অভিশপ্ত বাড়ি

অভিশপ্ত বাড়ি

হন্যে হয়ে একটা বাড়ি খুঁজছিলাম,ভাবিনি সস্তায় এতো সুন্দর একটা বাড়ি পেয়ে যাবো । ফ্যামিলি নিয়ে আজই শিফট করে অফিসে চলে গেলাম । মনে একটা খুশি খুশি ভাব । কিন্তু তখনো ভাবিনি আজ রাতেই এই খুশি কেটে গিয়ে দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে । সান্তনা সন্ধ্যায় বাবুকে পড়াতে বসেছে হঠাৎ লোডশেডিং !

এখানে চুপটি করে বস, দেখি মোম কোথায়, বলে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো সান্তনা। সবে আজই এসেছে তাই এত সড়গড় হয়নি বাড়িটা তার কাছে, একটা গুঁঁতো খেয়ে কঁকিয়ে উঠলো। মোমবাতি জ্বালিয়ে আনতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। ফিরে এসে দেখে ছেলেকে যেখানে বসিয়ে রেখেছে সেখানে সে নেই, কয়েকবার ডেকেও তার সাড়া পেলনা। মোবাইলটা খুঁজে নিয়ে টর্চ জ্বেলে ঘর বারান্দা সব দেখল, নাহ্ কোত্থাও নেই।

আরও কয়েকবার ডাকলো চিৎকার করে, হঠাৎ তার নজর যায় ঘরের দরজাটা খোলা। উফফফ্ ছেলেটাকে নিয়ে আর পারাই যায় না! যেই একটু চোখের আড়াল হয়েছে সাথে সাথে নীচে চলে গেছে ভেবে রাগে গজগজ করতে করতে সেদিকে এগলো সে।

নাহ্ রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার, ছেলের নাম ধরে আরো কয়েকবার ডাকলো। আজ আসুক ওর বাবা জোর ধমক দিতে হবে। ছাদে যায়নি তো! ভেবে মোবাইলে টর্চ জ্বেলে ছাদে এলো। নাহ্ এখানেও নেই, তবে নেমে আসতে গিয়ে ছেলের গলার আওয়াজ ও খিলখিল হাসি শুনতে পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে তার অজ্ঞান হয়ওয়ার জোগাড়, দেখছে বাবু নারকেল গাছের ডালে বসে জোরে জোরে দোল খাচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে। ভয়ে চিৎকার করে উঠলো সান্তনা। তার চিৎকারে বাবু খানিক থেমে তড়াক করে লাফ দিয়ে ছাদের কার্নিশ দিয়ে ছুটতে লাগলো। পড়ে গেলে সবাশেষ হয়ে যাবে সেই ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল সান্তনা।

আমি ফিরে দেখি, সান্তনা বিছানায় শুয়ে আছে, মাথার কাছে বসে বাবু, আমায় দেখে বললো জান বাবা, রাহুলের না অনেক শক্তি, মাকে ছাদ থেকে এনে এখানে শুয়ে দিয়েছে আর মাথায় অনেক জল দিয়েছে। আমি সান্তনাকে দেখে নিয়ে বললাম কে রাহুল! বাবু হেসে বললো এই যে আমার বন্ধু, বলে তার পাশে ফাঁকা চেয়ারটা দেখালো। ওর কথা শুনে আমি একটু ভয় পেলাম, বললাম যা তো একগ্লাস জল নিয়ে আয়, দেখলাম ও চেয়ার থেকে নেমে পাশের চেয়ারের কাছে গিয়ে বললো চল জল নিয়ে আসি, তারপর সে রান্নাঘরে চলে গেল। সান্তনার থেকে সব শুনে সারারাত ঘুম এলোনা। সকালে পাড়ার মোড়ে চা খেতে গিয়ে, দোকানদার বললো নতুন নাকি?

বললাম হ্যাঁ, ঐ সাদা দোতালাটা কিনেছি , কালই এসেছি আমরা! হাতের কাজ থামিয়ে আমার দিকে তাকালো, বললো কাল এসেছেন? সবাই ঠিক আছে তো! আমি বললাম কেন কিছু আছে নাকি?? দোকানদার বললো ঐ বাড়িতে নয় বছর আগে একটা বাচ্চা ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছিলো, তার পরে আরো দুজন এসেছিলো, তাদের ও ছেলে দুটো পরের দিন একই ভাবে মারা গেছিলো। তা মশাই, আপনার নয় দশ বছরের কোনো ছেলে নেই তো?

ওর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমি উঠে পড়লাম, আজই আমায় বাড়ি ছাড়তে হবে, পরে না হয় বিক্রি ফিরে দেখি বাবু বালিশ ছোড়াছুড়ি করতে করতে একা একাই হাসছে। আমায় দেখে বললো বাবা, রাহুলকে আমার স্কুলে ভর্তি করে দাওনা গো, একসাথে আমরা স্কুলে যাবো। আমার ওর কথা শুনে বুকের ভেতর কাঁপন শুরু হলো। সান্তনাকে বললাম চল দুদিন বোনের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি, মনে মনে ভেবেনিলাম ওদের ওখানে রেখে এসে একটা ভাড়া বাড়ি খুঁজবো, এটা বিক্রি করতে পারবো কিনা জানিনা।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত