ইদানীং আম্মু পাশের বাসার আন্টির সাথে ঝগড়ায় পেরে উঠছেন না। তাই একদিন ঘুম থেকে আমাকে টেনে তুলে বিশাল এক ঝাড়ি দিয়ে বললেন , ” আচ্ছা কৈতরি ,তুই কি আমার নিজের পেটের মেয়ে নাকি অন্য কিছু মাঝে মাঝে আমার ডাউট হয়।
হঠাত্ ঘুম থেকে উঠে এই ধরনের কথা শুনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বললাম ,” আম্মা তুমি এতোদিন এই সত্য টা আমার কাছে লুকিয়ে ছিলে। সত্যি করে বলো আমি কে ? আম্মু আরো রেগে গিয়ে বললো ,” সারা দিন মোবাইল টিপেই তোর মাথা গেছে । ফেসবুকের খবর রাখিস আজকাল ? চোখের পানি মুছে বললাম কেন ফেসবুকের কি হইছে বন্ধ করে দিচ্ছে নাকি ? আম্মু আমার পাশে বসে রাগে গজগজ করতে করতে বললো ,” কি আর হবে , পাশের বাসার বাতেন আছে না ওর মা সব সময় আমার স্ট্যাটাসে হা হা রিয়েকট দিয়ে ভরে রাখে। আর ওই বাতেন নাকি বড়ো ডাক্তার হইছে সেই গর্বে ওর মা ফেসবুকে তোলপাড় শুরু করছে । কি লম্বা লম্বা লেকচার । আমার ছেলে এই আমার ছেলে সেই। আমি বললাম,” ভালো তো তাঁর ছেলে ডাক্তার হলে আমাদের কি ।
আম্মু আমার দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বললো ,” আমাদের কি মানে ? আমি আজকে পাশের বাসার ভাবিকে সবার সামনে বলে দিয়ে এসেছি আপনার ছেলের থেকে আমার মেয়ে ও কম কিসে। সে যদি ডাক্তার হয় আমার মেয়ে হবে ব্যারিস্টার । আমি হা করে তাকিয়ে আছি। আমি ম্যাট্রিকে দুইবার ফেল করে ইন্টারে উঠেছি । মায়ের মাথা টা পুরোটাই গেছে । আমাকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধাক্কা দিয়ে বললো ,” এখন থেকে তোর সব বন্ধ । সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকবি। ব্যারিস্টার তোকে হতেই হবে ।
নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে । এই বাতেনের বলির পাঠা আমি হচ্ছি। বুক ফেটে কান্না আসছে । বাতেনের একদিন কি আমার একদিন । বাতেনের বাচ্চা বাতেন তোর খবর আছে । আম্মু উঠে চলে যাওয়ার সময় আরেক বার ঝাড়ি দিয়ে বললো ,” আমাকে ছোট করা আমি ও খানদানি বংশের মেয়ে । তোর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে আসি। এই বলে হনহন করে চলে গেলেন । আম্মু কে দেখে মনে হচ্ছে ব্যারিস্টার হওয়া হাতের মুআ। চাইলেই হতে পারে । অনেক ভেবে চিন্তা করে ফেসবুকে ঢুকলাম । দেখি বাতেন অনলাইন এ। ওর আইডির দাঁত কেলানো পিকটা দেখেই মেজাজ গরম হয়ে গেল। কোনও কিছু না বলেই টেক্সট পাঠালাম ,,,
:- এই বাতেন আলি, তোরে তো দেখি সারা দিন অনলাইন এ। ডাক্তার হলি কবে। নাকি হাতুড়ে ডাক্তার এর সাইনবোর্ড জোগাড় করছোস ?
:- কৈতরি , একদম বাজে কথা বলবি না। তোর মতো দুইবার মেট্রিক ফেল আমি করিনাই। পাস করে ডাক্তার হইছি।
:- হ , জানি জানি তুই কেমন ডাক্তার । তোর মতো পোলার কপালে মাইয়া জুটবো না। দেবদাস হইয়া ঘুরবি।
:- আইছে , তোর মতো মাইয়ারে কেউ বিয়ে করবে না। যা ফোট। অবশ্য তুই চাইলে আমার সেক্রেটারি রাখতে পারি হা হা হা ।
:- একদম হাসবি না বাতেন। গরুর ডাক্তার তুই আমি ভাল করেই জানি।
এই বলেই অফলাইন এ চলে এলাম। নাহ এর একটা বিহিত করতেই হবে । আমাকে খোঁটা দেওয়া । আমাকে নাকি কেউ বিয়ে করবে না। আম্মুর কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বললাম । আরো বললাম ” আম্মা ওই হারামজাদা কে এই বাড়ির ঘর জামাই বানায় যদি আমার সব কাজ না করায়ছি আমার নাম কৈতরি না। আম্মু লাফ দিয়ে উঠে বললো ,” তোর কি মাথা খারাপ হইছে কৈতরি । বাতেন হবে আমার জামাই ? আমি বললাম ” আম্মা ওদের শায়েস্তা করার এইটাই উপায় । তারপর দেখ কি করি মা ছেলেকে। তুমি রাজি হয়ে যাও। আম্মা একটু ভেবে বললো ,” পারবি তো জব্দ করতে ? আমি বললাম তুমি নিশ্চিত থাক। ওদিকে বাতেন ,,,,,
,:- মা মা !!!
:- কি রে বাতেন চিল্লাস কেন !
:- আমি নাকি গরুর ডাক্তার ?
:- কি বলিস উল্টা পাল্টা ! কে বলছে এই সব ?
: – বাসার বাড়ির কৈতরি ।
:- কি কৈতরির এতো সাহস ?
:- আরো কি বলছে জানো ? আমাকে নাকি কোনও মেয়ে বিয়ে করবে না।
:- কৈতরিইইইইই ,, ওর ঠাং আমি ভেঙে দেব। চল ওদের বাড়িতে ।
:- থাম থাম ,, তুমি চাওনা ওদের শায়েস্তা করতে ?
:- চাই বাবা খুব চাই।
:- তাহলে কৈতরি কে এই বাড়ির বউ করো তারপর দেখ নাচাই কেমন ।
:- কি বললি , কৈতরি হবে এই বাড়ির বউ কখনও না।
:- আরে মা বউ না। তোমার কাজের লোক । তুমি রাজি হয়ে যাও।
:- ঠিক আছে বাবা তাই হবে । এক সপ্তাহ পর। ,, আমি আর বাতেন বাসর ঘরে ।
:- এই কি করছো ?
:- গল্পর শেষ টুকু লিখছি।
:- আজ আমাদের বাসর আর তুমি গল্প লিখছো।
:- এই শোন , যাও আমার জন্য চা করে আনো। তুমি তো ঘর জামাই । হি হি
:- অনেক হইছে এবার থাক। লেখা লেখি বাদ ।
:- আর একটু বাতেন ! এই তুমি দরজা বন্ধ করছো কেন ?
:- দরজা খোলা রেখে বুঝি কেউ বাসর করে ।
:- নাহ আর হবে না। গল্প টা শেষ করেই দেই । আমাদের চার বছরের প্রেম আজ সফল হলো।
অনেক কষ্ট করে আমাদের মা দের রাজি করিয়েছি। আসল ঘটনা জানে না। জানাবার দরকার ও নেই। সকাল থেকে আমার কপালে কি আছে কি জানি। কাজের মেয়ে বলে কথা । আপনাদের আজ সত্যিটা বলেই দিলাম । খবরদার কেউ আবার সত্যিটা বলে ফেসবুকে সট্যাটাস দিবেন না । তাহলে কিন্তু আমাদের বাসর করার আগেই বিয়ে ভেঙে যাবে ।