স্লামালাইকুম স্যার। গ্রামীণ ফোন কাস্টোমার কেয়ার থেকে সজীব বলছি। ওয়ালাইকুম সালাম বলার আগে আমি ভালো করে নাম্বারটা আবার দেখলাম। গ্রামীন ফোন কোনোভাবেই এই নাম্বার থেকে ফোন দিবে না। আমি নিশ্চিত এটা কোনো বাটপারের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে একটা গেম প্ল্যান করে ফেললাম। বললাম, ওয়ালাইকুম সালাম। বলেন সজীব ভাই। কেন ফোন দিয়েছেন ?
স্যার, গ্রামীণ ফোনের লাকি ড্র তে আপনার নম্বরটি বিজয়ী হয়েছে। গ্রামীণ ফোনের পক্ষ থেকে আপন পাবেন ২০ লক্ষ টাকার প্রাইজমানি। অভিনন্দন আপনাকে। আমি আনন্দিত হবার ভান করে বললাম, তাই নাকি? শুক্কুর আলহামদুলিল্লাহ। জ্বি স্যার তাই। বললাম, তো টাকা পাঠাইয়া দেন তাইলে। আজকাল হাত একদম খালি অবস্থা। ফোনের ওপারে সজীব সাহেবকে বেশ একসাইটেড মনে হলো। মোরগা পাওয়া গেছে। তিনি বললেন, স্যার, অবশ্যই পাঠিয়ে দিবো। তার আগে পুরস্কারের টাকা প্রসেসিং এর খরচ বাবদ এই নম্বরে বিশ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠাতে হবে।
আমি বললাম, ঠিক আছে , পাঠাচ্ছি। পাঠিয়ে আপনাকে কল দিচ্ছি আবার। ধন্যবাদ স্যার। আধাঘন্টা পর সজীব সাহেবের ফোন আবার। স্যার, টাকাটা কী পাঠিয়েছেন ? বললাম, আমি তো লোক পাঠিয়েছি। দেখি কী অবস্থা ? খোঁজ নিয়েই আপনাকে কল দিচ্ছি আবার। ওকে স্যার। দুই মিনিট পর আমি কল দিলাম তার নাম্বারে। বললাম, আমার লোক বিকাশের দোকানে আছে। বিকাশ এজেন্টের কাছে ২০ হাজার টাকা পাঠানোর মতো ব্যালেন্স নাই। এজেন্ট ব্যালেন্স ভরছে। ব্যালেন্স ভরলেই পাঠিয়ে দিবে।
ওকে স্যার। ১৫ মিনিট পর আবার তার ফোন। স্যার, টাকাটা কি পাঠানো হয়েছে। বললাম, পাঠাতে তো পারছে না। আপনার নম্বরে নাকি একবারে ২০ হাজার যাচ্ছে না। কী করা যায় বলেন তো ? উনি বললেন, তাহলে ভেঙে ভেঙে পাঠান। আমি আরো দুইটা নম্বর দিচ্ছি আপনাকে। আমি বললাম, দেন। উনি আমাকে দুইটা নম্বর এসএমএস করলেন। আমি এসএমএসটা দেখে চুপ করে বসে থাকলাম। ১০ মিনিট পর আবার তার ফোন। স্যার, টাকাটা এখনো আসে নাই।
আমি বললাম, বলেন কী? টাকা তো পাঠিয়ে দিয়েছি। ১০ হাজার ৫ হাজার আর ৫ হাজার করে তিনটা নম্বরে। পাবেন মনে হয়। কিছুক্ষন পরে চেক করেন আবার। উনি বললেন, ওকে স্যার। আমি আবার চেক করছি। কিছুক্ষণ পরে আবার তার ফোন। স্যার, এখনো তো টাকা আসে নাই। পাঠিয়েছেন ? আমি বললাম, হ্যা পাঠিয়েছি তো। লাস্ট তিন ডিজিট ০৭২ নাম্বার থেকে। আপনার ওখানে পৌঁছায় নাই ? না স্যার। একটু অপেক্ষা করেন। মনে হয় ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে। ১০ মিনিট পর আবার তার ফোন।
বললাম, টাকা অলরেডি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার ওখানে কেন পৌছালো না বুঝতে পারছি না। আপনি কি একটু বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে দেখবেন। যে নম্বর থেকে পাঠানো হয়েছে তা হলো ওকে স্যার। আমি বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে কল দিয়ে দেখছি। কিছুক্ষণ পর আবার তার ফোন। স্যার, বিকাশ কাস্টমার কেয়ার তো বললো, কোনো টাকা পাঠানো হয় নাই। বলেন কী ? আমার পিওন কি টাকা মেরে দিলো নাকি ? দাঁড়ান দেখি খোঁজ নিয়ে। ৫ মিনিট পর আবার তার ফোন। স্যার, টাকাটা ? বললাম, আর বইলেন না ভাই। পিওনের নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। মনে হয় ব্যাটা, টাকা চুরি করে ভেগেছে। চিন্তা কইরেন না, আমি আবার পাঠাচ্ছি। ওকে স্যার।
১০ মিনিট পরে আমিই কল দিলাম তাকে। ভাই, এইবার পাইছেন ? না তো ভাই। বুঝতেছি না , সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে। টাকা পাবেন না কেন ? আরেকটু অপেক্ষা করবেন নাকি ? ওকে স্যার। ১০ মিনিট পর আবার তার ফোন। স্যার ? আর বইলেন না ভাই। এইবার যারে পাঠাইছি টাকা দিতে, সে একটা গাধার বাচ্চা। শালায় ভুল নম্বরে টাকা পাঠাইছে। সজীব সাহেব এইবার খেপে গিয়ে বললেন, আপনি কি আমার সাথে বাটপারি করতেছেন ? আমি বললাম, হ্যা, কোনো সমস্যা ?