বৌয়ের সাথে প্রেম

বৌয়ের সাথে প্রেম

অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিলো বাড়ি থেকে… সময়টা ছিল যখন আমি এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে বসে বেকার বসে ছিলাম। তখন বাবা মা ভাবলেন আমার বিয়ে দেবেন এবং আমার বউকে তারা মেয়ের মতো রাখবেন। কারন আমার কোনো বোন ছিলো না। এবং তারা কাজটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে করলেন।

কয়েকদিন পর তারা মেয়ে দেখতে গেলেন… মেয়েকে অবশ্য আমি আগে থেকেই চিনতাম। আমাদের সাথে একসাথে পড়াশুনা করতো। একসাথেই পরীক্ষা দিয়েছি..
.
:-ভাবির নাম কি?(নিলয়)
.
:-বলছি সময় দিবি তো?পুরোটাই বলছি…
.
:-তুই শুরু কর…(রিয়া)
.
:-ওর নাম রিমি… ওরা গরির ছিলো। ওর বাবা রিকশা চালায়। তবে বস্তিতে থাকে না… ওর মায়াবী চেহারার কারনে অনেকেই ওর পিছে ঘুরতো। কিন্তু রিমিকে কারো সাথে কথা বলতে দেখিনি…
মা বাবা দেখাশোনা করে আসার ৩দিন পর আমাদের বিয়ে দিয়ে রিমিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো।
বাড়িতে এসে রিমির জন্য আলাদা একটা রুম বরাদ্দ করে দিলো।

:-তারপর কি হলো?(রিয়া)
.
:-পাতকঠি চুপচাপ বসে শুনতে পারিস না?(নিলয়)
.
:-চয়ন ওকে পাতকঠি বলতে বারণ কর।
.
:-তো কি বলবো?
.
:-আমি কি পাতকাঠি? আমার কত সুন্দর স্লিম ফিগার…
আর আমার নাম রিয়া।নাম ধরে ডাকবি।
.
:-ওই থামবি তোরা? নাহলে চলে যাবো।
.
:-আচ্ছা তুই বল…(নিলয়)

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসলাম… আমাদের সবার খাবার দিয়ে মা বললো…

:-চয়ন আর রিমি তোমাদের বলছি… তোমরা এখন কেউ একসাথে থাকবেনা।মন দিয়ে পড়শোনা করবা।
প্রয়োজন ছাড়া কেউ করো সাথে কথা বলবে না।

:-আচ্ছা..(আমি)

:-রিমি মা তোর যা লাগবে আমাকে বলবি.. আমাকে নিজের মা মনে করবি।

:-আর আমার কিছু লাগল?(আমি)

:-তোর আবার কি লাগবে হারামজাদা?

:-না কিছুনা।

পরে আমি আর রিমি একি কলেজে চান্স পেলাম…ওর রেজাল্ট ভালো ছিলো তাই ভালো সাবজেক্ট পেয়েছে আর আমার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারনে আমি একটু খারাপ সাবজেক্ট পেলাম….তারপর ভর্তি হলাম।
আমাদের যেদিন প্রথম ক্লাস ছিল সেদিন রিমির সাথে এক রিকশায় এসেছিলাম। মা বলেছিলো সেজন্য। রিকশায় দুজনের মধ্যে ২”ফাকা ছিল।
রিমি আমার সাথে কখনো কথা বলতো না..… যদি মা আমাকে ডাকতে পাঠাতো তাহলে দরজার কাছে এসে বলতো…
:-এই যে শুনছেন?

:-না তো?

:-মা ডাকছে আপনাকে..

:-আসছি…

ব্যাস এভাবেই কথা বলতো… এমনকি ওর নিজের দরকার হলেও এভাবেই কথা বলে.…ভর্তির কয়েকদিন পর যখন ওর বই কেনার দরকার ছিলো…
আমি ঘরে শুয়ে ছিলাম… তখন রিমি আমার খাটের পাশে এসে দাঁড়ালো.…বিয়ের পর প্রথম রিমি আমার রুমে আসলো।

:-একটা কথা বলার ছিলো.…

:-বলে ফেলুন…

:-আমার ২টা বই কিনতে হবে।

:-আমাকে বলে লাভ আছে? মায়ের কাছে বলেন।

:-মায়ের কাছে বলেছি… মা বললো আপনাকে বলতে।

:-আমার কাছে টাকা নাই।

:-মায়ের থেকে নিতে বলেছে।

:-কি কি বই কিনতে হবে?

:-আমি লিখে আনছি…

:-আচ্ছা…প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া কথা বলতো না…

:-তা তুইতো কথা বলতে পারিস.…(নিলয়)

:-মা বাড়িতে থাকে…ওর ধারে কাছে দেখলে রাম ক্যালানি দেবে।

:-মা যখন বাইরে কাজ করে তখন কথা বলার চেষ্টা করবি।

:-মা বাইরে গেলে রিমি রুমে দরজা বন্ধ করে রাখে।

:-আহারে বেচারা (রিয়া)

:-মজা নিস না…থাক যেতে হবে।

:-ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না?(রিয়া)

:-কথা না বললে পরিচয় করাবো কি ভাবে?

:-তাহলে দূর থেকে দেখা ভাবিকে(নিলয়)

:-গেইটের পাশে দুইটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে দেখছিস?

:-হুম(রিয়া)

:-নীল ড্রেস পরা মেয়েটা রিমি….

:-ভাবি তো বেশ সুন্দর…

:-হুম।

:-আচ্ছা চয়ন তুইতো ভাবিকে পটানোর চেষ্টা করতে পারিস।(রিয়া)

:-কিভাবে পটাবো বল? রিমি আমাকে দেখলেই নিজেকে লুকিয়ে রাখে।

:-আচ্ছা আমি যদি ভাবিকে তোর হয়ে বলি?

:-আমার কথা বললে তোর সাথে কথাই বলবে না।

:-তাহলে এক কাজ করতে পারিস…

:-কি?

:-ভাবির নাম্বার আছে তোর কাছে?

:-হুম মায়ের ফোন থেকে চুরি করে নিয়েছিলাম।

:-তাহলে তুই আজ বাসায় গিয়ে তোর পরিচয় দিয়ে ম্যাসেজ করবি।

:-পরিচয় দিলে তো কথাই বলবে না।

:-আগে যা বললাম তাই কর..

:-আচ্ছা… গেলাম তাহলে।

অতঃপর রিমিকে সাথে নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম… রিয়া আর নিলয়ের কথামত রাতে একটা ম্যাসেজ
পাঠালাম রিমিকে..

:-রিমি আমি চয়ন.…তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।

২মিনিট পর রিপ্লাই আসলো…
:-আমি এখন পড়ছি…পড়া শেষ হলে আমি ম্যাসেজ করবো।

:-আচ্ছা..

:-আপনার পড়া শেষ?

:-না আমি এখনো পড়তে বসি নাই…

:-এখন পড়তে বসুন… আমি পরে ম্যাসেজ করবো আপনাকে।
:-আচ্ছা অপেক্ষায় থাকবো।

:-হুম…

অবশেষে রিমির সাথে কথা বলতে পেরেছি…অবশ্য ক্রেডিট রিয়া আর নিলয়ের।
আমি পড়াশুনায় অত মনোযোগী না…তাই না পড়ে ফেসবুক চালাতে বসে গেলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পরে রিমির নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসলো।

:-হুম বলেন কি বলবেন…

:-তুমি আমাকে দেখলে লুকিয়ে থাকো কেন?

:-মা বলেছে তাই…

:-কলেজে & রিকশায় কথা বললে তো মা দেখে না..

:-হুম… কিন্তু আপনিতো তখন কিছুই বলেন না…

:-আসলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে।

:-আজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তখন অস্বস্তি লাগেনি?

:-রিয়া আমার পিচ্চি কালের ফ্রেন্ড…

:-ঠিক আছে… ঘুমিয়ে পড়ুন।

:-আর একটু কথা বলি?

:-কাল সামনাসামনি কথা বলবো… এখন ঘুমান…

:-আচ্ছা… গুড নাইট

:-গুড নাইট…

রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম… সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করলাম…
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রিমির জন্য দাঁড়িয়ে আছি… রিমি বাইরে আসলে… একসাথে রিকশায় করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম…
অল্প একটু আসতেই রিমি আমার হাত ধরে কাঁধে মাথা রাখলো…
একটু পর কলেজ পৌঁছালাম…

:-আড্ডা না দিয়ে ক্লাস করতে যান..

:-আচ্ছা…

২টা ক্লাস করে আমি রিয়া আর নিলয় আড্ডা দিতে শুরু করলাম।…

:-মামা ভাবি কি পটেছে?(নিলয়)
.
:-হুম…
.
:-মামা ট্রিট পাচ্ছি কবে?(রিয়া)
.
:-পাবি সময় হোক..
.
:-আচ্ছা এক কাজ কর.. ভাবিকে নিয়ে ঘুরে আয়।
.
:-হবে না রে.. দেরি করে বাড়িতে ফিরলে মা বকবে..
.
:-আরে এখন বের হবি… কলেজ টাইম শেষ হলে বাড়িতে ফিরবি।
.
:-রিমি কি যেতে রাজি হবে?
.
:-আরে ব্যাটা বলেই দেখ।
.
:-ওকে ম্যাসেজ করি…
.
“ক্লাস শেষে একটু বাইরে আসবে?”
ম্যাসেজ করার একটু পর দেখলাম রিমি ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে… আমি রিয়া আর নিলয়কে বিদায় দিয়ে রিমির কাছে গেলাম।

:-বলছি তোমাকে নিয়ে একটু পার্কে যেতে চাচ্ছি…

:-কেনো?

:-একটু দুজনে একটু সময় কাটাতাম..

:-যেতে পারি তবে শর্ত আছে।

:-কি শর্ত?

:-পার্কে গিয়ে আমাকে প্রপোজ করতে হবে…

:-আচ্ছা।

অতঃপর রিমিকে সাথে পার্কে আসলাম…
পার্কের ভেতর একটা বেঞ্চে বসলাম…

:-প্রপোজ করেন..

:-আমি পারিনা…

:-যেমন পারেন তেমনি করেন..
:-ওকে..

আসার সময় নিলয় একটা পায়ের দিয়েছিলো.. ওইটা
নিয়ে রিমির সামনে বসলাম…

:-I LOVE YOU RIMI……

:-পায়েল টা পায়ে পরিয়ে দাও..

পায়েল পায়ে পরিয়ে দেওয়ার পর…
:-I LOVE YOU TOO CHAYON
.
বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম…
এর পর থেকে কলেজ ফাকি দিয়ে। বিভিন্ন বাহানায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমরা সময় কাটাতাম..
কিন্তু মা বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলো…
মা সিদ্ধান্ত নিলেন রিমির পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
কিন্তু আমি রিমিকে না দেখে থাকতে পারবনা…
.
:-মা একটা কথা বলি?
.
:-বলো?
.
:-রিমির কোনো দোষ নেই.. আমিই ওকে নিয়ে যেতাম ঘুরতে।ও নিজের ইচ্ছায় যেতো না। তুমি ওকে বাড়িতে
রেখে দাও… আমি ওর সাথে কখনো কথা বলার চেষ্টা করবো না….

:-বাহ এতো ভালোবাসা…?রিমি চয়ন যা বললো সব
সত্যি?

:-না… আমি নিজের ইচ্ছায় ওর সাথে ঘুরতে যেতাম।ও
কখনো আমাকে জোর করতো না……

এই মেয়েটা কি পাগল? আমি ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করলাম…আর উনি যেচে নিজের কাঁধে নিচ্ছে।

:-এখন আমি তোমাদের আলাদা করবো না… তবে এখন থেকে কোথাও ঘুরতে গেলে আমার থেকে পারমিশন
নিয়ে যাবে…আর কখনো এইরকম লুকোচুরি করবে না…
.
:-ঠিক আছে (দুজনে একসাথে)
.
:-এত খুশি হওয়ার কিছু নেই… আগের মতই দুজন আলাদা রুমে থাকবে।

:-ঠিক আছে…..

এতেই খুশি….বৌয়ের সাথে প্রেম করার পারমিশন তো পেয়েছি….

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত