বুলেট ট্রেন

বুলেট ট্রেন

“চলো আজ আমি, তুমি হয়ে যাই। আর তুমি, আমি হয়ে যাও।”
“তারপর?”
“তারপরে আমি ঘুমিয়ে যাই। তুমি মুখটা বন্ধ রাখো।”
“মানে কি বলতে চাও তুমি। এই উঠে বসো, উঠে বসো, শুবে না তুমি।

কি বললে আবার বলো। আমি বাচাল হ্যাঁ আমি বাচাল। আমি বেশি কথা বলি। আমার কথা বলার জন্য তুমি ঘুমাইতে পারোনা। এই এই শুবেনা বলছি। উঠো। উঠো। তুমি, তুমি কতোক্ষণ আমার সাথে কথা বলো হ্যাঁ কতোক্ষণ? অফিস থেকে আসো রাত ৭ টায়”

“৭ টায় তো রাত না সন্ধ্যে। কি যে…”
“চুপ একদম চুপ একটা কথা বলবে। চুলের কাঁটা দিয়ে চোখ গেলে দেবো। কি যেন বলছিলাম। এই বলো কি বলছিলাম।”
“বলছিলে সকাল ৭ টায় তুমি বাথরুমে গিয়ে দেখো পানি নাই। তাই এই বাসা চেইঞ্জ করবে।”
“এই কথা আবার কখন বললাম?”
“এই যে একটু আগে!”
“একটু আগে কি এইটা বলেছি। দেখো তুমি জানো মাথা গরম থাকলে আমি একটু আগের কথাই ভুলে যাই। প্লিজ বলো কি বলছিলাম। “বলছিলে কাল তো ঈদ সকাল ৭ টার আগে উঠতে হবে। ঈদের নামাজে যেতে হবে।”

“সকাল ৭ টায়, ৭ টায়। হ্যাঁ হ্যাঁ ৭ টায় এবার মনে পড়ছে। তুমি রাত ৭ টায় অফিস থেকে আসো। আমায় উল্টাপাল্টা এতোকিছু বললে কেন বলো? কেন বললে? যাক গে, ৭ টার পর অফিস থেকে এসে কতোক্ষণ কথা বলো আমার সাথে? কয়টা কথা বলো গুনে গুনে বলো আমায়? আর তুমি বলো আমি বাচাল? আমি বেশি কথা বলি? আমার কথা বলার জন্য তোমার ঘুম হয় না?” এমন সময় দরজায় নক হলো। ইয়েস বলতেই দেখি আমার ছোট মেয়েটার মাথা উকি দিচ্ছে।

“কি হলো মামনি। ঘুমাওনি। তোমার আপু কই?”
“বাবা তোমরা এতো জোরে জোরে ঝগড়া করছো কেন?”
“ঝগড়া না মামনি। কাল তো কোরবানী ঈদ। এই জন্য চাল গুড়ি করছি চালের রুটি খাওয়ার জন্য”
“কি করে করছো বাবা?”
“তোমার আম্মুর মুখে চাল দিচ্ছি আর তোমার আম্মু বক বক করতে করতে চাল গুলো গুড়ো হয়ে যাচ্ছে।”
“হিহিহি! বাবা, তুমি এতো মিথ্যা কথা কি করে বলো ?” বউ এক ধমক দিয়ে মেয়েকে নিজের রুমে পাঠিয়ে দিলো।

“তুমি মেয়েকে বকলে কেন?”
“বকবো না তো কি করবো? আমার ঘরে তো দুইটা বেঈমান হইছে। সারাটা জীবন আমি পেলেপুলে বড় করলাম আর মেয়ে দুইটা বাপের জন্য একেবারে দরদে মরে যায়।”

“বাচ্চারা ভাল খারাপ ভাল বুঝে।”
“কি বললে আমি খারাপ।

ওহ এখন তো খারাপ হবোই। আমি বাচাল, আমি খারাপ। আমার জন্য ঘুমাতে পারো না। বিয়ের আগে তো কত্তো রসিয়ে রসিয়ে কবিতা লিখতে আমায় নিয়ে, “তোমার কথা শুনলে মনে হয় ঝর্ণার শব্দ শুনি/ তোমার কথা বলার সময় চোখ কাঁপে, ঠোঁট কাঁপে/ কিন্তু আমি জানি কাঁপে আমার ভালোবাসা/ সারাজীবন এই ঝর্ণাধারায় স্নান করতে চাই, তুমি আমার হবে।” এখন তোমার ঝর্ণাধারার শব্দ শুনলেই খুব বিরক্ত লাগে তাই না? সব পুরুষ গুলাই এক। বিয়ের আগে কি মধুর মধুর কথা। আমার পুরা লাইফটা তুমি শেষ করে দিছো আর এখন বলছো আমার কথার জন্য তোমার ঘুম আসেনা?” এক নাগারে এতোগুলো কথা বলে হাপাচ্ছে বউ। বউকে জিজ্ঞাস করলাম।

“পৌঁছায় নাই এখনো?”
“কি? কি পৌঁছায় নাই? কিসের মধ্যে কি বলো এসব?”
“তোমার কথার বুলেট ট্রেন। কমলাপুর থেকে নেত্রকোনা পৌঁছায় নাই? একটু পরেই তো বলবে কালই বাপের বাড়ি চলে যাবো। তোমার কথার ট্রেনতো নেত্রকোনা আমার শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা। পৌঁছে গেলে যাও হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ো। অনেক জার্নি করেছো।” এমন সময় আবারো দরজায় নক। ইয়েস বলতেই আবার ছোট মেয়ের মাথা উকি দিলো।

“কি হলো মামনি ঘুমাও নাই?”
“না বাবা।”
“কেন মামনি, আপু কি করে?”
“আপুনিতো ঘুমাই গেছে বাব্বা। ওহ বাব্বা?”
“কি সোনা?”
“আম্মুকে ফোন দিয়ে বলোনা। নানাজান আর নানুমনি থেকে আমার জন্য ঈদের সালামি নিয়ে আবার কথার ট্রেনে করে চলে আসতে।”
“হা হা হা…”

“সোহানা তুই গেলি” এই বলে বউ রাম ঝাড়ি দিয়ে মেয়েকে আবারো রুমে পাঠালো।
“মেয়ে দুইটাও বাপের মতোই হইছে। দেখছো আমাদের দরজায় আড়ি পাতে। সব তুমি শিখাইছো।”
“তুমি এতো জোরে কথা বলো যে পাশের বাড়ির লোকও শুনতে পায়।”
“বাজে কথা বলবে না। একদম বাজে কথা বলবেনা। কাল ঈদ আর আজ আমার সাথে ঝগড়া করছো।”
“আসো ঘুমিয়ে যাই।”
“তোমার সাথে কে ঘুমাবে? আমি সোহানার সাথে ঘুমাবো।”

বউ বালিশ নিয়ে চলে গেল। একটু পরেই দেখি সোহানা চিল্লাচ্ছে- ইয়ে আম্মু আমার সাথে ঘুমাবে। তারপরে ধুম ধাম কয়েকটা শব্দ পেলাম। তারপর সব চুপ। একটু পরে শুনি বউ গান গাইছে। সোহানা নিশ্চয়ই ওর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। মেয়ে দুইটাকে যে ওদের মা কতোটা ভালবাসে সে শুধু আমিই জানি। বউয়ের গুনগুন গান শুনতে শুনতে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত