ছোট ভাই গলা ফাটিয়ে শীতকালের রচনা পড়ছে ” পৌষ ও মাঘ মাস এই দুই মাস মিলে শীতকাল। এই সময় যুবক ছেলেদের একা একা থাকতে অনেক কষ্ট হয়”। আব্বা পাশে বসে পেপার পড়ছিল। ছোট ভাইয়ের শীতকালীন রচনা শুনে পেপার রেখে লাফ দিয়ে উঠলো।
-ঐ তুই কি পড়িস?
আব্বা, শীতকালীন রচনা পড়ি।
-এই রচনা কোন বইয়ে লিখছে?
আব্বা, বইয়ে এই রচনা নাই। স্যার বলেছে এবার পরীক্ষায় রচনা আসবে “শীতকাল”। তাই বড় ভাইয়ের কাছে থেকে এই রচনা লিখে নিয়েছি। সেইটাই মুখস্থ করছিলাম। ও তাইলে এইডা বড় হারামজাদার কাজ। মনে মনে সন্দেহ আছিল। ডাক দে বড় হারামজাদাকে। বাথরুমে বসে সিগারেট খাচ্ছি। এমন সময় ছোট ভাইয়ের ডাক “রিফাত ভাই আব্বা ডাকে। অবস্থা বিশেষ ভালো না। তাড়াতাড়ি আসো।
তাড়াতাড়ি সিগারেট বাথরুমে ফেলে দিয়ে মুখের সিগারেটের গন্ধ দূর করতে টুথপেস্ট খুঁজতে লাগলাম। তখনি মনে হলো টুথপেস্ট আগেরদিন শেষ হইছে। তাই শ্যাম্পুর বোতল থেকে একটু শ্যাম্পু নিয়ে মুখের মধ্যে চালান করে দিলাম। ওরে আল্লাহ এর থেকে বিষ খাওয়া ভালো আছিল। উয়াক থুঁ। সব ফেলে দিয়ে কয়েকবার কুলি করলাম। তারপর আব্বার সামনে গিয়ে হাজির।
-তো বড় সাহেব এতক্ষণ কই ছিলেন? আসতে এতো সময় লাগলো?
আমি কইলাম” জ্বী আব্বা, পড়তেছিলাম। সামনে পরীক্ষা না। এইসময় নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করতেছি”।
ইনশাআল্লাহ এবার আপনার মুখ উজ্জ্বল করবো।
– আব্বা রেগে গিয়ে বললেন ” ঐ হারামজাদা আমার মুখ কি অন্ধকার নাকি যে উজ্জ্বল করবি? তবে কথা অবশ্য খারাপ বলিস নাই। আগে আমার মুখ উজ্জ্বলই ছিল। তুই যখন এস, এস, সি তে দুইবার আর আর এইচ,এস,সিতে তিনবার ফেইল মারছিস তখনি মুখ কালো হয়ে গেছে। এবার আর সেই মুখ উজ্জ্বল করার দরকার নাই বাবা”। তো বাপজান ছোট বাপজানের রচনা কি
আপনি লিখে দিছেন?
এই প্রথম আব্বা আমার লিখা পড়ছে বলে মনে হচ্ছে।
তাই খুশিতে বকবক হয়ে বললাম ” জ্বী আব্বা, এগুলো হচ্ছে আমার ছোটখাটো প্রতিভা। ছোট ভাই রচনা লিখে চেয়েছে তাই না করতে পারিনি। লিখে দিয়েছি।
– তো আব্বাজান কি কি লিখছেন একটু পড়ে শোনান?
আমি ছোট ভাইয়ের খাতা নিয়ে পড়া শুরু করলাম…
“পৌষ ও মাঘ মাস এই দুই মাস মিলে শীতকাল । এই সময় যুবক ছেলেদের একা একা থাকতে কষ্ট হয়”। এই লাইন পড়ে চুপ করে আছি।
-আব্বা চোখ বড়বড় কইরা কইল থামলি কেন?
পড় পড়।
এই সময় রাতে অনেক শীত পড়ে। রাতের বেলা একা একা থাকা খুব কষ্টসাধ্য। হাত পা ঠান্ডায় বরফ হয়ে আসে। বাংলাদেশের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এই ঋতুতে বাংলাদেশ বিয়ের হার প্রচুর পরিমানে বেড়ে যায়। তাই বাংলাদেশের বিখ্যাত অনেক লেখক এই ঋতুকে বিয়ের ঋতু বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বিয়ের ঋতু নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
“আমার পরান যাহা চায়, বিয়ের ঋতু তাই , বিয়ের ঋতু তাই গো !”
কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন-
“আমি সব ভেঙ্গে ফেলে করবো চুরমার কেন বিয়ের ঋতু পৃথিবীতে আসে অনেক দিন পরপর ।”
গবেষকরা আরো বলেছে যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়াতে এই ঋতুর বিশেষ অবদান আছে। যা পৃথিবীর অন্যান্য জন্মহার কম দেশের কাছে ঈর্ষণীয়।
-আব্বা একটু শোনের পর বুক ধরে ফ্লোরে বসে গেলেন। আমি বললাম, আরো বলবো আব্বা?
-আব্বা বললেন ” যদি বাপকে জীবিত দেখতে চাস তাইলে এইখানেই এই রচনা পড়া বাদ দে”।
কেন আব্বা? এইখানে তো প্রকৃত সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
-আরে রাখ তোর প্রকৃত সত্য । তাড়াতাড়ি ওষুধের বক্স নিয়ে আয়, জীবন গেলো।
দৌড়ে আব্বার ওষুধের বক্স নিয়ে আসলাম।
একটুপর আব্বা বললো, আজ বুঝলাম। আমার বড় ছেলের এতো প্রতিভা কেন।
আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, কেন আব্বা?
-যে ছেলের একটা সামান্য রচনা মানুষের হার্ট অ্যাটাক করাতে পারে। তার সম্পূর্ণ পরীক্ষার খাতা দেখতে কমপক্ষে চার-পাঁচজন মাস্টার অবশ্যই লাগবে।
আমি বুঝে গেছি আমার ছেলের মেধার দাম এই দেশে নাই। তোকে আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য উগান্ডা পাঠামু বাপজান।
না, আব্বা। আমি আমার এই প্রতিভা দেশের কাজে লাগামু। দেশের মানুষের কাজে লাগামু। দেশের উন্নয়ন করমু।
– আব্বার চোখ বন্ধ।
আব্বা, কথা কও। আব্বা, ও আব্বা?
আব্বা গো……….