<এ-ই যে শোনেন? আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
> এ-ই যুগে গার্লফ্রেন্ড থাকাটা একটা ফ্যাশন। আর আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকবেনা এটা কি করে ভাবলেন? অবশ্যই আছে। তা আমাকে আপনি চিনেন? রাস্তায় ডেকে পার্সোনাল ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন যে?
< আচ্ছা আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি? তারপর আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
> ঠিক আছে বলুন কি জানতে চান?
< আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে খাওয়ার টাকা দেয়না। উল্টা রেষ্টুরেন্ট এ-র বিল টাও আপনাকেই দিতে হয়।
তবুও সে রাগ করলে আপনি চেষ্টা করেন হাতে পায়ে ধরে হলেও তাকে খুশী করতে! কারণ! সে আপনাকে ভালোবাসে। আর ভালোবাসার মানুষের জন্য আপনি সব করতে প্রস্তুত তাইনা!
> কথাটা ভুল বলেন নি। ভালোবাসার মানুষকে খুশী করতে সব কষ্ট ও হাসিমুখে বরণ করতে রাজী আছি। ভালোবাসলে বুঝবেন।
> আচ্ছা একবার ও কি ভেবে দেখেছেন?
আপনি গার্লফ্রেন্ড কে খুশী করতে সব করতে প্রস্তুত। কিন্তু কালই সে আপনাকে ছেড়ে যাবেনা তার কোন গ্যারান্টি নেই। অথচ আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা জীব মানুষ বানিয়েছেন। আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। আমাদের এত মুল্যবান জীবন দান করেছেন। পৃথিবীতে ইবাদত করলে পরকালে তার মুল্য হিসাবে জান্নাত উপহার দেয়ার ওয়াদা করেছেন। আমরা যে নিঃশ্বাস নেই, তার মুল্য পরিশোধের ক্ষমতা কোন মানুষের নাই।
মানছি মানুষ মাত্রই ভুল করবে। কিন্তু সারাজীবন শুধু ভুল করে গেলেই কি চলবে? আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি দু চারটে পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবে। কিন্তু সারাটা জীবন শুধু পাপই করে গেলে আল্লাহ কোন উসিলায় আপনাকে জান্নাত দিবে তা মাথায় এনেছেন কখনো? জীবন থেকে চলে যাওয়া বছরের কৃত গুনাহের অনুশোচনার কথা ভেবে দু রাকাত নামাজ দিয়ে নতুন বছর শুরু করলে কি খুব ক্ষতি হবে ভাই?
< ধুরু মিয়া! দিলেন তো মাথাটা গরম করায়ে! এ-ই আপনাগো হুজুরগো এ-ই এক সমস্যা। কথায় কথায় পরকাল আর নামাজ রোজা টাইনা আনতেই হবে।
শোনেন মিয়া! এ-ই বয়সে ফ্রেন্ড সার্কেল গফ নিয়া মজা মাস্তি করুম না তো কি মসজিদে গিয়া আল্লাহ আল্লাহ করুম! সময় তো এখনই। শেষ বয়সে নামাজ টামাজ পইরা মাফ ছাফ লইলাম আল্লাহর থেইকা। খেলা খতম। এইসব তো আপনাগো মত দুই টাকার মোল্লারা বুঝবেনা। এখন কথা বাড়াইয়েন না! আজকে থার্টি ফার্স্ট নাইট। পার্টি করতে যাইতাছি। আপনি হুজুর মানুষ ডাকলেন তাই বাইক থামাইছি। নয়তো কাউরে টাইম দেইনা। আপনারা তো আবার বইলা বেড়ান থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করা হারাম। হাহাহা আপনি আপনার হারাম লইয়া থাকেন হুজুর। আমি পার্টি তে যাই। বন্ধু বান্ধবীরা অপেক্ষা করতাছে।
> ভালো কথার উত্তরে এমন ব্যাঙ্গাত্মক কথা শুনে মোটেও মন খারাপ হয়নি ইমাম সাহেবের। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুধু বললেন। আল্লাহ এই পথভোলা ভাইটাকে হেদায়েত দাও। শয়তানের ফাদে পড়ে তোমাকে ভুলে গেছে।
১ ঘন্টা পরের ঘটনা। ট্রাকের নিচে চাপা খেয়ে বাইক টা চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। ছেলেটার রক্তাক্ত দেহ পরে আছে রাস্তার পাশে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে ক্লাবে যাওয়ার পথে ট্রাকের নিচে চাপা পরে সেখানেই মারা গেছে। অথচ একটু আগেও সে বিদ্রুপ করে বলছিলো এ-ই বয়সেই তো মজা মাস্তি করুম। শেষ বয়সে নামাজ রোজার কথা ভাইবা দেখবো। অথচ সে জানতেও পারেনি মৃত্যু মাঝপথেই অপেক্ষা করছিলো তার জন্য।
ছেলেটার রক্তে ছড়িয়ে পরে ভিজে উঠছিলো রাজপথ। কে রাখে কার খোঁজ! কে যেন ফোন করে নিকটস্থ থানায় খবর দেয় রাস্তার পাশে পরে আছে একটা লাশ। শহরের বাসা বাড়ি আর অলিগলির বক্সে ফুল সাউন্ডে তখনো বেজেই চলছিলো ১৯ সাল ফুরালো এবার। এসেছে হ্যাপী নিউ ইয়ার……