আমার স্টুডেন্টের বাসার সামনে একটা শিঙ্গাড়া-সমুচার টং দোকান আছে। আমি মাঝেমধ্যে খাইতে যাই। তো একদিন প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজে টিজে কোনোরকমে গিয়ে সেই দোকানে হাজির হলাম। মাথা মুছে দুইটা শিঙ্গাড়া নিলাম। টং দোকানের মামা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “বুজলেন মামা, জীবনডা বড় বেদনার।”
-ক্যান মামা, কী হইছে?
-কী আর অইব! এইযে বৃষ্টি বাদল অইতাছে, এমন দিনে রিকশাওয়ালাও কইবার পারে মামা পাঁচটা ট্যাকা বাড়াইয়া দেন। কিন্তু আমি তো কাউরে কইতে পারি না মামা দুইডা ট্যাকা বাড়ায়া দিয়েন, ঝড় বৃষ্টির দিন।
আরেকদিন ঠাডা পড়া রোদের মধ্য স্টুডেন্টরে পড়াইয়া বাইর হইছি। স্টুডেন্টের বাসায় নাস্তা না পাইয়া বাধ্য হয়েই বেদনা মামার দোকানে গিয়া দুইডা শিঙ্গাড়া নিলাম। মামা শিঙ্গাড়ার প্লেট দিতে দিতেই বলল, “বুজলেন মামা, জীবনডা বড় বেদনার।”
-ক্যান মামা, আজকে আবার কী হইছে?
-এই যে এই ঠাডা পড়া রইদের মইদ্দে দোকান নিয়ে বইসা আছি। আমি তো আর রিকশাওয়ালাগো মতো কাউরে কইতে পারি না, মামা গরমে চুলার কাছে থাকুন যায় না, শিঙ্গাড়ার দাম দুইডা ট্যাকা বাড়াইয়া দিয়েন।
-ওওওও..
এরপর আরেকদিন শীতে গেলাম, হেমন্তে গেলাম, বসন্তে গেলাম, সবসময়ই মামার জীবনডা বড় বেদনার। তো এবার শীত শুরুর আগে আগে একদিন মামার দোকানে গেলাম। একদম ফকফকা ওয়েদার। রোদ, বৃষ্টি, শীত, ঝড় ঝাপটা কিচ্ছু নাই।
শিঙ্গাড়া খাচ্ছি। খাওয়া শেষের দিকে। কিন্তু মামা আজকে এখনো কিছু বলছে না। আজকের ওয়েদারটা বোধহয় ঠিক সুবিধার না, মামার ওয়েদার আরকি। খাওয়া শেষে মামার কাছ থেকে পেপার নিয়ে হাত মুছতেছি। মামা তখন বলে উঠল, “বুজলেন মামা, জীবনডা বড় বেদনার।”
-ক্যান মামা, আজকে আবার কী হলো?
-কী আর অইব! আমি তো আর রিকশাওয়ালাগো মতো কইতে পারি না, মামা শিঙ্গাড়ার দাম দুইডা ট্যাকা বাড়ায়া দেন, দুইদিন বাদে আমার বইনের বিয়া।
-ওওওও…মামা, জীবনডা আসলেই বেদনার। আর মামা একটা কাজ করেন। আপনি নাহয় রিকশা চালানোই শুরু কইরা দেন। তাইলে আপনি মানুষের কাছে বেশী বেশী কইরা টাকাও চাইতে পারবেন, আর আপনার জীবনডাও আর বেদনার থাকব না। কথা শেষ করে আমি পা বাড়াতে যাব ঠিক তখুনি মামা আবার আমায় ডাক দিয়ে বললেন, “বুজলেন মামা জীবনডা বড়…না, বড়-ই বেদনার।”
-ক্যান মামা, আবার কী হলো?
-মামা, কী অওয়নের আর বাকি আছে কন? আপনি আইজ আমারে রিকশা চালাইতে কইলেন! আমি হইলাম গিয়া সৈয়দ বংশের পোলা। আমার দাদা হুজুর পীর কিসিমে’র মানুষ ছিলেন। বড় কামেল মানুষ। আশেপাশের দশ গেরামোর লোকজন তারে একনামে চিনত। আর আপনি সেই বাড়ির পোলারে আইজ রিকশা চালাইতে কইলেন! জীবনডা বড়-ই বেদনার..মামা, বড়-ই বেদনার…