বাঁশ

বাঁশ

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি মোবাইলে ৫০টা মিস কল,২০টা মেসেজ।শেষের মেসেজটা নিচে তুলে ধরা হলো,

~ঘুমা তুই কুত্তা,তোরে কইছিলাম ফোন সাইলেন্ট করবি না তুই তারপরেও সাইলেন্ট করে রাখছোস ফোন।আজ থেকে তোর মেসির সাথে কথা বলছি আর তার সাথেই দেখা করবি।বাই ফর এভার এরপরেই মোবাইলে দেখি ১১:৩০ বাজে।দেখে তো পুরা টাস্কি খাইলাম।আয় হায় করছি কি আমি,আজ উনারে নিয়া উনার বান্দুপির বাসায় যাওয়ার কথা ছিল ১০টায়।আর আমি উঠলাম এখন।রাতে প্রিয় দল আর্জেন্টিনার খেলা দেখছি তাই উনার সব রাগ রেচারা মেসির উপরেই পড়ছে।আহা বেচারাকে না জানি কতো গালি শুনতে হচ্ছে আমার জন্য।ক্ষমা করো বস,যাক এরপর কল দিলাম উনাকে। যাক ফোনটা খোলা আছে তবে,কল যাচ্ছে তো।

~হ্যালো…
~(আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে,অনুগ্রহ করে একটু পরে ) ধুর ভাবছিলাম কল রিসিভ হইছে কিন্তু না এতো কেটে দিলো।আমিও নাছোড়বান্দা,আবার দিলাম
কল।কিন্তু একি অপর প্রান্তথেকে বলছে…

~আপনার ডায়াল কৃত নম্বরটি এই মুহুর্তে বন্ধ আছে একটু পরে আবার চেষ্টা করুন।

মনেমনে কইলাম,আপাগো একটু পর আর চেষ্টা করেও লাভ নাই।বিপদসংকেত দিয়া ঝড় উঠছে এতো সহজে থামবে না গো আপা। যাক কি আর করার আছে,মোবাইলটা রেখে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রুমে আসলাম।সকালের খাবার দিয়ে গেছে খালা।খাওয়ার জন্য যখন তৈরি আমি তখনই বন্ধু হিরার কল….

~দোস্ত কই তুই?
~আসমানে দোস্ত,উড়তাছি আমি চরম মজা,উড়বি নাকি,আয় উড়ি একলগে।
~ইতরামি রাখ ব্যাটা ক্যাম্পাসে আয় এখনি।
~দেখ দোস্ত মাথা এমনেই ঠিক নাই তার উপর ক্ষুধা লাগছে।আমি তোরে গালি দেই তার আগে তুই ফোন রাখ।
~আয় বেটা তোরে বিরিয়ানি খাওয়ামু,সাথে কোক ফ্রি।
~আয় হায়,বলদায় কয় কি?দোস্ত আমি অহনো ঘুমাইতাছি না কি।তুই কিপ্টায় খাওয়াবি বিরিয়ানি আবার কোক….
~বন্ধু আসো না আগে তারপর বুঝবে।
~বিশ্বাস মইরা গেছে দোস্ত।৪০শা ৭দিন পর আসিস।
~আমগো বাংলা মেডামের কসম দোস্ত,তোরে খাওয়ামু।
~যা হ্লা এইবার বিশ্বাস করলাম।খারা আইতাছি…

অতঃপর না খেয়েই ক্যাম্পাসে গেলাম।আয় হায় বাংলা মেডামের কসম কাহিনীটা বুঝেন নাই।বাংলা মেডাম হলো ক্যাম্পাসের সব ছেলেদের ক্রাশ(আমার বাদে) তাই সবাই সত্য বলতে উনার সাহায্য নেয়।

