ভাতের টেবিলে আব্বা বলল,
চুল দাড়ির এই অবস্থা ক্যান তোর?”
ঐদিকে আব্বার বিপরীত পাশে বসা আমি জবাব দিচ্ছি না৷ এই মাসে এ যাবৎ দু’বার টাকা দিয়ে চুল দাড়ি কাটার জন্য৷
আমি দু’বারই খরচ করে ফেলেছি৷ এতে অবশ্য আমার দোষ কিন্ঞ্চিৎ৷
সেলুনের বিপরীত পাশের দোকান থেকে আসা কাচ্চির সুগন্ধি আমার সহ্য হয় না৷
এমন না যে, আমি ছ্যাচড়ার মতো সোজা কাচ্চির দোকানে ঢুকে পড়ি৷ প্রথমে সেলুনে ঢুকি৷ খানিকক্ষণ আয়না দেখি৷
নাহ! আমাকে ভালোই মানিয়েছে চুল দাড়িতে বলে বেরিয়ে আসি৷”
তারপর ঘরে ফিরে আম্মার দু’চারটা কথা শুনি৷ কথাগুলো কানে না নিয়ে পেটে হাত বুলোই৷
ছোটবোন মাঝেমধ্যে তাল দেয় আম্মা কে৷
তবুও আমি ক্ষমা করে দিই৷ ছোটবোন বলে কথা৷৷
একটু ছাড় পেলেই মাথায় উঠে বসে৷
শাস্তিস্বরূপ কৌশলে তার জমানো টাকা মেরে দিয়ে আরেকবেলা বিরিয়ানী মেরে আসি৷
তারপর ঘরে শুরু হয় তুফান৷ আমি রুমে ঢুকে জোরে জোরে গান বাজিয়ে কানে তুলো গুজে শুয়ে পড়ি৷”
পরদিন সকালে ছোটবোনের চোখেমুখে ফাগের ছাপ৷ বাট আই ডোন্ট কেয়ার৷
সুযোগ পেলেই টুপ করে কামড়ে বসে৷ আমি ছাড়ানোর চেস্টা করি না৷
ছাড়াতে গেলে একটু লাগলেই আব্বার কানে যায়, আমি উনার মেয়ের দাঁত ফেলে দিয়েছি৷
আগে আম্মা আমার পক্ষে ছিল৷
এখন উনি নিরপেক্ষ৷”
“এখন বিরিয়ানীর সাথে কবির সিং দেখে আরেক ভূত ঢুকেছে৷ সারাক্ষণ খালি আয়নার সামনে কবিরকে মেলায়৷
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও, আমার প্রেমিকা নেই, আর সারাজীবন পড়লেও ঐ কবিরের মতো ডাক্তার হওয়া আমার হবে না৷”
সকালে আব্বা ঘুম থেকে তুলে বলল,
-চল৷
-কই যাবো?
-আমি চাই না তুই কবির হ৷”
আমি হা করে আব্বার দিকে তাকায় রইলাম খানিকক্ষণ৷ তারপর বললাম,
-কবির কে?”
-বখে যাওয়া ছেলে৷ চুল দাড়ি লম্বা৷ মেয়েদের পেছনে ঘুরে! তুইও নাকি আজকাল ঘুরছিস৷
ও হ্যা কবিরের হোন্ডাও আছে নাকি৷
তুইও না সেদিন টাকা চাইলি হোন্ডা কিনবি বলে!”
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে গেলো আব্বা৷
ছোটবোনের দিকে তাকালাম একবার৷ মুখে চুরি করে বিশ্বজয়ের হাসি৷
গেটের বাইরে হাশেম চাচা দাঁড়ানো৷ উনিও ছেলেকে সাথে নিয়ে এসেছেন৷
ছেলের নাম অনিক৷ আমার বছর দুয়েকের ছোট৷
তার অসহায় চেহারা দেখে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পেলাম না৷”
নাপিতের সামনে যেতেই বেঁকে বসলাম৷ কাচ্চির সুগন্ধি আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে৷
শেষমেষ শান্তি চুক্তির পর রাজি হলাম৷ চুলে আব্বার প্রিয় রেসলাম “জন সিনা’র” কাটিং দিয়ে আব্বার পেছনে মুখ লুকিয়ে বাসায় ফিরছি৷
ওজন আরেকটু কম হলে আব্বাকে কোলে নিতে বলতাম৷
আমি মিনমিন করে বললাম,
কী কাটিং দিছো? চোরের মতো লাগতেছে৷”
আব্বা গলাঝাড়া দিয়ে বলল,
তুই ভালো মানুষ নাকি? সপ্তাহে ক’বার পকেট মারিস? আমারটা না হয় মারিস৷
ছোটবোনের ব্যাংক আর আম্মার ব্যাগ! সব মেরে দিতে হবে?”
প্রেম-টেম করিস নাকি?”
-এখন খুচরো পকেট মারি৷ প্রেম করলে দু’পকেটই মেরে দিবো৷
আচ্ছা তখন বড়চুরির জন্য আমাকে ন্যাড়া করে দিবে?”
রাতে খেতে বসেছি৷ ছোটবোনের ভার্সিটি এডমিশনের কথা হচ্ছে৷ তার ইচ্ছে সে দূরে গিয়ে পড়বে৷
সাথে তার বান্ধবী হাশেম চাচার মেয়েও থাকবে৷ তারা বড় হয়েছে৷ মুক্ত পাখির মতো উড়বে৷ আব্বা রাজি৷ আম্মা প্রথমে নাহু নাহু করলেও এখন রাজি৷ মেয়ে উনাকে পটিয়ে ফেলেছে৷
উনাদের মতে, আমার ছোটবোনই পৃথিবীর একমাত্র সাদাসিধে মেয়ে৷”
আমি আব্বাকে বললাম,
কবির সিং এর প্রেমিকাও সাদাসিধে ছিলো৷ ভাজা মাছ উল্টায় খায়তে জানতোনা৷
কী থেকে কী হয়ে গেল আব্বা মেয়েটা৷ আজ যদি মেয়ে বাসায় থেকে পড়ালেখা করতো!
মেয়েটার বাবা-মা যদি একটু সচেতন হতো৷
লজ্জার কথা কী বলবো আব্বা৷
আপনি বরং মোড়ের চায়ের দোকানদার ছেলেটার কাছে বাকিটা খোঁজখবর নিয়েন৷”
বয়ান শেষ করে টুপ করে উঠে পড়লাম৷ ছোটবোনের দিকে তাকালাম একবার৷ ঝিম মেরে বসে আছে৷
ওর মন খারাপ হলেই এভাবে বসে থাকে৷
আব্বাও চিন্তিত আমার কথা শুনে, সাথে আম্মাও৷
এই সুযোগে চোরা কাটিং স্বার্থকটা বজায় রাখার্থে এক যোগে আব্বার পকেট, আম্মার ব্যাগ আর ছোটবোনের টাকা জমানোর ব্যাংক মেরে পেটে হাত বুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম৷”
সকাল হতেই দরজায় টুকটুক শব্দ৷ আমী দরজায় কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম,
-কে?”
ওপাশ থেকে আব্বার গলা শুনলাম৷
আমি ভয় পাচ্ছি কেন? চোরা কাটিংতো মেরেই দিয়েছি৷
দরজা খুলতেই আব্বা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন৷ তারপর কাঁধ চাপড়ে বললেন,
কবীর সিং এর নায়িকার তোর মতো একটা বড় ভাই ছিল না বলে…
তোর এই বড়ভাইখোচিত দায়িত্ববোধের পুরষ্কার হিসেবে আমার দু’পকেট, তোর আম্মার ব্যাগ আর ছোটবোনের ব্যাংক ডাকাতির অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম৷ নয়তো ন্যাড়া বানিয়ে দিতাম আজ৷”
আমি আবেগে আব্বাকে জড়িয়ে ধরলাম৷ ছোটবোনের সাথে চোখাচোখি হতেই,
“কী কেমন দিলাম?” সূচক একটা হাসি বেরিয়ে আসলো আমার চোরাভাবওয়ালা মুখ দিয়ে৷”
পকেটের ফোনটা কাঁপছে৷ মিতুর কল ধরতেই আদর করে ডাকা নামটা ডাকল৷
আমি সাফ করে বলে দিলাম,
আমাকে কবীর ডাকবা বুঝেছো৷”
ওপাশে মিতু অবাক হয়েছে৷ আমি ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেললাম৷ কবীর ফোনে বেশী কথা বলেনা৷
আয়নার সামনে যেতেই মনে পড়লো, আমি আর কবীর নেই৷
এখন আবার মিতুকে ফোন দিবো৷ বাবু, সোনা বলে রাগ ভাঙাবো৷ অথচ মেয়েটা আমার প্রেমিকা না!”