তিন তালাক

তিন তালাক

-সপ্তাহ খানেক পরে পরীক্ষা,

বাড়ি থেকে কলেজটা বেশ দূরে। তাই কলেজের পাশে একটা বাসায় আপাতত থাকার ব্যবস্থা করলাম। তিন তলায় হলো আমার রুম, রিক্সায় করে বাসার সামনে এসে নামলাম। বেড, ব্যাগ, বাকি জিনিস পত্র নিয়ে আমি সোজা তিনতলায় রুমে গিয়ে উঠলাম। এই প্রথম বাড়ির বাহিরে থাকা, বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ব্যালেন্স নেই, গরমে বেশ অস্বস্তি লাগছে প্যান্টটা পাল্টে লুঙ্গি পরে টি-শার্ট গায়ে বের হয়ে পড়লাম ফোনে রিচার্জ করার জন্য। নিচে নেমে গেট পর্যন্ত যেতে না যেতে পিছন থেকে কে যেন এই এই বলে ডাকছে। আমি দাড়িয়ে পিছনে ফিরে দেখি অদ্ভুত সুন্দর একটা মেয়ে। এমন একটা মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়, তাও কোনভাবে নিজেকে সামলে নিলাম। মেয়েটা এসেই বলতে শুরু করলো- আপনি কে? এখানে কি? কোথায় থাকেন?

-জ্বি…আমি তিন তালাক।
-হোয়াট?
-না…স্যরি! ইয়ে মানে আমি তিন তলায় থাকি, আজই এসোছি।
-ও…এখন কোথায় যাচেছন? আর লুঙ্গি পরলেন কেন?
-ফোনে রিচার্জ করবো। কেন লুঙ্গি পরা কি নিষেধ নাকি?
-হুম…নিষেধ।

-কই এগ্রিমেন্টে তো এমন কোন শর্ত নেই। সেখানে বলা ছিলো রাত দশটার পর গেট বন্ধ, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না।
-আপনি তো বেশ অভদ্র লোক, মুখে মুখে তর্ক করেন। আমি বাড়িওয়ালার মেয়ে। সুতারং আমার কথা মানতে হবে।
-জ্বি..এখন যেতে পারি?
-হুম..আর লুঙ্গি পরবেন না।

ভার্সিটির এক বড় ভাই এর রেপারেন্সে বাসা ভাড়া পেলাম। ফোনে রিচার্জ করে রুমে এসেই শুভ’দা কে সব খুলে বললাম। তিনি সব শুনে বললেন ঐ মেয়ে থেকে সাবধান খুব পাজি টাইপ। বিকালে শুভ’দা সহ ঘুরতে বের হলাম মাত্র নিচে নামতেই পিছন থেকে মেয়েটা বললো “ঐ তিন তালাক” শুভ’দা হনহন করে হাঁটছে, আমি থমকে গেলাম। সে এসে বললো একটা কাজ করতে পারবেন?

-জ্বি….বলুন।
-বাসায় ফেরার সময় একটা বই নিয়ে আসবেন। এই নিন বই নাম আর টাকা।

আমি টাকা নিয়ে বের হলাম সারা বিকেল শুভ’দা সহ প্রচুর ঘুরলাম। আসার সময় বইটা নিয়ে আসলাম, বই আর বাকি টাকা দারোয়ানের কাছে দিয়ে দিলাম তাকে দিতে। আজ প্রথম পরীক্ষা শেষ হলো বিকালে বাসায় ফিরে দেখি শুভ’দা নেই। তাই খেয়ে একটু স্বস্তির জন্য ছাদে গেলাম। হাফ গেন্জি গায়ে, লুঙ্গিটা হাঁটু সমান তুলে গিট্টু দিয়ে আমি বীরের বেশে পূর্বে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচিছ। হুট করে কে যেন ঐ ঐ বলে চেঁচিয়ে উঠলো। পিছন ফিরে দেখি সে মেয়েটা!! আমি উল্টা দিকে দিলাম ভোঁ দৌড়। মেয়েটা থামুন বলাতে আমি থেমে গেলাম।

-কি ব্যাপার আপনি ছাদে কি করেন?
-না মানে শুভ’দা নেই তাই রুমে বোরিং লাগছিলো। ভাবলাম একটু ছাদ থেকে ঘুরে যাই।
-হুম….আপনি আবার লুঙ্গি পরলেন কেন?
-লুঙ্গি পরে নিচে যেতে বারন করলেন। উপরের কথা তো বলেন নি।
-এই আপনি এত তর্ক করেন কেন? আপনি জানেন লুঙ্গি পরলে ক্ষ্যাত লাগে।
-সে ক্ষ্যাত-খামার যাই লাগুক আমি লুঙ্গি পরবো।
-উপপপ…এ আপনি যান তো।

দেখতে দেখতে পরীক্ষা গুলো শেষ হয়ে এলো। আজ ভীষন ভালো লাগছে। কারন আজ পরীক্ষা শেষ বাড়ি যাবো। রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। সকালে ফরমাল ড্রেস পরে রেডি হলাম, আজ ভাইবা পরীক্ষা। আজই প্রথম ফরমাল ড্রেসে তাই একটু নার্ভাস লাগছে। তাড়াতাড়ি করে নামতেই সে মেয়েটার সাথে দেখা, মেয়েটা বললো-ওরে বাবা কে এটা? তিন তালাক না? বাপরে আপনার তো বেশ উন্নতি হলো। কোথায় যাচেছন?

-জ্বি..আজ আমার ভাইবা। তারপর মেয়েটা চলে যাচিছলো আমি ডাকলাম।
-শুনছেন?
-জ্বি বলেন।
-আজ আমি চলে যাবো, পরীক্ষা শেষ।

‘ও’ বলে মেয়েটা চলে গেলো। বিকেলে আমি ব্যাগ আর জিনিসপত্র রিক্সায় দিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখছিলাম, কোথাও মেয়েটাকে দেখলাম না। তারপর রিক্সায় উঠে গেট পেরিয়ে ছাদে তাকাতে দেখি মেয়েটা তাকিয়ে আছে। আমি রিক্সা থামিয়ে নেমে একটু পিছনে গিয়ে কি যেন ভেবে আবার চলে এলাম। আমার জন্য মেয়েটার কোন টান আছে কিনা জানি না, তবে মেয়েটার জন্য আমার একটা টান কাজ করছে সেটা কি বুঝতে পারছি না; টানটা ঝুলন্ত।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত