‘বেনামি’ নামক উড়ো বার্তার অ্যাপ পেয়ে শাফিন কিছুদিন খুব মজা করলো। ফ্রেন্ডলিস্টের সুন্দরী মেয়েদের কুৎসিত কুৎসিত মেসেজ পাঠালো, অফিসের বসকে গালাগালি করলো, ক্যাম্পাসের এক পলিটিক্যাল সিনিয়র ভাইয়ের হাতে একবার হেনস্থা হয়েছিল, তার বান্ধবী বিষয়ে ওর কী কী ধারণা তা বেশ সরস করে লিখে পাঠালো।
অ্যাপটা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল মাঝখানে, সেসময় শাফিন কিছুদিন মনের সুখ মিটিয়ে নিয়েছিল। মুখোশ পড়লেই নাকি মানুষের আসল স্বত্তা বেরোয়, তাই বেনামে কাউকে গালাগালি করার সুযোগটা নিজেকে ফিরে পাবার মতই, ভীষণ তৃপ্তির।
মানুষ শুধু বেনামে অন্যকে অনেক কিছু বলতে চায় তাই না, এমনকি অজ্ঞাতনামাদের থেকে বার্তা পেতেও চায়। শাফিনের ক্লাসমেট উর্মির কথাই ধরা যাক, উল্টাপাল্টা মেসেজ পায় বলে ক্যাম্পাসে এসে মেয়েটা ওর সেল নাম্বারই চেঞ্জ করে ফেলল, একবার শাফিনকে দিয়ে এক অজ্ঞাত নাম্বারকে থ্রেটও দিয়েছিল, সেই মেয়েও অজ্ঞাতনামাদের থেকে বার্তা পেতে এই অ্যাপের অ্যাকাউন্ট খুলে শেয়ার করেছে । উর্মি যদি জানতো ‘বেনামি’তে ওকে নিয়ে সবচেয়ে নোংরা মেসেজটা শাফিনই পাঠিয়েছে তাহলে যে কী হত- শাফিন ভেবে মিটি মিটি হাসত।
আজকে হোমপেজ স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ সামাজিক সাইটে একটা হট্টগোল খেয়াল করলো শাফিন। বেনামি অ্যাপটা কী যেন একটা করছে। পুরোটা পড়তেই শাফিনের বুক কেঁপে উঠলো।
বেনামিতে যারা বার্তা পাঠিয়েছে অ্যাপটা নাকি নানা ভাবে সেন্ডারদের পরিচয় সংগ্রহ করেছে। সেল ফোন, পিসিতে অ্যাপটা চুপিসারে ওৎ পেতে ইউজারদের আইডি জেনেছে। এবং এখন প্রতিটি পাঠানো বার্তায় সে পরিচয় ওরা জুড়ে দিচ্ছে।
শাফিনের সেল ফোনটা বাজছে তো বাজছেই। একটার পর একটা কল আসছে। ওর অফিসের বস, ক্যাম্পাসের বড় ভাই, উর্মিসহ আরো অনেকে।
ফোনটা বন্ধ করে ও ওর অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে চলে যায়।
বারতলা বিল্ডিংয়ের ছাদের কার্নিশ থেকে পুরো শহরটা দেখা যায়। বাইরে হালকা কুয়াশার মত মনে হচ্ছে, ভাল দেখা যাচ্ছে না। তারপরও শাফিনের মনে হল আশেপাশের বহুতল ভবনগুলোতে ওর মত অনেকেই ছাদের কার্নিশে এসে দাঁড়িয়েছে আজ!