~কিরে বলদা কি হইছে?
~দোস্ত তোরে একটা কাজ করতে হইবো।না করতে পাবি না দোস্ত।এইটা আমার সম্মানের প্রশ্ন,তোরে করতেই হইবো।
~আব্বে ফইন্নি কইয়া ফালা।
~দোস্ত ক্যাম্পাসে একটা নতুন মেয়ে আসছে।অনার্স ফাস্ট ইয়ার প্রাণীবিদ্যা বিভাগ,নাম অর্পা।দোস্ত জানোস না মেয়ের কঠিন দেমাগ।চিন্তা করতে পাবি না তুই মেয়ের কি তেজ।
~ভাই তোর দোহাই লাগে তুই আসল কাহিনীটা বল।
~আমি দোস্ত বাজি নিছি ওই মাইয়ার নাম্বার নিয়া কাইল সবার সামনে ওরে কল দিয়া কথা কমু।অহন দোস্ত যা করার তুই কর।

~আব্বে তুই খাবার অর্ডার দে।এইটা তো আমার বা হাতের খেল।দেখ খালি কি হয়।কোন মেয়েটা দেখাই দে।
~ওই যে দোস্ত ওইটা,বকুল গাছের নিছে।আর ওর সাথে যে মেয়েটা আছে ওর নাম স্বর্ণা।
~হুম্ম।দেখ তুই ওই মাইয়া নিজেই আম্রে নাম্বার দিবো।
~অসম্ভব,তুই চিনোস না বেটা।
~বাজি ৫০০।
~হা হা হা।ওক্কে মামা।

–এই যে আপু শুনছেন।
— জ্বী আমাকে বলছেন?
–হুম আপনাকেই বলছি।আচ্ছা একটু আগে আপনার সাথে যে মেয়েটা ছিলো স্বর্ণা,ও কি আপনার বান্ধবী।
–হ্যা,কিন্তু কেন?
–আসলে আমার ওর নাম্বারটা দরকার ছিলো।
–মানে ওর নাম্বার আপনি কি করবেন।আর আমাকে বলছেন কেন।কি মনে করেছেন আপনি।(রেগে)
–আসলে আপু।
–আসলে কি হ্যা,বেয়াদ…

–ওই চুপ কর।এক চটকানা দিয়া দাত ফালাই দিমু।তুই প্রাণীবিদ্যার ১ম বর্ষের না।আমি ইংলিশ ৩য় বর্ষ(ধাপ্পাবাজি)।ও আমার বোনের বান্ধবী তাই ওর নাম্বারটা দরকার ছিলো।(রেগে)
–সরি ভাইয়া বুঝতে পারি নি।(বিনয়ের সাথে)
–হুম।দেখে শুনে কথা বলবে,আর বড় ভাইদের সম্মান করতে শেখো নি।
–সরি ভাইয়া।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

–কি ব্যাপার ভাই কি হয়েছে(বন্ধু পাশ থেকে সব দেখছিলো)
–কিছুনা ব্যাটা।সামনে থ্যাইকা দুর হ।মাথা গরম আছে।
–আচ্ছা ভাই চা খাই।
–হুম চল।
–ভাইয়া আপনি স্বর্ণার নাম্বার নিবেন না।(ভয়ে ভয়ে)
–ও হ্যা দাও।একটা কাগজে লিখে দাও।
–জ্বী ভাইয়া।এই নিন ভাইয়া।
–এটা কার নাম্বার?
–ভাইয়া নিচেরটা আমার নাম্বার।আমার নাম ভাইয়া অর্পা।
–ও আচ্ছা।ঠিক আছে।
–ভাইয়া মনে কিছু করিয়েন না।
–আচ্ছা বাই।

দোস্ত খাইলি আমার টাকা আর বিরিয়ানি।তুই একটা কঠিন চিজ ব্যাটা। আমি তো খুশিতে গজগজ করতে লাগলাম।এমন সময় দেখি কিছুদুরে দাড়িয়ে আছে আমার উনি।মোবাইলটা বেজে উঠলো সেমেজ আসছে,থুক্কু মেসেজে আসছে….

~আজ থেকে সব শেষ।।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত