো না?
তিতলি আবারো মাথা সম্মতি জানায় পরের বার থেকে চায়ে চিনি কম দিবে।

বারান্দার গ্রিল ধরে তিতলি দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ডা বাতাসেও যেনো তিতলির ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে না। চারপাশের অতিক্ষুদ্র আলোও যেনো তীক্ষ্ণ ভাবে তিতলির চোখে হানা দিচ্ছে,তাতেই যেনো কপালের দুপাশে সুক্ষ্মভাবে ব্যথা হচ্ছে তিতলির। পেছন থেকে কাধেঁ হাত দিতেই তিতলি কেঁপে উঠে, মাসুম ফিক করে হাসি দিয়ে বলে উঠে, “কি ব্যপার মহারাণী? এই মধ্যেরাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন যে? মন খারাপ নাকি?” “আরেহ না। এমনি ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে তাই এসে দাড়িঁয়েছি।”

মাসুম অন্ধকারে তিতলির গাল ছুঁয়ে দিতেই বুঝতে পারে তিতলির চোখে পানি। তিতলির হাত দুটো শক্ত করে ধরে মাসুম বলে, “মা কি কিছু বলেছে তোমায়?” তিতলি চোখ দুটো বন্ধ করে থাকে। মাসুম আবারো বলে উঠে, তিতলি,বলো আমায় কি হয়েছে? নিজের স্বামীকে না বললে কাকে বলবে?” তিতলি ঢুকরে কেঁদে উঠে, “মাসুম,আমি পড়ালেখা করতে চাই। আমার সব ফ্রেন্ডরা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। আমি কোথাও ভর্তি হয়নি এখনো। আমার স্বপ্ন কে অধরা স্বপ্ন করে দিও না।”

মাসুম দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে তিতলির হাতটা নিজের হাতে ভালোভাবে মুষ্ঠি বদ্ধ করে বলে, “দেখো তিতলি আমি যা আয় করি তাতে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলে যায়। তোমার চাকরি না করলেও চলবে। আমার পরিবার বা তোমার পরিবার কারোই আর্থিক সমস্যা নেই। আমাদের বিয়ের প্রায়ই এক বছর হতে চললো, তোমাকে এতদিনে কি কোনো প্রকার কষ্ট আমরা হতে দিয়েছি বলো? সেইক্ষেত্রে এখন থেকে তোমার সংসারের দিকে খেয়াল করা উচিত। কিছুদিন পর হয়তবা আমাদের পরিবারের নতুন সদস্য আসবে। তুমি মন খারাপ করো না,চলো ঘুমুবে।”

তিতলি বিছানায় শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবতে থাকে,আচ্ছা পড়ালেখা করা মানেই কি চাকরি করতে হবে? আর চাকরি কি শুধুই আর্থিক অভাবের জন্য করতে হয়? আর কেনো বিয়ের পর মেয়েকে পড়ালেখা করার জন্য স্বামী,শশুড়বাড়ির অনুমতি নিতে হবে? কিন্তু বিয়ের আগে কত বার না মাসুম তিতলিকে বলেছিলো বিয়ে হলেও তিতলির পড়ালেখাতে কোনো প্রকার সমস্যা হবেনা তার। তাহলে এখন কেনো এই কথা শুনতে হয়? আদৌ কি এই প্রশ্নের উত্তর কখনো খুঁজে পাবে তিতলি? সংসার জীবনের এই চোরাবালির সমুদ্রে তিতলির মত হাজারো মেয়ে হয়ত তলিয়ে যাচ্ছে। সকল মানুষ এক হয়না।ভিন্নতা মানুষের মধ্যে থাকবেই এটাই স্বাভাবিক প্রকৃতির নিয়ম।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত