একটি পতাকার গল্প

একটি পতাকার গল্প

দূরন্ত কিশোর ফাহিম। সাত-আট হবে বয়স! বেশ পাকনা, কথাবার্তায় তার দাদা বয়সী! সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে পতাকাওয়ালাকে দেখে দৌড়ে কাছে গেল ফাহিম। ফাহিম বলল- আঙ্কেল বড় পতাকাটার দাম কত? পতাকাওয়ালা বলল- বাবা তুমি এতো বড় পতাকা কি করবে! আর এতো বড় পতাকা কেনার টাকা তোমার কাছে থাকারও নয়! এই নাও ছোট্ট পতাকাটা তোমাকে ফ্রিতে দিলাম। নাও!

আঙ্কেল ছোট পতাকা আমার আছে। আমার বড় পতাকা লাগবে। ঘরের ছাদে উড়াবো। বলুন আঙ্কেল কত দাম?
বাবা বড় পতাকাগুলো দু’শ করে বিক্রি করি। তোমার জন্যে দেড়শ রাখতে পারবো, না হয় বাবা দাম আমার গায়ে উঠবে, পোষাবে না! ঠিকাছে আঙ্কেল। আমার কাছে এখন অতোটাকা নেই। আমি জোগাড় করে রাখব। আঙ্কেল আমার বাড়ি ঐ পথের ধারে দেয়াল-ঘেরা বাড়িটা। আগামীকাল বাজার ত্যাগের সময় গেইটে দাঁড়িয়ে ফাহিম বলে ডাক দিলে আমি বেরুবো। নগদ টাকায় পতাকা কিনে নেবো। জানেন আঙ্কেল কেন নগদে নিতে বলছি? নাতো বাবা জানি না, বলো.. কেন?

আমার যেটা মনে হয়! আমার পূর্বপুরুষরা নগদ প্রাণ- রক্ত দিয়ে কিনেছে যেই পতাকার মর্ম গর্ব সেই পতাকার কাপড় আমি বাকিতে কেনাটা উচিৎ মনে করছি না, লজ্জা মনে করছি! ঠিক বলেছো বাবা। এই পতাকার স্বার্থকতা ক’জনই বা বুঝে। তোমাকে একটা কথা বলি? বলেন আঙ্কেল অনুমতি নেবার কি আছে! বাবা আমি একজন সরকারি চাকুরীজীবী। এই বিজয়ের মাসে চাকুরি থেকে ছুটি নিয়ে পতাকা বিক্রি করি, দেশকে পতাকাকে খুব ভালোবাসি বলে। এসব শুনে ফাহিম আবেগাপ্লুত হয়ে অপলক পথচলা দেখছে পতাকাওয়ালা আঙ্কেলের! আজব মানুষ তো! এমন স্বদেশপ্রেমি বেঁচে আছে!

পরদিন ফাহিমের অনুরোধ মতে বাজার ত্যাগকালে পতাকাওয়ালা আঙ্কেল বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফাহিম বলে ডাক দিলো। কিন্তু ফাহিমের এখনো সেই দেড়শ টাকা জোগাড় হয় নি! ফাহিম বলল- আঙ্কেল আমি অত্যন্ত দুঃখিত, এখনো টাকা জোগাড় করতে পারি নাই! আগামীকাল ইনশাআল্লাহ জোগাড় হয়ে যাবে। আরে বাবা ফ্রিতে নিয়ে নাও একটাই তো পতাকা। কতটাকা কত পথে অযথা খরচ হয়ে যায়! তুমি আমার ছেলের মতই! নাও বাবা এটা নাও!! না আঙ্কেল আমি ফ্রিতে নেবো না! টাকা দিয়েই নেবো। ফ্রিতে দিলে রাগ করবো আঙ্কেল! আচ্ছা বাবা আজ যাই, আগামীকাল আসবো। ফি আমানিল্লাহ আঙ্কেল! জমানো নাস্তার টাকা দিয়ে তারপরদিন নগদে পতাকা কিনে নিলো এবং পতাকাওয়ালা আঙ্কেলকে সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় দিলো।

ফাহিম পতাকা কিনতে পেরে খুবই খুশি, দু’দিন নাস্তা করতে পারিনি তো কি হয়েছে! ফাহিম পতাকা বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলো আর বলতে লাগলো ওহ! কাপড়ের এই পতাকা কিনতে আমার নাস্তা ছাড়তে হলো! না জানি এই পতাকার মর্ম-গর্ব স্বার্থকতা অর্জনে কতই না অনাহারে থাকতে হয়েছে! কতই না প্রাণ-রক্ত দিতে হয়েছে! আজকের এই দিনে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ভক্তি সেই মহান মানুষদের প্রতি, যাঁরা নিজের জীবন দিয়ে এই পতাকার মর্ম-গর্ব অর্জন করে দিয়ে গেছেন যার সুবাধে আমরা এই কাপড়ের পতাকাটাও কেনার সুযোগ পেয়েছি! আল্লাহ ওপারে উদেরকে উত্তম জাযা দান করুক। আমি যদ্দিন বেঁচে থাকবো এই পতাকা আমার ঘরের ছাদে উড়বেই! এই পতাকা স্বাধীনতার। এই পতাকা বিজয়ের। এই পতাকা আমার আমাদের সবার।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত