আজ সকালে নাস্তা করেছি হোটেলে। দেরী হয়ে গিয়েছিলো অফিসের জন্য। আমি সচরাচর হোটেলে নাস্তা করি না। তাও আবার একা। অফিসে পৌঁছে পাশের হোটেলে নাস্তা করার সময় অর্ডার করলাম ডিম পোচ আর রুটি ।
যে লোকটা আমাকে টেবিলে খাবার দিতে আসলো সে একটু বয়স্ক। খুব আস্তে আস্তে কানের কাছে এসে বলল– “মা আপনের ডিম পোচ টার কুসুম ভেঙ্গে গেছে। প্লেটে কাটা চামচ রাখার সময় ডিমে লেগে ভেঙ্গে গেছে প্লিজ এইটা মালিকরে বইলেন না।” আমার শরীরের লোম দাড়ায়া উঠলো। লোকটা এই ছোট্ট একটা বিষয়ে মাফ চাচ্ছে। হায় আল্লাহ !! আমি তাকে বললাম এটা কোন ব্যপার না। আমি তো ডিম এর কুসুম ভেঙ্গেই খাইতাম। এটা কোন ব্যপার না। লোকটা হাসি দিয়ে সালাম জানায়া চলে গেলো। সে যাওয়ার সাথে সাথে আমিও চলে গেলাম অন্য জগতে শরীরে লোম দাড়িয়ে যাওয়ার কারণে হারিয়ে গেলাম।
সে আমার বিয়ের পরের ঘটনা। আমার হাজবেন্ড প্রতিদিন সকালে দুইটা ডিম পোচ খেত কিন্তু কুসুম ভাঙ্গা যাবে না। সকালে তার নাস্তা বানিয়ে তাকে ডাকতে হতো। ডিম টা সে গরম খেতে পছন্দ করতো। টেবিলে বসে যখন বললো – “ডিম কই আমার?” আমি তারাতারি ডিম প্যান থেকে তুলার সময় একটা ডিমের কুসুম ভেঙ্গে গেল। মুহুর্তে খুব নার্ভাস হয়ে গেলাম। ডিম টা টেবিলে নিয়ে তাকে চোখ দিয়ে অনুরোধের ইশারায় বুঝানোর চেষ্টা করলাম যাতে ডিম টা দেখে আমার শাশুড়ির সামনে কোন কিছু না বলে। এতে আমার শাশুড়ির কথা শুনানোর একটা আশঙ্কা আছে। কে শুনে কার কথা!!! এক চিতকারে ঘর মাথায় তুলে নিলো।
” ডিমের কুসুম ভাঙ্গছে কেমনে? ধুর নাস্তাই খামু না। সকাল সকাল মেজাজ টা খারাপ করে দিছে। কতবার বলছি আমি এই কুসুম ভাঙ্গা ডিম খাই না। একটা ডিম ও ঠিক মত ভাজতে পারো না। ধ্যান কই থাকে? আমার জন্য আর কোন দিন ডিম ভাজবা না তুমি। আম্মা!! আমার ডিম শুধু তুমি ভাজবা।” বলে টেবিল থেকে উঠে গেলো। আল্লাহ গো। আমার হাত পায়ের কাপাকাপি শুরু হয়ে গেলো। এখন তো শাশুড়ির কথা শুনার পালা। আমি চুপ করে টেবিলের সামনে দাড়ায়া রইলাম।
আম্মা স্টার্ট হইলেন – ” কোন কাম ই তো পারো না। মা এ বিয়া দেওয়ার টাইমে কইছিলে আমার মাইয়া আমার থে ভালো রান্ধা জানে। হেইয়াই এখন দেখতেয়াছি। আমার পোলার মুখের দিক তাকায়া বিয়াতে রাজি হইছেলাম। আমার রান্নাঘর টারে দোযখ বানায়া হালাইছে। তোমার আম্মার ধারে কি কাম শিখছো? খালি তিরিং বিরিং করো রান্না ঘরে ঢুকলে। এটা জ্বালাও হেডা পোড়াও। যাও আজকে বিকালে বাপের বাড়ি যাও। মার ধারে যাইয়ে কাম শিক্ষে আসো। আমার বাড়িতে এইসব ছলবে না।”
আমি নিচের দিক তাকায়া কানতেছি পাশের থেকে আমার উনিও বলতেছে ” চলো তোমারে দিয়া আসি। প্রতিদিন কোন না কোন বিচার আছেই তোমার নামে .ভাল্লাগেনা ধুর!! তাদের মনে একটু দয়া হওয়ায় আমাকে আমার বাসায় পাঠানো হলো না। কিন্তু ,এরপর সারা দিন আমাকে এই এক ডিমের জন্য অনেক কিছু শুনতে হলো।
সংসার আমাদের টিকে নাই। মাঝে মাঝে এসব ঘটনা মনে পড়লে তাদের কে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হয় ” কেন করতেন আপনারা আমার সাথে এমন? খুব বেশি কি ভুল ছিলো আপনার ছেলেকে ভালবাসা? জেনে বুঝে করতেন কি? যাতে আমি এক সময় বিরক্ত হয়ে চলে যাই ঘর ছেড়ে? কই বিরক্ত করেও তো বের করতে পারলেন না। নিজেরাই বিরক্ত হয়ে গেলেন আমি কেন বিরক্ত হই না সে ভেবে ভালো থাকেন। আল্লাহ আপনাদের হিসাব নিবে” এই কথা গুলা মনে করে শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরায় কেমন যেন আগুন জ্বলে উঠলো আর লাভা হয়ে চোখ দিয়ে বের হয়ে গেলো…