খুব দামী রেস্টুরেন্ট, বসে আছি একা। পাশের টেবিলে বসা দুজন সুন্দরীর অতি উতসাহী কথোপকথন আর খাবারের অর্ডার আমার চোখ কাড়লো। দুটো ১০ ইঞ্চি পিজ্জা, একটি ক্যাশনাট সালাদ, তিনটি ফ্রাইড চিকেন, তিনটি থাই সুপ, সাথে আবার অন্থন। ডেজার্টও অর্ডার দিয়েছে আইসক্রিম, যার এক একটা স্কুপ এর দাম মেনুতে মিলিয়ে দেখলাম ৬৫০ টাকা! আমি অতো বেশি দামী রেস্টুরেন্টে খাইনি তেমন, দাম সম্পর্কে ধারণাও কম। তাদের অর্ডারগুলো আমার হাতে থাকা মেনু কার্ডের সাথে মিলিয়ে টুকে রেখে হিসেব করে দেখলাম বিল প্রায় ৪০০০ টাকা!
অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম যে আমার দুটো টিউশনিতে একমাস মেধা আর শরীর খাটিয়ে যে মাইনে পাই, তারা দুজন মিলে এক সন্ধায় তারচেয়ে বেশি টাকা উড়াচ্ছে! আমি একটা কফির অর্ডার দিয়েছিলাম, কফি-টা এসে পড়লো। কফি খাচ্ছি আর ওদের কথা শোনার চেষ্টা করছি তাদেরকে না বুঝিয়ে। বারবার ঘড়ি দেখছে আর লাল জামা পড়া একটু নাদুস নুদুস মেয়েটা বলছে যে আর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই আসবে সে, ছেলেটাও লাল টি-শার্ট পড়ে আসবে। সাদা জামা পড়া মেয়েটাকে গল্পের সাইড নায়িকা মনে হলো! কথোপকথনে বুঝলাম ফোনে পরিচিত কোন ছেলের সাথে প্রথম দেখা হবার কথা আজ তাদের, সেখানে লাল জামা পড়া মেয়েটিই গল্পের মূল চরিত্রে আছে।
সাদা জামাঃ ছেলেটির নাম কিরে?
লাল জামাঃ ইউসুফ
সাদা জামাঃ করে কি, আর তোর পরিচয় কিভাবে?
লাল জামাঃ পড়াশুনা করে।ফোনে পরিচয়, গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। একেবারে ভোদাই মার্কা যারে বলে আরকি, জীবনেও মনে হয় প্রেম টেম করেনি আগে, মেয়েদের সাথে মেলা-মেশাও না।
সাদা জামাঃ আজকে হ্যাভি খানা হবে রে মাম্মা!
লাল জামাঃ হ, এজন্যেই তো তোকে নিয়ে আসলাম। আজ হ্যাভি বাশ দিবো ওই বলদাকে।
সাদা জামাঃ পোলার টাকা পয়সা আছে তো? নাকি আবার ফকিন্নি মার্কা?
লাল জামাঃ অতো বুঝে কাজ কি আমার! আমাকে ভালোবাসে বলসে, আমিও বলসি। ভালোবাসলে তো খাওন দাওন নিয়মিত দিতেই হবে, নাহলে প্রেম অতো সস্তা নাকি!! হাহা, ভোদাই একটা। আই লাভ ইউ বলসি আর লুতুপুতু হয়ে গেছে, মনে করে নিয়েছে আমি তার বউ হয়ে গিয়েছি! হাহা
সাদা জামাঃ আচ্ছা, বলদা যদি এসে দেখে এতো খাবার অর্ডার দিয়েছি, কি যে করবে! এতো টাকা থাকবে তো?
লাল জামাঃ আমি ওকে বলেছি আমার খাবার দাবার খুব পছন্দ, আজকে পেট ভরে খাবো, যেন কোন কৃপণতা না করে।
সাদা জামাঃ বেচারা!! হাহা
লাল জামাঃ ও তো ফোন ধরেনা। সব সময় মিসকল দেই আর ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই কল ব্যাক করে, আর আজকে এই সময়ে ফোন ধরছেনা! আজকে আসুক, মজা বুঝাবো এই শালাকে।
সাদা জামাঃ এই, খাবার তো এসে পড়লো, তোর উনি তো এলো না! লাল জামার চেহারায় কেমন এক বিরক্তি, অনিশ্চয়তা আর ক্ষোভ দেখতে পেলাম স্পষ্ট।
লাল জামাঃ আজ পর্যন্ত যত ছেলের সাথে দেখা করেছি, কেউ এতো দেড়ি করেনি, আর ও ১ ঘন্টা লেট প্রায়।
কাহিনিটাই তো বুঝতেসিনা। ওরে এখন চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করতেছে। খাবারও শেষ প্রায়, বিল দিবে কে! ওরে বাশ দিবো ভেবেই না এতো খাবার অর্ডার দিলাম।
সাদা জামাঃ আমার কাছে কোন টাকা নেই আগেই বলে রাখছি!
কফির বিলটা দিয়ে সার্ভিস বয়কে আরো ৫০ টাকা বকশিশ দিয়ে মনের আনন্দে মেয়ে দুটোর সামনে দিয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে বের হয়ে গেলাম শিষ দিতে দিতে। ঈদ ঈদ একটা ভাব বিরাজ করছে মনের মধ্যে। নেভী ব্লু শার্ট পড়ে নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা আগেই এসে বসেছিলাম ওকে চমকে দিবো বলে!!! মোবাইল থেকে সিমটা খুলে ডাস্টবিনের দিকে ছুঁড়ে মারলাম। ৪০০০ টাকা আর পুরো একটি জীবন বেঁচে যাওয়ার খুশিতে একটা সিম কার্ডের বিসর্জন তো দেয়াই যায়।