বসে বসে সাদিয়ার সাথে চ্যাটিং করছি এমন সময় আব্বা এসে বলল ” রিফাত টিকটকে ভিডিও বানায় ক্যামনে রে?” আব্বার কথা শুনে চমকে উঠলাম। বললাম ” ক্যান আব্বা আপনি টিকটক দিয়ে কি করবেন? কি করবো মানে? ভিডিও বানামু। আপলোড দিমু। ফ্যান ফলোয়ার বাড়ামু।
-আব্বা শুনেন। আপনি কিছুদিন আগে ফেসবুকে আইডি খুলে চাইছেন। আমি দিছি। তারপর আমার ফ্রেন্ড লিস্টের সব মেয়েকে এড পাঠাইছেন। আমি কিছুই বলিনাই। তাদের সবাইকে “হাই বেবি” লিখে মেসেজ ও দিছেন”। এমনকি আপনি সাদিয়াকে গভীর রাইতে মেসেজ দিয়ে বলছেন ” এই মেয়ে লুডু খেলবে আমার সাথে?”। সাদিয়ার সাথে এইটা নিয়ে এক মাস রাগারাগি কইরা কথা হয় নাই। আমি আপনাকে কিচ্ছু বলিনাই। আপনি ফেসবুক লাইভে এসে মানুষকে নিম ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার টিউটোরিয়াল দেখান। এই নিয়ে আমার বন্ধুবান্ধব হাসাহাসি করে। তবুও আমি আপনাকে কিছু বলিনাই। সারাদিন পাবজি গেম খেলেন। তবুও কিছু বলিনাই। কিন্তু আব্বা প্লিজ আপনি টিকটকে একাউন্ট খুলবেন না।
আব্বা চোখেমুখে রাগ নিয়ে বলল” আমাদের বাসায় কাজ করে বুয়া মরজিনা। ওর ফেসবুক ফলোয়ার কতো জানিস? দশ হাজার। পাশের বাসার দারোয়ান আবুলের ফলোয়ার কতো জানিস? সাত হাজার। আর আমি তোর আব্বা। আমার ফলোয়ার কতো জানিস? মাত্র তিন’শ। ছেলে হয়ে তোর লজ্জা করে না? তোর বাপের চেয়ে কাজের বুয়া আর দারোয়ানের ফলোয়ার বেশি”।
আব্বার কথা শুনে মাথা ভোঁভোঁ করে ঘুরতে লাগলো। সত্যিই তো। আমার আব্বার ফলোয়ার এতো কম! ছেলে হিসাবে এটা দেখার আগে আমার মরে যাওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু আব্বা একটা সমস্যা। কি সমস্যা?
– টিকটকে একাউন্ট খুললেই ফলোয়ার বাড়বে এইডা আপনাকে কে বলছে?
আব্বা চোখমুখ উজ্জ্বল করে বললেন। মরজিনার থেকে টিপস নিলাম। ও বললো টিকটকে ভিডিও করে ফেসবুকে শেয়ার দিতে। কিন্তু আব্বা আপনার মাথায় তো টাক। মানুষ দেখলে হাসাহাসি করবে। শোন রিফাত, বাপের টাক নিয়ে মসকরা করবি না। তোর সাথে যতই ফ্রি হই। মনে রাখিস আমি তোর আব্বা । তুই জানিস পৃথিবীর বিখ্যাত সব ব্যাক্তির মাথায় টাক ছিল । এটা হচ্ছে বিখ্যাত ব্যাক্তিদের সিম্বল( প্রতিক)। আব্বার টাক মাথায় হাত দিয়ে বললেন ” দিস ইস দি সিম্বল অফ এক্সিলেন্ট”।
কিন্তু আব্বা আপনি তো বিখ্যাত না। তবুও আপনার মাথায় টাক আছে । ওরে বদলা। আমার বয়স হইছে নাকি? মাত্র পঁয়তাল্লিশ চলে। ইতিহাস পড়লে দেখবি অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তি আছে যারা বুড়ো বয়সে বিখ্যাত হয়েছিল। সেই হিসাবে আমার সুযোগ এখনো আছে বিখ্যাত হওয়ার। ছোটবেলা থেকেই আব্বার এই স্বভাব দেখতেছি। মাথায় কিছু ঢুকলে সেটা যেভাবেই হোক করবে। দরকার হলে হাজার যুক্তি দেখাবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আব্বারে টিকটকে একাউন্ট খুলে ভিডিও বানানো শিখাই দিলাম। রাতে ঘুমাচ্ছি। এমন সময় সাদিয়ার ফোন।
-হ্যালো। কও
-তোমার আব্বা ভিডিও দেখছ? কিসের ভিডিও?
-তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঢুকে তোমার আব্বার প্রোফাইল দেখো।
সাদিয়ার কল কেটে দিয়ে আব্বার প্রোফাইলে ঢুকলাম। আব্বা টিকটিকে ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দিছে। মাথায় সাদাসাদা চুল। গান বাজতেছে ” বয়স আমার বেশি না। ওরে টুকটুকির মা। চুল কয়ডা পাকি গেছে বাতাসে”। আর আব্বা সেই গানের তালেতালে হাত, পা, কোমর নাচাচ্ছে। ভিডিও লাইক, কমেন্ট দেখে শেয়ার দেখে আমার মাথায় হাত। দুইদিনে আব্বার ফলোয়ার দশ হাজার পেরিয়ে গেছে। দৌড়ে আব্বার রুমে গেলাম।
-আব্বা আপনি চুল পাইলেই কই? কাল নিউমার্কেট থেকে নকল চুল কিনছি। ক্যান?
-আব্বা আপনার ভিডিও তো ভাইরাল হয়ে গেছে। আরে এটা তো কিছুই না। মাথায় অনেক আইডিয়া আইছে। কাল আমার সাথে মার্কেট যাবি?
– না না আব্বা। আমার অনেক কাপড়চোপড় আছে। এখন কিনে দিতে হবে না।
ওরে বলদ তোর জন্য না। আমার জন্য কিনবো। পুরাতন কাপড় পরে আর ভিডিও বানাবো না। এমন সব কাপড় কিনে দিবি পরলে যেন পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ বছরের যুবক যুবক লাগে। আমি “আচ্ছা” বলে আমার রুমে চলে এলাম।
আব্বার সাথে নিউমার্কেটে শপিং করতেছি। আব্বার জন্য বিভিন্ন স্টাইলিশ শার্ট প্যান্ট কিনছি। এমন সময় দেখলাম সাত-আটজন সুন্দরী মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তাড়াতাড়ি নিজের কাপড়চোপড়ের দিকে একবার তাকালাম সব ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে । এর মধ্যে সুন্দরীরা আমার পাশ কাটিয়ে দেখি আব্বার সামনে গিয়ে হাজির। পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েগুলো আর আব্বার কথা গুলো শুনছিলাম।
-আরে আপনি আক্কাস ভাই না? টিকটক ভিডিও বানান? আব্বা দেখি সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো। হ্যাঁ আমি সেই ইয়ো ইয়ো আক্কাস।
-একটা মেয়ে বলল” আক্কাস ভাই আমরা আপনার বিরাট ফ্যান। সেলফি তুলব আপনার সাথে প্লিজ”।
আব্বা বললো “অবশ্যই গার্লস”। আব্বা সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্টাইলে সেলফি তুলছে। আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। একজন দোকানদার আরেকজন দোকানদার কে বলতে শুনলাম ” প্রতিভা আর চুলকানি কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না”। এরা সময় হলেই প্রকাশ পায়।