বসন্ত ডাকে আয়

বসন্ত ডাকে আয়

বক্ষ বন্ধনী হীনতায় ঠিকরে পড়া যৌবনের জোয়ার বার বার ফুলে ফেঁপে উঁকি দিচ্ছিলো মেয়েটার জামার গলার উপর দিয়ে।রোজ যে ওসব দেখে, সে রোজই একবার নেশাগ্রস্থতায় তা দেখে নেয়।তাকিয়ে থেকে হেঁটে চলে যায় আপন গন্তব্যে।দেখার চোখগুলোর মধ্যেও থাকে ভিন্নতা।কোনটা কুঞ্চিত আবার কোনটা টাঁটানো।

অফিস থেকে রোজ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে বাস থেকে নেমে রিক্সা স্ট্যান্ডে কলিম চাচার চায়ের দোকানের বেঞ্চীতে বসে পা দুলানো মেয়েটার দিকে টাঁটানো দৃষ্টি নিয়ে রোজই একবার তাকায় রাকিব সাহেব।কিছুক্ষন তাকিয়েই রিক্সায় উঠে পড়ে।ততক্ষনে চায়ের দোকানে জমে উঠে সান্ধ্যকালীন চা উৎসব।কত শত মানুষ সে চায়ের স্বাদ নেবার পাশাপাশি উপচে পড়া যৌবনে দৃষ্টি রেখে ঢেকুর তোলে পরম তৃপ্তি নিয়ে।পা দুটো তবু দুলেই চলে।কারও দিকে লক্ষ্য করার জন্য যে চেতনা প্রয়োজন তা সে হারিয়েছে জন্মের সময়েই।তাই এ বয়সে এসেও সে জানে না কে তার বাবা,কে তার মা।কেমন করে চুলে বিনুনী গাঁথতে হয়,কেমন করে কপালে টিপ কিংবা চোখে কাঁজল আঁকতে হয় আর কেমন করেই বা নিজের অবাধ্য ঋতুস্রাব সামলাতে হয়।সে শুধু জানে পেটে ব্যাথা হবার নামই ক্ষুধা লাগা।তাই তাকে খাবার যোগাড় করতে হবে পেটের ব্যাথা নিবারন করতে।

বেশীর ভাগ সময় কলিম চাচার দেয়া দুই পিস শুকনো রুটি আর এক কাপ চা ই হয় তার সারাদিনের খাবারের তালিকা।পাগলী মেয়ে, কি কাজ করবে? কে বা তার পেট চালাবে? অসুখ বিসুখে পুরানো জড়া জীর্ন একটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে পড়ে থাকে চায়ের দোকানের পাশেই যাত্রী ছাউনির বেঞ্চের নিচটায়।এটাই তার জীবন।তার জিভ জানে না পোলাও, মাংস কিংবা দামী খাবারের স্বাদ কেমন হয়। ভরা যৌবনের এই তরুনীকে সৃষ্টিকর্তাও যেন স্বয়ং ক্ষমা করেননি অবয়ব এর ঋতু বৈচিত্রে।তার শরীরেও তাই বসন্ত ডেকে যায়। সময়ের কাটা ঘুরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।পাগলী যার ভাষাই বোঝে না।

রাকিব সাহেবের স্ত্রী থাকেন দেশের বাড়িতে।আজ অফিস থেকে ফিরবার পথেও যথারীতি কলিম চাচার চায়ের দোকানে দৃষ্টি রাখতেই তিনি দেখলেন আজও পাগলীটা মাটির দিকে চেয়ে অবলীলায় পা দুলাচ্ছে।তার কম্পিত যৌবন আজ রাকিব সাহেবের পুরো মাথাটাই যেন এলোমেলো করে দিলো।রাকিব সাহেব কি জানে, পাগলীটার এতে কোন মাথা ব্যাথাই নেই? তিনি পাগলীকে ডেকে কাছে নিয়ে বললেন?

– কিরে পাগলী,ভালো আছিস?

– হ।তয় খিদা লাগছে।

– আমি তোকে খেতে দেবো।যাবি আমার সাথে?পেট ভরে খেতে দেবো।একদম ধোঁয়া ওড়া গরম ভাত।খুব যত্ন করবো।

– যামু তো।

রাকিব সাহেব পাগলীকে নিয়ে চুপচাপ নিজের ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে চলে এলেন।ওয়াশ রুম দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ভেতরে রাখা এটা সাবান,ওটা শ্যাম্পু।খুব ভালো করে পরিস্কারভাবে গোসল করে নিতে হবে।তাহলেই তাকে খেতে দেয়া হবে।পাগলী ওয়াশ রুমের লাল বালতি ভর্তি পানি আর সুগন্ধীযুক্ত সাবানটাকে চিনলেও শ্যাম্পু দিলে কি হয়, কি করে ওটা লাগাতে হয় তার কিছুই বুঝতে পারলো না।গোসল শেষে খুব করে পেট ভরে গরম গরম মাংস তরকারী দিয়ে পাগলীকে ভাত খেতে দিলো রাকিব সাহেব।পাগলী পাগলের মতোই গোগ্রাসে তার ক্ষুধার্থ পৃথিবীর হাহাকার মিটিয়ে সুখের হাসি হাসলো।কেটে গেলো একটা রাত।

সকালে পাগলীকে রিক্সা স্ট্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে অফিসে চলে যায় রাকিব সাহেব। এমন করে প্রায় রোজই তিনি ফিরবার পথে পাগলীকে চুপচাপ নিজের ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে নিয়ে ফেরেন।যথারীতি গোসল করান,পেট ভরে খেতেও দেন।দিন যেতে যেতে রাকিব সাহেবেরও তৃষ্ণা মিটে যায়।রোজকার মতো পাগলী সন্ধ্যা হলেই রাকিব সাহেবের ফেরার জন্য পথ চেয়ে থাকে। আজ আর রাকিব সাহেবের দৃষ্টি আঁটকালো না পাগলীর দিকে।বাস থেকে নেমে তিনি নিজের মতো হেঁটে যেতে  থাকলেন রিক্সার খোঁজে।হঠাৎ পা দুলানো বন্ধ করে পাগলী চেঁচিয়ে উঠলো-

– ও সাহেব, ও সাহেব।আইজ যে আমারে ফালাইয়াই যাইতাছোছ?

– (মুখে কোন কথা না বলে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকায় রাকিব সাহেব।)

– ও সাহেব, আমারে নিবি না? ওই!!! কই যাছ তুই? নিবি না আমারে?

– ( এবার একেবারেই না চেনার ভান করে রিক্সায় উঠে পরে রাকিব সাহেব।) রিক্সা চলতে থাকে। পাগলী অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে রিক্সার চলে যাবার পেছন ধরে।কলিম চাচাও অবাক হয়ে প্রশ্ন করে-

– ওই!! কি কস তুই? তরে সাহেবে নিবো ক্যান? পাগল যে পাগলই।তর কি আর আক্কল আছে!

– ক্যান নিব না? তুই জানোছ, সাহেব আমারে রোজ লগে কইরা লইয়া যায়?গন্ধ অলা সাবান দিয়া গোসল করায়, প্যাট ভইরা খাইতে দেয়,সারা রাইত কত্ত আদর করে আর বুকে লইয়া শুইয়া থাকে।রোজই তো লইয়া যায়।আইজকা নিবো না ক্যান? আমার তো খুব খিদা লাগছে।আমি সাহেবের লগে যামু!!

রাকিব সাহেব পাগলীকে না চেনার ভান করলেও কলিম চাচার রাকিব সাহেবকে চিনতে মোটেই বাকি রইলো না।পাগলী কোনদিনই জানবে না রাকিব সাহেবরা বক্ষ বন্ধনী হীনতাকে কতো ভালোবাসে নিজেদের জিভ দিয়ে, সমস্ত মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে।কলিম চাচা পাগলীর হাতে দুটো শুকনো রুটি আর এক কাপ চা ধরিয়ে দিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে।এরপর রোজকার নিয়মেই সান্ধ্যকালীন চায়ের উৎসবের আয়োজন করে আর বিড়বিড় করতে থাকে।পাগলী পরম তৃপ্তিতে চায়ে চুমুক দিয়ে যথারীতি বেঞ্চে বসে মাটির দিকে চেয়ে দুই পা দুলাতে থাকে।কে জানে পাগলী নামক মানুষের মধ্যেও মানুষ বাস করছে কি না!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত