পথশিশু

পথশিশু

-“ভাইয়া আমাকে কিছু টাকা সাহায্য করুন তো!” আমি এই কথাটি শুনে মেয়েটির দিকে ভুত দেখার মত করে তাকালাম। কখনো কোন ভিক্ষুক এমন দাবী নিয়ে সাহায্য চায়না। তাছাড়া এই মেয়ে ভিক্ষুক হতেই পারেনা। তাহলে এভাবে সাহায্য চাচ্ছে কেন!

–“কি ভাইয়া এভাবে তাকায় আছেন কেন! দিলে দিবেন না দিলে না!”

আমি মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়েই ডান পকেটে হাত দিলাম।হাতের তলে কিছু কাগজ পড়লো।সেখান থেকে একটি কাগজ বের করে তার হাতে দিলাম।সে একটা অমায়িক হাসি দিয়ে “Thank you ভাইয়া ” বলে আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে আরেকজনকে একই ভাবে ধরলো। আমি এবার মেয়েটিকে ভাল ভাবে খেয়াল করে দেখলাম।
মেয়েটি মর্ডান সাজে সেজেছে।জিন্সের সাথে লম্বা ত্রি পিচ পরা।মুখে হালকা মেকাপ। সম্ভবত বিএল কলেজের স্টুডেন্ট। কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে আমি আরো অবাক হলাম। ওই মেয়েটির মত আরো প্রায় ৩০ জন মেয়ে একইভাবে সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছে এবং প্রায় সবাই আমার মত হতভম্ব হয়ে পকেটে হাত দিয়ে, না দেখেই টাকা বের করে দিচ্ছে। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!

মেয়েগুলি আসলে কি করছে এটা আমার জানা দরকার আর জানতে গেলে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে আমাকে। ইফতারির প্রায় ৩-৪ ঘন্টা বাকি তাছাড়া এখন তেমন কোন কাজ নেই তাই থেকে গেলাম। মেয়েগুলি এক এক করে প্রায় সবার কাছে যাচ্ছে আর সবাই হতভম্ব হয়ে তাদের টাকা দিয়ে দিচ্ছে। তাদের ভিতরে কোন বিব্রতবোধ নেই। তাছাড়া তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা এই কাজটিতে যথেষ্ট আনন্দ পাচ্ছে। এর ভিতরেই হঠাৎ চারটি ছেলে একটি মেয়েকে কি যেন বললো।সাথে সাথে মেয়েটি চিৎকার করে তাদের একজনের কলার চেপে ধরে বললো,

–“রমজান মাস! নাইলে গালি খাইতি জানোয়ার গুলা!” এই শুনে বাকি মেয়ে গুলিও ওদের ঘিরে ফেলে প্রায় সবাই ওদের কিলঘুসি মারা শুরু করলো। ছেলেগুলি কিছুক্ষণ মার খেয়ে ভিড় ঠেলে ভোঁ দৌড় দিলো।কয়েকজন মেয়ে কিছুদূর পর্যন্ত ওদের পিছে দৌড়ে ফিরে এলো এবং পূর্বের কাজ শুরু করলো।

ইফতারির আর বাকি একঘণ্টা। এবার মেয়েগুলি সবাই এক হল। আমার কাছে যে সাহায্য চেয়েছিল সে সবার কাছের টাকা গুলি কালেক্ট করলো। তারপর তারা দলবেঁধে হাসিঠাট্টা করতে করতে হাটতে লাগলো। আমি তাদের পিছু নিলাম।তারা কোথায় যাচ্ছে? টাকা গুলি দিয়েই বা কি করবে? তারা প্রায় ১৫-২০ মিনিট হেটে খালিশপুর মেগা বিরিয়ানির সামনে এসে দাঁড়ালো। ওই মেয়েটি সহ চারজন ভিতরে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণের ভিতরে দোকানের কিছু কর্মচারী সহ চারজন বের হয়ে এলো। সকলের হাতে অনেক গুলি করে বিরানির প্যাকেট। তারা সবাই প্যাকেট গুলি একটি ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো।

আমি একটি রিক্সায় করে ভ্যানের পিছুপিছু গেলাম। দেখলাম ভ্যান বিএল কলেজের পুকুর পাড়ে এসে থামলো।সেখানে গিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম। অন্তত ৫০-৬০ টি পথশিশু সেখানে গোল করে বসে আছে। ভ্যান ভরা বিরানির প্যাকেট আসাতে তাদের আনন্দ দেখে বুঝলাম এরা এতক্ষণ ভ্যানের অপেক্ষায় ছিল। মেয়েগুলি এবার একটা একটা করে প্যাকেট সবার সামনে দিয়ে দিলো। বাচ্চাগুলি খাওয়া শুরু করলো।

এবার সব মেয়েগুলি একপাশে এসে দাঁড়িয়ে ওদের খাওয়া দেখতে লাগলো। মেয়েগুলির সকলের মুখে হাসি।
হাসিটা দুর্লভ হাসি।পরিতৃপ্তির হাসি। সফলতার হাসি। বর্তমানে মেয়েরা ছেলেদের থেকে কোন অংশে পিছিয়ে নেই বরং কিছু অংশে সফলতার দিক থেকে তারা ছেলেদেরকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে। তারা চাইলে দলবেঁধে এখন অনেক কিছুই করতে পারে।

আমার অনুরোধ হবে তাদের প্রতি, দলবেঁধে বাণিজ্য মেলায় বা বিনোদন মূলক কাজ না করে দলবেঁধে উপরের গল্পের মত সামাজিক কাজে এগিয়ে আসুন। সমাজকে যে আপনাদের শুধু সন্তান না, আরো অনেক কিছু দেওয়ার আছে সেটা প্রমাণ করুন। পথশিশুদের মুখে হাসি ফুটান পথশিশু আপনার মনেও হাসি ফুটাবে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত