“সব প্রেমিকারাই প্রেমিকা হওয়ার আগ পর্যন্ত সুন্দর থাকে !” এমন কথা শুনে শুভ যারপরনাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । তূর্য লেবু মিশানো চায়ের কাপটা মুখে ঠেকিয়ে আবার নামিয়ে নিলো । কি মনে করে যেন আরেক চামচ চিনি চায়ে মিশিয়ে নিয়ে বেঞ্চে এসে বসলো । শুভ তখনো তূর্য’র দিকে তাকিয়ে আছে প্রশ্নের দৃষ্টিতে । প্রেম হলেই মেয়েদের চেহারা বদলে যায় নাকি ?
সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে তূর্য তার মুখের ভঙ্গিটা বেশ বিশ্রী করে নাক দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো, “বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা ?” শুভ ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানান দিলো । শত হোক এলাকার বড় ভাই বলে কথা । তাকে সরাসরি না বলাটা শুভ’র সমীচিন মনে হয়নি বলেই এই নীরব অসম্মতির পন্থা অবলম্বন । তূর্য শুভর মাথা নাড়ানো দেখে একটু নড়েচড়ে বসলো, তারপর কিছুক্ষণ খ্যাক খ্যাক করে গলাটা পরিষ্কার করে নিলো । কিছুটা সিরিয়াস হবার ভঙ্গি করে শুভকে জিজ্ঞেস করলো, “আমি এই পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছি জানিস ?”
– না তো ভাই ।
– আন্দাজ করার চেষ্টা কর দেখি !
– আমি কিভাবে জানবো ভাই ? এসব কি আন্দাজে বলার বিষয় ?
– বল । অন্তত চেষ্টা তো করতে পারিস !
অগত্যা শুভ মাথা চুলকে বলে ওঠলো, “তিনটা ? নাকি চারটা ?” শুভ’র কথা শুনে তূর্য হা হা করে হাসতে লাগলো, যেন শুভ খুব মজার একটা কথা বলে ফেলেছে । হাসি থামিয়ে সিগারেটে টান দিয়ে, ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো, “গত কালকে যেটাকে পটিয়েছি ওই মেয়েটা যশোর থাকে । চিন্তা করতেছি এই মাসের মধ্যেই অর্ধশতক পূর্ণ করার মিষ্টি খাওয়াবো তোদেরকে ।”
শুভ্র আরো বেশি অবাক হয়ে যায়, মুখটা হাঁ হয়ে আসতে চায় । তূর্য সিগারেট ফেলেই পা দিয়ে পিষে ফেললো । তারপর বললো, “এবারো বিশ্বাস হয়নি তো ?” উত্তরে শুভ আবারো মাথা নাড়ালো । “শোন তাহলে । খুব শখ করে আমি আমার চেয়েও তিন বছরের বড় একটা মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলাম, কিন্তু প্রথম প্রেম ভেঙে গিয়েছিল মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় । খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি ।”
– সরি ভাই । আমি জানতাম না ।
– পুরোটা শোন আগে । কথা বলছিস কেন ?
– আচ্ছা বলো । শুনছি ।
যদিও হৃদয় ভাঙার জিনিস না তবু মনে হয়েছিল যেন আমার হৃদয় ভেঙে কয়েক টুকরা হয়ে গিয়েছে । তারপরও প্রেম এসেছে আমার জীবনে । প্রথম প্রেম ভেঙে যাওয়ার বিরহেই খন্ডিত হওয়া আমার সেই হৃদয়ের প্রতিটা খন্ডে একজন করে একসাথে পাঁচ জনের সাথে প্রেম করেছি আমি । কখনো চারজন, কখনো পাঁচজন ! এভাবেই পঞ্চাশটা হয়েছে ।” শুভ আর নিজেকে চুপ রাখতে পারে না । হড়বড় করে বলে ওঠে, “একসাথে পাঁচজনের সাথে ? কিভাবে সম্ভব ভাই ? ধরা খাও নাই কখনো ?” তূর্য আবার হেসে ওঠে বলে, “খাইছিলাম একবার । এক জনের সাথে ঘুরতে গিয়ে অন্য আরেকজনের সাথে দেখা ।”
– পরে কি ? ব্রেক আপ ?
– আরে নাহ । তানিয়ার কাছে বললাম রিমা আমার কাজিন, আর রিমার কাছে বললাম তানিয়া আমার কাজিন ।
– ভাই তুমি পারোও বটে ! আমি হলে নিশ্চিত গণধোলাই খেয়ে হাসপাতালে যাইতাম !”
– হা হা হা । কথায় আছে না ? বুদ্ধি থাকলে ঘর জামাই থাকতে হয় না !
– তা যা কইছো ভাই ।
কিছুক্ষণের জন্য দু’জনই চুপ করে যায় । নীবরতা ভাঙে তূর্যই, ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক যে তা ওর মনেই থাকে না । আজ শুভকে সব বলে দিতে ইচ্ছা করছে ওর । “একটা সময় ছিল যখন কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই আমার চোখ বড় হয়ে যেতো । যখন দেখতাম তাদের বয়ফ্রেন্ড আছে, তখন নিজের সাথে তুলনা করতাম । ওদের মধ্যে কি যে আছে ! কেন ওর সাথেই প্রেম করতে হবে ? এক কথায় নিজেকে বেটার অপশন ভাবার প্রবণতা চলে এসেছিল । কোন সুন্দরী মেয়ের প্রেম থাকতে পারে এটা আমার সহ্য হতোনা অথচ সেই সময়েই হয়তো আমার তিন থেকে চারটা প্রেমিকা আছে । তবুও আমি সুযোগ খুঁজে বেরাতাম কিভাবে কাকে হাত করা যায় ।” – একটানা কথাগুলো বলে বড় নিঃশ্বাস নিলো তূর্য ।
– ভাই ! তাহলে কি এটা তোমার কোন রোগ ?
– তা তো জানি না । তবে এখন আর এমন মনে হয় না । যতোই থাকুক না কেন কখনো সন্তুষ্ট হতে পারতাম না । চারটা মেয়ের ব্রেকআপ করিয়ে প্রেম করেছিলাম ।
– কিন্তু কথা হলো, এতো গুলো ব্রেক আপ করলা ক্যামনে ?
– তন্বীর সাথে যখন প্রথম প্রথম পরিচয় তখন কত যে ভাল্লাগতো ওরে । এই বড় বড় চুল কোমড় পর্যন্ত । দেখলেই বোবা হয়ে যেতাম । কিন্তু রিলেশন হওয়ার পরে চুলগুলো দেখেই আমার অস্বস্তি লাগতো । আর ভালো লাগলো না । ছুতো খুঁজতে লাগলাম ব্রেকআপ করে ফেলার জন্য । চুল কেটে ফেলতে বললাম, এটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হলো । একপর্যায়ে ওকে বেশ কয়েকটা গালি দিয়ে সব শেষ করে ফেললাম ।
– এতো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল মুগ্ধতা ?
– মুগ্ধতা ফুরিয়েই যায় ।
তূর্য তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাকিয়ে হাসে শুভর নির্বুদ্ধিতায় । চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতে দিতে বেঞ্চ থেকে ওঠে পড়ে। মুচকি হেসে বলে, “প্রেমের আগে মহারাণী, প্রেম ফুরাইলে চুতমারানি ।”