ফেসিয়াল প্যাক

ফেসিয়াল প্যাক

সেদিন নিজের রুমে বসে ফেসিয়াল প্যাক মুখে মেখেছিলাম , দরজাটা একটু চাপানো ছিল। নরমালি বাসার সবাই একটু আকটু রূপচর্চা পছন্দ করে না, তাও আবার শ্বশুর বাড়ি বলে কথা। সন্ধ্যায় প্যাক টা মেখে একটু ফ্যানের বাতাসে শুকাচ্ছিলাম। পুরো মুখ টা সাদা হয়েছিল, আর গোল গোল করে দুটো শশা কেটে চোখে রেখে দিয়েছি।

হঠাৎ করে রুমু রুমু বলে শ্বশুর বাবা ডাকছিল। আমি শুধু হুম হুম করে যাচ্ছি, বাবা ডাকছে আর বলছে রুমু, ফ্রীজে একটা শশা রেখেছিলাম খাবো বলে কোথায় সেটা? আমি কথা বলতে না পেরে আবারও হুম হুম করে যাচ্ছিলাম। আমার রুমের দরজা টা একটু খুলে বাবা উঁকি দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জোরেশোরে একটা চিৎকার দিয়ে আরেক ঘরে চলে যায়। আমি খুব ভয় পেয়ে শশা দুটো চোখ থেকে সড়িয়ে সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে যাই, যেয়ে দেখি বাবা, মাকে বলছে, তোমার ছোট বউ এর ঘরে অন্য কোনো ভুত দেখে আসছি। মা একটু হতভম্ব হয়ে বলতে লাগলো, ভুত দেখলে! কি বলো! আমি সাদা মুখ নিয়ে বাবা আর মাকে বললাম, বাবা আমি ভুত না, আপনার ছেলের বউ। মা, এই প্রথমবার এভাবে দেখে চমকে গিয়ে সেও একটা চিৎকার করে বলে, এই মেয়ে এসব কি দিয়েছো মুখে!

-আমি তো একটু রূপচর্চা করছিলাম মা। এসব দিলে একটু সুন্দর হওয়া যায় আর কি।
-হয়েছে হয়েছে, এতো সুন্দর হতে হবে না।

একটু রাগ দেখিয়ে সে চলে গেলো। আমি আবারও রুমে এসে চোখে শশা দিয়ে বসে রইলাম।
কিছুক্ষণ পর, আস্তে আস্তে করে আমার শাশুড়ী এসে আমায় বলল, রুমু রে, ও রুমু, একচোখের শশা সড়িয়ে বললাম, মা কিছু বলবেন? একটু কাচুমাচু হয়ে সে বলে,

-শোন, তোর বাবা যখন আমার সাথে ঝগড়া করে, তখন আমায় এই প্যাক টা লাগিয়ে দিবি.? রাত হলে ভয় দেখাবো!
আমার হাসি মনে হয় আর চেপে রাখতে পারছিলাম না। তবুও ভিতরে ভিতরে একটু হেসে নিলাম।

-ঠিক আছে মা, করে দিবো। আপনি এখন যান, আমি আসছি। পরদিন, বাবা বলছে,
-শোন রুমু, তুই যেটা মেখেছিলি একদম ভয় পেয়েছিলামরে মা। একটা কাজ করবি? এখন আবার এই টা দিয়ে তার কি কাজ হবে কে জানে?

– কি করতে হবে বাবা?
– তোর শাশুড়ীর সাথে প্রায় সময় ঝগড়া লাগে৷ যখন লাগবে আমায় তখন মেখে দিবি? ভয় দেখাবো। কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলাম, মনে মনে ভাবছি সেইম কথা শাশুড়ীও বলে গেছে। এখন আবার বাবাও!

-আচ্ছা বাবা দিবো। কিন্তু ঝগড়া লাগবে কখন?
-ইচ্ছে করে আজ রাতেই লাগাবো। তুই কিন্তু দিবি।

ঠিক তাই হলো, তারা দুজনেই ইচ্ছে করে ঝগড়া লাগাতে ব্যস্ত। প্রথমে মা এসে বলছে, রুমু রুমু জলদি মেখে দে।
তারপর লাগিয়ে দিয়ে বললাম, এখনি বের হবেন না মা, একটু পর। উনি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন। আমি রুম থেকে বের হয়ে বাবাকে ডাকলাম। সেও তার রুমে নিয়ে বলল, রুমু জলদি মেখে দে। কি করার, বড়দের আদেশ তো মানতেই হয়। দিলাম মেখে,! মা বাবাকে ডাকতে ডাকতে বের হলেন, বাবাও রাগি রাগি ভাব নিয়ে মায়ের কাছে গেলেন। গিয়েই দুজনে একটা জোরেশোরে চিৎকার। আমি রুম থেকে বের হয়ে টানা পাঁচ মিনিট হেসে নিলাম।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত