জেনারেশন ও আমার বউ

জেনারেশন ও আমার বউ

চলন্ত রিক্সার মধ্যেই বউ আমাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে লাগল। রিক্সাওয়ালা পিছন ফিরে দেখছিল আমার ধমকানিতে সে সামনের দিকে ফিরে রিক্সা চালাতে লাগল। রাস্তার মধ্য আমি নাকি কোন মেয়েকে দেখেছি এই বলে সে কিল, ঘুষি মেরেছিল। অথচ আল্লাহর কসম কেটে বলেছিলাম আমি কাউকে দেখিনাই গো বউসোনা, তাতেও কাজ হয়নি সে এবার ঠোট ফুলিয়ে ফুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করল.. বল ঐ মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক কি! বল..নইলে রিক্সা থেকে ঝাপ দিয়ে মরে যাব।

ওর কান্ড আর কথা শুনে আমি হাসবো নাকি প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে রিক্সা থেকে নেমে যাব সেটা বুঝে ওঠার আগেই রিক্সা বাসার সামনে এসে দাঁড়াল। বউ আমার গজগজ করতে করতে বাসায় ঢুকে গেল। রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালাম, আর ভাবতে লাগলাম.. ইয়া মাবুদ তুমি এ কি মুসিব্বত দিলা আমার কপালে!!অবশ্য এক্ষেত্রে আমার মায়ের দোষটাই নিরানব্বই দশমিক নিরানব্বই পার্সেন্ট, কেননা মা যেদিন এ মেয়েকে দেখতে গিয়েছিল সেদিন মা যখন বলছিল মেয়ের সব কিছুই ভাল লাগছে কিন্তু…এই কিন্তুর পরের বাক্যটা সেদিন আর মা বলে উঠতে পারেনি তার আগেই এই মেয়ে সবার সামনেই কেঁদে দিয়েছিল!

সে হয়ত ভেবেছিল মা নেগেটিভ কিছু বলতে যাচ্ছে, মা এমন মেয়ে সংসারে আনল যে সারাদিন মেয়ের পিছন পিছন টিস্যু পেপার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে সে কথা আমার মায়ের চেয়ে আর কে ই বা ভাল জানত! সব বুঝে শুনে আমার কপালে এই আইক্কাওয়ালা মুসিব্বত এনে দেবার জন্য মায়ের প্রতি খুব রাগ হয়। সাত পাচ ভাবতে ভাবতে দরজার সামনে গিয়ে দেখি সেটা ভেতর থেকে লাগানো! তিন চারবার নক করার পর ভিতর থেকে ১১ দিনের বিয়ে করার বউ বলে দিল রাস্তায় যেয়ে সেই মেয়ের সাথে থাকতে তাকে যেন না জালায় আর। এই ১১ দিনে এইটুকু বুঝেছি যে এই মেয়ে আজন্মের জিদ্দি কিছু বলে লাভ নেই, তাই আমি নিচের চায়ের দোকানে চলে গেলাম। দুধ মালাইকারির চা টা যখন মুখে দিতে যাব তখন ই দেখি বউ ফোন দিয়েছে, দ্রুত রিসিভ করলাম কারন তার ফোন রিসিভ করার আগে চায়ে চুমুক দিলাম কেন সেটা নিয়ে আবার ঝগড়া বাধাবে।

রিসিভ করতেই বলে উঠল- তুমি এত লুইচ্চা কেন!! হু..রাস্তায় মেয়ে দেখতে ঠিক চলে গেলা!! এক্ষুনি বাসায় আসো। এই বিয়ে করার পর বউয়ের পারমিশন ছাড়া হিসু ও করতে পারিনা, পাছে কান্নাকাটি করে পুরো বিল্ডিং এর লোক জড়ো না করে এই ভয়ে আমি দাতে দাত চেপে সব সহ্য করে যাচ্ছি। হাজার হলেও ভদ্র লোক বলে কথা,আর এই বিল্ডিং এ আমার অনেক ছাত্র থাকায় আত্নসম্মান নিয়ে এক ফোটাও স্যাক্রিফাইস করতে রাজিনা, আমার আত্নসম্মানের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে দেয় আমার এই বউ। বাসায় ফিরে ফকিরের মত করুন সুরে বললাম – বউসোনা.. ও বউসোনা..আমি একটু ছাদে যায়?? একটা সিগারেট খেয়েই চলে আসব।

বউ বলল, যাও তবে ঐ লুঙ্গি পরে খালি গায়ে যাবা আর বেনসন সিগারেট খেতে পারবা না, আকিজ বিড়ি খাবা। পাশের ছাদের মেয়েরা যেন ভাবে তুমি এই বাড়ির কাজের লোক – একদম ফ্লার্ট করবে না, আর ছাদ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আমার কাপড়গুলো সব ধুয়ে দিবে। বড়সড় ধাক্কা খেলাম কেননা কাপড় পরশুই ধুয়ে দিয়েছিলাম, আজ আবার কেন!! আমি ভয়ে কিছু বলতেও পারলাম না, জানি বলে লাভ নাই। ছাদে যাবার মুডটাই নস্ট করে দিল এই মেয়ে। কাপড় কাচছি তো কাচছি… অমনি বাথরুমের দরজায় বউ নক করে বলল – বাইরে আসো এক্ষুনি বাইরে আসো। বাইরে বের হয়ে দেখলাম বউ আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কি হয়েছে এই প্রশ্নটা করার ও সাহস পেলাম না। বউ আমার দিকে চোখমুখ কুচকে বলল – এই তোমার ফটোতে এই মেয়ে লাভ রিয়েক্ট দিল কেন!!?? কে এই মেয়ে?? এইটাই সে মেয়ে যাকে রিক্সা থেকে দেখেছিলা??

আমি অনেক বোঝাবার চেস্টা করলাম কিন্তু সে বোঝার পাত্রী না, শেষমেশে এত দিনের ভাল বান্ধবী নিপাকে মা ডেকে বউকে শান্ত করে কাপড় ধুয়ে আসলাম। বউ বলল- মিথুন এই ঠান্ডা খাবার খেতে পারব না তুমি রান্না করে দেয়া মহিলাকে ফোন দিয়ে বল নতুন তরকারি রেঁধে দিয়ে যেতে আর শোন আমি তরকারি গরম করেও খেতে পারব না, মহিলাকে শীগগির ফোন দাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, রান্না করে দেয়া মহিলা এক বেলার বেশি রাঁধতে পারবেনা সেই কন্টাক্ট আগেই ছিল কিন্তু যদি আসে এই আশায় ফোন দিতেই মহিলা অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিল, বাধ্য হয়ে আমিই রেঁধে নিয়ে আসলাম, বউ প্রশংসা করে আমার সামনেই তিন পিছ চিকেন খেয়ে নিয়ে আমার জন্য ছোট একটা মাংসর পিছ রেখে চলে গেল, এত রাগ হয়েছিল যে ইচ্ছে করছিল ঐটাও জোর করে গিলিয়ে দি কিন্তু না এই কান্ড ঘটানো তো দূরে থাক স্বপ্নে দেখেলেও বউ আমার গলা টিপে ধরবে। তাই চুপ চাপ শুধু ডাল দিয়ে খেয়ে উঠে আসলাম আসার সময় ঐ এক পিছ চিকেনকে অনেক গালি দিয়ে আসলাম, ওর প্রান থাকলে আস্ত একটা মুরগি হয়ে আমাকে ৎোকা দিয়েই মেরে ফেলত।

এই আজ নিয়ে টানা ১২ দিন ফ্লোরে ঘুমাচ্ছি আর বউ আমার শিমুল তুলোর কোলবালিশটা জড়িয়ে ধরে ঘুমায়, অথচ ভেবেছিলাম বউয়ের সাথে কত্ত রোমান্স করব, বউ রেঁধে খাওয়াবে, সকাল বিকেলা আদর করবে!! শালার কুত্তা কপাল আমার। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বউ এখনো ঘুমাচ্ছে! কেন জানি মেজাজ বিগড়ে গেল আমার, বাইরে বেরিয়ে গেলাম এখন সোজা যাব রাহাতের বাসায়, আসার সময় একটা কাগজে লেখে এসেছি – তুমি ভাল থেকো,আমি এমন করে আর পারছিনা। তিনদিন পর বাসায় ফিরলাম, মানুষের বাসায় আর কতদিন থাকা যায়, বাসায় ফিরতেই বউ আমাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল! খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল – মিথুন.. ও মিথুন আমি আর এমন করব না, আমি সব করেছি আম্মুর কথায়। এবার চমকে গেলাম, দেখলাম আমার মা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, এসে বলল :- মাত্র ১২ দিনেই বিরক্ত হয়ে গেলি একটা মেয়ের উপর! সারাজীবন সহ্য করবি কিভাবে! ? তোদের জেনারেশনের গায়ের চামড়া খুব পাতলা রে বাবা খুব পাতলা।

মিথুন.. তোর মনে আছে তুই একটা শার্ট কখনো দুদিন পরতি না, একদিন পর পর তোর কাপড় ধোয়া লাগত আমার সেই কোমরের ব্যথা নিয়ে তোকে কিছু বলতাম না তুই কস্ট পাবি ভেবে। তিন চার পদের তরকারি থাকতেও সেই মধ্য রাতে তোর জন্য গরুর কালো ভূনা করতে হত তাছাড়া তুই খেতে পারতি না, অথচ সেই সময়টাতে ঘুমে দু চোখ বুজে আসত আমার তারপরেও কিছু বলতাম না বরং প্রশান্তি পেতাম এই ভেবে আমার ছেলেটা তো কয়েকটা ভাত খেতে পারছে। আর কদিন পর পর ই বায়না ধরতি এটা ওটা কিনে দিতে কিন্তু কখনো বোঝার চেস্টা করতি না আমাদের সেই সামর্থ্য নেই দুদিন পর পর নতুন জিনিস কিনে দেবার তারপরেও আশেপাশের মানুষের ভয়ে চুপ করে কস্ট হইলেও সব সয়ে যেতাম ঠিক যেমন গত ১২ টা দিন তুই সয়ে গিয়েছিস, কিন্তু বাবা তুই অল্পতেই হাপিয়ে গিয়েছিস রে বাবা।

আসলে এগুলো করার কোন ইচ্ছেই ছিল না বরং তোর কথা ভেবে ঊল্টো কস্টই পেয়েছি কিন্তু তোর বাবা তোকে একটু বাজিয়ে দেখতে বলল তাই একটু দেখছিলাম আমরা। আমার চোখ দুটো ভিজে গেলে অতীতের লজ্জায় আর ভবিষ্যতের অক্ষমতা ভেবে। মাকে যেয়ে জড়িয়ে ধরলাম, মা কেঁদে দিল। কান্না থামিয়ে মা বলে উঠল – বাবা তুই তোর বউকেও একটু জড়িয়ে ধর নাহলে ঐ মেয়ে আবার কান্না শুরে করে দিবে.. বাবা মা আমি হাসতে শুরু করলাম, বউ আমার এবার ঠোট ফুলিয়ে কান্না শুরু করল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত