আকাশের দিকে ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? বহুদিনের পরিচিত কন্ঠস্বরে শুনে পেছনে ফিরে দেখি একগুচ্ছ কাঠগোলাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র।মুখে সেই চিরোচেনা মিষ্টি হাসি। আমি মৃদুস্বরে বললাম তোমার কথা ভাবছিলাম,নীল আকাশের শুভ্রতায় আমার অভ্রকে খুঁজে বেড়াতে ভালো লাগে। সে যেন শুনেও শুনলো না আমার কথা।অনেকটা উৎসাহ নিয়ে হাতের কাঠগোলাপ গুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-দেখো কি এনেছি তোমার জন্য!!এই ফুল গুলো তো তোমার অনেক পছন্দ তাইনা?
-হু অনেক।
-আরো কিছু এনেছি দেখবে?
-হ্যাঁ দেখাও!
পকেট থেকে একটা বেলীফুলের মালা বের করে আবদারের সুরে বললো তোমার খোঁপায় পড়াবো বলে এনেছি,তুমি পড়বে! আমি মৃদু হেসে এলোমেলো চুল গুলোতেই খোঁপা বাঁধলাম। সামনের চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখে অভ্র ফিক করে হেসে বললো তোমার চুল গুলো ঠিক আমার মতোই,বড্ড বেশি অবাধ্য। আমি অভ্রর কথায় সায় মিলিয়ে বললাম হ্যাঁ অনেকটা। অভ্র অনেকটা যত্ন করে খোঁপায় মালা পড়ালো,তারপর কপালে আলতো চুমু এঁকে বললো আমার সাথে ঘুরতে যাবে??
– কোথায়?
-সুদুর তেপান্তরে, যেখানে তুমি আর আমি থাকবো শুধু,যাবে আমার সাথে?
-হ্যাঁ যাবো।তুমি নীল পাঞ্জাবি টা পড়বে?
-হ্যাঁ পড়বো,আর তুমি কালো শাড়িটা পড়বে,তোমাকে কালো শাড়িতে বড্ড মায়াবী লাগে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িতে কুচি দিচ্ছিলাম,অভ্র এসে বললো,
-আমার দ্বায়িত্ব আমাকেই পালন করতে দাও।যখন থাকবো না তখন তো একাই করতে হবে তাইনা?
-হ্যাঁ আমি একাই করে নিবো।
নদীর পাড়ে সদ্য গজিয়ে উঠা দূর্বাঘাসের ওপরে খালি পায়ে হাঁটতে প্রচন্ড ভালোলাগে।চারদিকে কাশ ফুল গুলো বাতাসের তালে তালে দুলছে,আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘপুঞ্জ। আমি অভ্রর হাতটা শক্ত করে চেঁপে ধরে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছি। হঠাৎ করেই অভ্র বলে উঠলো, আমাকে মিস্ করো তুমি? ছোট্ট করে বললাম, নাহ্। অভ্র মুচকি হাসলো। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে না গেলে হয়না?
-তুমি তো জানো আমরা না চাইলেও অনেক কিছু করতে হয়।যদি আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সব হতো তবে আমি আমার পাগলীটাকে ছেড়ে কোথাও যেতাম না।
-নীল পাঞ্জাবি তে তোমাকে অনেক মানায়।জানো অভ্র যেদিন তোমাকে সাদা কাপড়ে ঢেকেছিলো আমি অনেকবার বলেছিলাম আমার অভ্রকে সাদা মানায় না,ওকে নীল পড়াও,কিন্তু কেও শোনেনি।আমি তোমার বুকে একটু মাথা রাখি!
-কিন্তু এবার যে যেতে হবে আমাকে পাগলী!
-যেও না প্লিজ,তোমাকে ছাড়া বড্ড শুন্য লাগে আমার।
-আমি আসবো তো আবার,তোমার কল্পনায় আবার আসবো।
অভ্র দূরে সরে যাচ্ছে,আমি বুঝিনা ওকে যত কাছে টানি ও ততই দূরে সরে যায় কেন!কেন হারিয়ে যায় বারবার আমাকে শুন্য করে!!
আমার হাতের কাঠগোলাপের শুভ্রতা রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে,খোঁপায় বাঁধা বেলীফুলের মালা থেকে ফুল গুলো ঝরে পড়ছে,আমি দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটে চলেছি তাকে আঁকড়ে ধরার আশায়,এমনই এক দিনে যে ওকে হারিয়েছিলাম আমি,সেদিনও ওর হাতে একগুচ্ছ কাঁঠগোলাপ ছিলো,আমি রাস্তার পাশে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম আর তারপর ও এলো কিন্তু একমূহুর্তে একটা বিশাল দেহী ট্রাক ওকে পিসে দিয়ে চলে গেলো,সেদিন আমি কাঁদতে পারিনি,আজও পারিনা,সবাই বিশ্বাস করে অভ্র নেই,কিন্তু কেউ জানে না ও আসে,আমি যখন ওকে খুব মিস্ করি ও আসে,আর ওর হাতে থাকে সেই একগুচ্ছ কাঠগোলাপ।