এক চিল্টে হাঁসি

এক চিল্টে হাঁসি

-এই নিয়ে এক শার্ট পরে কয়দিন আসছো আমার সাথে দেখা করতে?কারণ কি?

-আমার অন্য কোন শার্ট নেই আর।

– ফাজলামি করো আমার সাথে? তুমি যে সুন্দর সুন্দর টি শার্ট পরে পিক দাও ফেসবুকে; তোমার বান্ধবীরা লাইকে দেয় সেগুলো আসে কোথা থেকে?

-আমার রুমমেটের।

-অসহ্য। আধঘণ্টা ধরে বসে আছি। দেরি করে আসলা কেন?

-ত্রিশ টাকা রিকশা ভাড়া বাচিয়ে হেটে আসলাম।

-কেন?

-ত্রিশ টাকা দিয়ে রাতের মিল খাবো।

-দুপুরে খাবা কি?

-তুমি খাওয়াবা।

-উফ! গত সাত দিন ধরে ফোন দাও না আমাকে। একটা খোঁজ নাও না। কারন কি?

-মোবাইলে ব্যালেন্স নেই।

-তা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াও কেন?

-তুমি ব্যালেন্স পাঠিয়ে দিবে তাই।

-সবই যখন আমি করব তুমি করবা কি?

-তোমার একটা গতি করব।

-ফাজিল একটা। আমার গতি করতে হবে না।

-আচ্ছা।

-কি আচ্ছা? কি আচ্ছা? সব সময় ফাজলামো করো কেন? হু?

-এমনি।

-তোমাকে বলছিলাম না যে একটা সিভি রেডি করতে?

-কিসের?

-বিয়ের জন্য যে পাঠাতে হয় সেটা। আমার জন্য কতগুলো জমা পড়ছে জানো? তুমি পাঠালে সেখান থেকে শুধু তোমারটা সিলেক্ট করব, ঝামেলা শেষ।

-আমার সময় নেই এত। ওসব করতে পারব না।

-কেন? কি কর তুমি সারাদিন?

-কছিম মামার সাথে লুডু খেলি।

-কছিম মামা কে?

-আমাদের বাসার সামনে যে রিকশার গ্যারেজ, ওটা দেখাশোনা করেন।

-মাফ চাই বাপ! সিরিয়াস হও একটু।

-আচ্ছা! সিরিয়াস এবার। বলো।

-সারাদিন অনলানে কি করো তুমি? আমাকে তো একবারও নক দাও না। কার সাথে কি করছ ইদানীং?

-অই তো নাবিলাকে পটাই।

-নাবিলা কে?

-আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে।

-কেন পটাও?

-ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ডের জন্য।

-অই! তুমি মানুষ হবা না?

-আমি কি এখন তবে?

-জানি না। আমার বিয়ের কথা হচ্ছে তুমি জানো?

-ভাল তো। কতদিন দাওয়াত খাই না।

-মানে কি?

-তোমার বিয়ের দাওয়াত খাব।

-তুমি কি এভোয়েড করতে চাচ্ছ আমাকে?

-হু।

-কারণ কি?

-নাবিলা রাজি হয়েছে।

-তুমি কি বলছ এসব?

-সত্যি বলছি।

-আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি কি বলছ? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

-নাবিলার সাথে দুদিন হলো আমার রিলেশন।

-কি!

-হু।

রেস্টুরেন্টে একগাদা লোকের মধ্যে রূপা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো। আমি ভেবেছিলাম হাতের কাছে যা থাকবে তাই ছুড়ে মারবে আমাকে। যাকগে, আমার কপাল ভালো।

কিন্তু রূপা এমনভাবে কাঁদছে!

সব লোক তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি ভয়ে ভয়ে রূপার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললাম খোলো এটা। ভেবেছিলাম ও ছুড়ে ফেলে দিবে।
না! লক্ষ্ণী মেয়ে ছুড়ে ফেলেনি।
-কি এটা?
– খুলেই দেখো।
-খুলব না। তুই যা আমার সামনে থেকে। বদমাশ।
-আহা! খুলেই দেখো না?
-খুলব না। দূর হ আমার সামনে থেকে।

আমি ভাবতেও পারিনি রূপা এতটা রিয়্যাক্ট করবে।সব লোক তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, তামাশা দেখছে।
অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলাম। ধ্যাত!

-রূপা খোলো তো।
-কি?( ফিকুরে ফিকুরে কান্নারত অবস্থায়)
-প্যাকেট

রূপা খুলছে অবশেষে।

-এ তো শাড়ি!

-হু, তোমার জন্য।

-মানে কি?

-কি যেন কথা ছিল?

-কথা ছিল তোমার চাকুরীটা হলে আমাকে একটা লাল শাড়ি কিনে দিবে।

-হ্যাঁ, সেটাই তো দিলাম।

-তুমি!! ফাজিল। তুমি সব সময় আমার সাথে এমন করো কেন?

রূপার চোখেমুখে এবার আনন্দের ঝিলিক। সত্যিই এ যেন আষাঢ়ের আকাশ! এই বৃষ্টি। আবার এই রোদ!
বুঝা যায় না কিছু। আমি রূপাকে বললাম, রূপা উইল ইউ ম্যারি মি?

রূপা ভীষণ লজ্জা মেয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। কমদামি রেস্টুরেন্ট হলেও যারা খেতে এসেছিলো তাদের মধ্যে কে যেন হাততালি দিলো। বাদবাকিও তাল মেলালো পরক্ষণেই। সত্যিই দিন দিন আমরা কালচারড হচ্ছি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত